মইনুলের জামিন শুনানিতে আদালতে হইচই

আদালত প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০১৮, ১৮:১৩ | প্রকাশিত : ২৩ অক্টোবর ২০১৮, ১৮:০৫

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা মইনুল হোসেনের জামিন শুনানিতে আদালতে আইনজীবীদের হইচই হয়েছে। এ কারণে শুনানি বেশ কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে।

মইনুলের জামিন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ জারির পর বিএনপিদলীয় আইনজীবী ‘সেম সেম (লজ্জা, লজ্জা) বলে চিৎকার করেন। পরে দুই পক্ষের আইনজীবীরা আদালতে সামনে গ্রেপ্তারের পক্ষে বিপক্ষে স্লোগান দেয়।

গত ১৬ অক্টোবর নারী সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে টেলিভিশন লাইভে একে কটূক্তির মামলায় সোমবার গ্রেপ্তার হন মইনুল হোসেন।

২১ অক্টোবর মাসুদা এবং জামালপুরে করা এক মামলায় হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নেন মইনুল। এরপর আরও বেশ কিছু মামলা হয়।

সোমবার দুপুরে রংপুর নগরীর মুলাটোল এলাকার মিলি মায়া বেগম রংপুরের মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে মইনুলের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এরপর বিচারক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। আর রাতেই গ্রেপ্তার হন মইনুল।

রাতে ঐক্যফ্রন্ট নেতাকে রাখা হয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা কার্যালয়ে। আর মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকার পঞ্চম অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. কায়সারুল ইসলামের আদালতে নেয়া হয় মইনুলকে।

বেলা একটায় দিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক এ সভাপতিকে সিএমএম আদালতের ২৮ নম্বর এজলাসে অনা হয়। বেলা সোয়া একটার দিকে বিচারক এজলাসে ওঠার পর শুনানি শুরু হয়।

এ সময় আদালতকক্ষে প্রবেশ করতে না দেওয়ায় অভিযোগ তুলে আইনজীবীদের হইচইয়ে পাঁচ মিনিট শুনানি বন্ধ থাকে।

পরে বিচারক বলেন, ‘ওনার (মইনুল হোসেন) সিকিউরিটির জন্য সবাইকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। আপনাদের সিনিয়র আইনজীবীরাতো ভেতরে আছেন।’

এরপর আদালতের পরিবেশ শান্ত হলে আবার শুনানি শুরু করেন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘জামিনযোগ্য ধারা, বয়স্ক মানুষ, অসুস্থ বিবেচনায় নিয়ে আসামিকে জামিন দেবেন।’

শুরুতেই ঐক্যফ্রন্ট নেতার আইনজীবীরা এই মামলা চলতে পারে কি না, এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, ‘কী মামলায় আনা হয়েছে এ সম্পর্কে আমাদের কোন ধারণা নেই।

তখন বিচারক নথি দেখে বলেন, ‘অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, রংপুরের সিআর ৭৯৭/২০১৮ নম্বর মামলার ওয়ারেন্ট মূলে তাকে (মইনুল) ওয়ারী থানা পুলিশ আদালতে হাজির করেছেন। ধারা উল্লেখ নেই।’

আরেক আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, ‘যদি ধারা উল্লেখ না থাকে তবে কীভাবে আপনি আদেশ দেবেন? এ বিষয়ে আপনার (বিচারক) ইনকোয়ারি করা প্রয়োজন।’

এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নজিব উল্ল্যাহ হিরু বলেন, ‘যে কোর্ট থেকে ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হয়েছে এটা তার ব্যাপার। তবে আমরা ধারণা করতে পারি যে, সারা দেশে যেসব মামলা হচ্ছে এটাও সে ধরনের মামলা অথবা ভিন্ন কিছু হতেও পারে।’

বিচারক বলেন, ‘কোন ধরনের মামলা, আপনারা নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারছেন। তবে এখানে ধারার উল্লেখ নেই।’

সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, ‘আমরা রংপুরের একটি মামলার কপি পেয়েছি। যেখানে মামলার বাদী মিলি মায়া বেগম। মামলার ধারা-দ-বিধির ৫০০/৫০৬/৫০৯।’

বিচারক বলেন, ‘তাহলে তো আপনারা মামলার কপিই পেয়েছেন। শুনানি শুরু করেন।’

সানাউল্লাহ বলেন, ‘বাদী মিলি মায়া বেগম তার ঠিকানা রংপুর। ঘটনা ঢাকায়। আসামির ঠিকানা ঢাকায়। ভিটকিম নিজে মামলা করেছেন তাই রংপুরে ওই বাদিনীর মামলা করার এখতিয়ারই নেই।’

