শেষ হলো জীবনানন্দ কবিতামেলা
রাজশাহীতে জীবনানন্দ কবিতামেলার দিনের আয়োজন ছিল কবিতাভ্রমণ। শনিবার সকালে নগরীর নওদাপাড়ার জিএম গার্ডেনে আমন্ত্রিত কবিরা কবিতাভ্রমণে যান। সেখান থেকে ফিরে মূলমঞ্চে কবিকুঞ্জপদক ও ছোটকাগজ সম্মাননা প্রদানসহ অন্যান্য আয়োজন চলে।
কবি ও লেখকদের সংগঠন-‘কবিকুঞ্জ’ আয়োজিত জীবনানন্দ কবিতামেলার এটি দ্বিতীয় ও শেষ দিনের আয়োজন ছিল। দুই বাংলার কবিদের আড্ডায় শেষদিনেও জমে ওঠে কবিতামেলা।
কবিতাভ্রমণে সকাল ১০টায় ৩৪ জন কবি কবিতা পাঠ করেন। কবি আনোয়ার কামালের সভাপতিত্বে সঞ্চলনা করেন রাজা সহিদুল আসলাম। বেলা ১১টায় ‘গদ্য সাহিত্যের গতি-প্রকৃতি’ বিষয়ে আলোচনা করেন ভারতের আয়েশা খাতুন ও পাভেল চৌধুরী। ‘বাংলা গীতিকবিতা’ বিষয়ে আলোচনা করেন শওকত মাহী। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় পুনরায় শাহ্ মখদুম কলেজ প্রাঙ্গণে এসে সমাপনী অধিবেশন শুরু হয়। এতে দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করে রাজশাহী আবৃত্তি পরিষদ।
অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্বে কবিকুঞ্জ পদক ও সম্মাননা প্রদান করা হয়। কবিতায় বিশেষ অবদানের জন্য এবার কবিকুঞ্জপদক প্রদান করা হয় কবি মাহবুবুর রহমান বাদশাকে। ছোট কাগজ সম্মাননা প্রদান করা হয় ছোট কাগজ ‘শব্দ’ এর সম্পাদক সরোজ দেবকে।
পদক পাওয়ার পর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে কবি মাহবুবুর রহমান বাদশা বলেন, ১৯৬৬ সালে আমার জন্ম। প্রায় চার দশক ধরে কবিতা লিখছি। আমার জীবনে অনেক বিকেল, অনেক সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে কিন্তু আজকের এই সন্ধ্যা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। আজ অমার কবিতার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পাওয়ায় কবিকুঞ্জের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।এই পদক দেওয়ার মাধ্যমে আপনারা আমার ওপর গুরুদায়িত্ব অর্পণ করলেন। এখন কবিতা, সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেল।
ছোটকাগজ সম্মাননা পেয়ে কবি সরোজ দেব বলেন, ৫৬ বছর ধরে ‘লিটল ম্যাগ’ আন্দোলন করছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে একা মানুষ তাই কোনো পিছুটান নেই। দীর্ঘ সময় ধরে উত্তরবঙ্গে মঙ্গা ছিল। এখন কোনো মঙ্গা নেই। অভাবও নেই। আপনারা আমাকে এই ম্যাগাজিনের জন্য লেখা দিয়ে সহযোগিতা করবেন। টাকা দিয়ে নয়।
তিনি বলেন, ছোটবেলায় একটি সুন্দর স্বদেশের স্বপ্ন দেখতাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়, তখন ভাবতাম যে কার জন্য, কিসের জন্য কবিতা লিখি। এখন বুঝতে পারি, মা-মাটি ভাষা ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি দায় থেকে লিখি। সরোজ দেব বলেন, আমরা অনেকেই এখনো একাত্তরের হানাদারদের নাম স্পষ্ট করে উচ্চারণ করতে ভয় পাই। এই জায়গায় আমাদের কবিদের নাড়া দিতে হবে। এ জন্য কবি ও লেখকদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে হবে। আপনাদেরও সঙ্গে থাকতে হবে।
এ পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক সনৎকুমার সাহা, ভারতের আইআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অব. রেজিস্ট্রার কবি প্রাণজি. বসাক, তসিকুল ইসলাম রাজা, কবি জুলফিকার মতিন।
অনুষ্ঠানে পদকপ্রাপ্ত কবির জীবনী পাঠ করেন শামীমা ডেইজি। সম্মাননা হিসেবে কবিতা পাঠ করেন কবি শামীম হোসেন। অতিথিদের উত্তরীয় প্রদান করেন কবিকুঞ্জের সভাপতি রুহুল আমিন প্রামাণিক। এরপর সম্মাননাপ্রাপ্ত সম্পাদকের জীবনী পাঠ ও উত্তরীয় প্রদান করা হয়। এ পর্যায়ে কবি ও সম্পাদকরা তাদের অনুভূতি প্রকাশ করেন।
কবিতা আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার পুরস্কার করা হয়। এরপর পুরস্কারপ্রাপ্ত তাদের কবিতা পাঠ করা হবে। সন্ধ্যা সাতটায় ৩৪ জন কবি কবিতাপাঠ করেন। সবশেষে রাতে কবিকুঞ্জের সভাপতি রুহুল আমিন প্রামাণিক কবিতামেলার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
ঢাকাটাইমস/২৭অক্টোবর/আরআর/ইএস