‘মইনুল হোসেন সুপ্রিমকোর্ট বারের সাবেক সভাপতি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবং তার বড় পরিচয় তিনি একজন আইনজীবী ও সাংবাদিক। জামিনযোগ্য ধারার মামলা।’

মাসুদ আহমেদ তালুদার বলেন, ‘জামিনযোগ্য ধারার মামলায় জামিন পাওয়া একজন আসামির অধিকার উচ্চ আদালত বলে দিয়েছেন। এখনে ভিন্নতর হওয়ার কোন সুযোগ নেই।’

ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা খান বলেন, ‘ওই ঘটনায় যিনি সংক্ষুব্ধ তিনি ঢাকার আদালতে মামলা করেছেন। তারপর অন্য কোন ব্যাক্তির মামলা করার সুযোগ নেই।’

আইনজীবী মোসলেহ উদ্দিন জসিম বলেন, ‘ফৌজদারী কার্যবিধির ৮৬ ধারায় বলা আছে, জামিনযোগ্য ধারার মামলা হলে পুলিশই আসামিকে মুচলেকায় ছেড়ে দিতে পারেন। আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাকে জামিন দেবেন এটাই বিধান।’

সবশেষে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘আমরা যখন একটার পর একটা মামলায় তার (মইনুল হোসেন) জামিন নিচ্ছি। তখন তিন ঘণ্টার মধ্যে মামলা করে ওয়ারেন্ট এনে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এটা উদ্দেশ্যমূলক তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আবার ওয়ারেন্টে ধারাও উল্লেখ করা হয়নি। এটাও উদ্দেশ্যমূলক। যিনি ভিকটিম তার করা মামলায় তিনি জামিন পেয়েছেন। এরপর আরও একটা মামলায় জামিন পেয়েছেন।’

আসামি পক্ষের বক্তব্যের পর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবদুল্লাহ আবু বলেন, ‘ওয়ারেন্টে ধারা উল্লেখ নেই। তবে ধারণা করছি ওই ঘটনা থেকেই মামলাটি হয়েছে। জামিনযোগ্য হলে জামিন দিতে হবে এমনটি ঠিক নয়। রংপুর আদালতের মামলা। আমরা জামিনের বিষয়টি তাদের উপরই ছেড়ে দেই।’

এরপর নজিবউল্ল্যাহ হিরু বলেন, ‘সম্প্রতি জামিনযোগ্য ধারার অনেক মামলায়ই বিজ্ঞ আদালত জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেছেন। যেমন সড়ক দুর্ঘটনার মামলা। জামিনযোগ্য হলেও পরিবেশ পরিস্থিতিও আদালতকে দেখতে হয়। তিনি (মইনুল হোসেন) যে কথা বলেছেন, তাকে দেশে একটি সেন্টিমেন্ট তৈরি হয়েছে।’

‘যাকে বলেছেন, তিনি একজন খ্যাতনামা সাংবাদিক। আন্তর্জাতিকভাবে তার পরিচিতি আছে। আর আসামির বক্তব্য শুধু তকেই আঘাত করেনি, পুরো নারী জাতিতে আঘাত করেছেন। তাই জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আবেদন করছি।’

শুনানি শেষে বিচারক জামিনের আবেদন নাকচ করে মইনুল হোসেনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়ে দ্রুত এজলাস ছেড়ে যান।

ঢাকাটাইমস/২৩অক্টোবর/আরজেড/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

আদালত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

আদালত এর সর্বশেষ

শপথ নিলেন আপিল বিভাগের নতুন তিন বিচারপতি

আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি

কক্সবাজারে কতজন রোহিঙ্গা ভোটার, তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট

সাউথ এশিয়ান ল' ইয়ার্স ফোরাম ন্যাশনাল ও ইন্টারন্যাশনাল চ্যাপ্টারের দায়িত্ব পুনর্বণ্টন

আদেশ প্রতিপালন না হওয়ায় চট্টগ্রামের ডিসি এসপিসহ চার জনকে হাইকোর্টে তলব

১১ মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগের শুনানি ২৯ জুলাই

২৮ দিন পর খুলল সুপ্রিম কোর্ট

ব্যবসায়ী নাসিরের মামলা: পরীমনিকে আদালতে হাজির হতে সমন জারি

বোট ক্লাব কাণ্ড: পরীমনির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন

সেই রাতে ৮৭ হাজার টাকার মদ খেয়েছিলেন পরীমনি, পার্সেল না দেওয়ায় তাণ্ডব

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :