আশাবাদী অ্যাটর্নি জেনারেল
চ্যারিটেবলে রায়ের দিনেই আপিলেরও আদেশ
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিচার চলবে বলে দেওয়া বিচারিক আদালত ও হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে করা আপিলের আবেদন খারিজ হলে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ।
পুরান ঢাকার পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী বিশেষ জজ-৫ ড. আখতারুজ্জামানের আদালতে সোমবার এ রায় ঘোষণার দিন ধার্য রয়েছে।
খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিচার চলবে বলে বিশেষ জজ আদালত-৫ যে আদেশ দেন, তার বিরুদ্ধে খালেদার করা রিভিশন আবেদন গত ১৪ অক্টোবর খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। পরে হাইকোর্টের এ আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল আবেদন জানান খালেদার আইনজীবীরা। আবেদনটির শুনানি শেষ হয়েছে রোববার। সোমবার এ বিষয়ে আদেশের দিন ধার্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চ।
অন্য দুর্নীতি মামলা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের টাকা আত্মসাতের দায়ে গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন একই বিচারিক আদালত। সেদিন থেকেই পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন তিনি। পরে অসুস্থতার কারণে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের প্রিজন সেলে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। খালেদার ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অন্য আসামিদের দশ বছরের কারাদণ্ড জরিমানার প্রেক্ষিতে তারও সাজা বাড়ানোর আরজিতে রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।আর সাজার বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে আপিল করেছেন খালেদাসহ কারাগারে থাকা আসামিরা। সবগুলো আপিল আবেদনের শুনানি একসঙ্গে শেষ করেছেন রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের আইনজীবীরা, যেখানে তারা খালেদা জিয়ার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড চেয়েছেন।
দুই দুর্নীতি মামলারই প্রধান আসামি বিএনপি প্রধান।
এদিকে চ্যারিটেবল দুর্নীতি মামলার রায়ের ধার্য দিনেই সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ দেওয়া হবে, তাই বিচারিক আদালত রায় দিতে পারবেন কিনা- বিষয়টি নিয়ে রোববার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
আপিল বিভাগের আদেশের দিন ধার্যের পর মাহবুবে আলম বলেন, ‘জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার শুনানির সময় খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে প্রায় ৪০ বার সময় নেয়া হয়েছে। যখন আসামিপক্ষের বক্তব্য শোনার দিন ধার্য করা হলো, তখনও তিনি প্রায় ৩২ বার সময় নিয়েছেন। এরপর বেশ কিছুদিন কারাগারে থাকাবস্থায় আদালতে যেতে পারেননি। বলা হলো, তিনি অসুস্থ। তারপরে একটি তারিখে তিনি বলেছেন, আদালতে যাবেন না। এই পরিস্থিতিতে আদালত তার অনুপস্থিতিতেই এই মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের দিন ধার্য করেন। কিন্তু সেই সময়ও খালেদা জিয়ার ১২৬ জন আইনজীবীর কেউই আদালতে যাননি। এ অবস্থায় মামলাটিতে সোমবার রায় ঘোষণার দিন ধার্য রয়েছে।’
‘ইতিমধ্যে তারা খালেদা জিয়ার পক্ষে আপিল বিভাগে আবেদন করেন এবং আজকের শুনানির পরে আগামীকাল আদেশের দিন রাখা হয়েছে। খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিচারিক আদালত মামলার চলার যে আদেশ দিয়েছিলেন, তার বিরুদ্ধে তারা হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন করেছিলেন। কিন্তু হাইকোর্টেও রায় খালেদার বিপক্ষে গেছে। তার বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে এ আপিলের শুনানি হলো। যদি এ আপিলের বিষয়ে কোনোরকম লিভ (নিয়মিত আপিল করার অনুমতি) দেওয়া হয় তাহলে বিচারিক আদালতের রায় দেওয়া অনিশ্চিত হয়ে যাবে। আর যদি খালেদা জিয়ার আবেদনটি আপিল বিভাগে খারিজ হয়ে যায়, তবে রায় দেওয়া সম্ভব হবে।’
মাহবুবে আলম বলেন, ‘চ্যারিটেবল মামলায় তিনি বারবার সময় নিয়েছেন। এক পর্যায়ে তিনি আদালতে আসবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। এ অবস্থায় আদালত তো বসে থাকতে পারেন না। আদালতকে তো নিশ্চিত বিচার কার্যক্রমটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সেই হিসেবে আমি আশাবাদী, বিচারিক আদালত মামলাটির বিচার শেষ করতে পারবেন।’
আসামিকে হাসপাতালে রেখে রায় দেওয়া হলে সেটি হবে নজিরবিহীন। খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের এমন বক্তব্যের বিষয়ে মাহবুবে আলম বলেন, সাক্ষ্যগ্রহণ-জেরার সবই হয়েছে আসামির সামনে। তিনি নিজে বক্তব্য দিয়েছেন। এখানে আসামি যখন বলেন, তিনি আর আদালতে যাবেন না, তখন আর আদালতের কিছু করার থাকে না। তাছাড়াও তার তো ১২৬ জন আইনজীবী আছেন।’
খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে চ্যারিটেবল মামলার রায় ঘোষণা করা হবে কিনা জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘তিনি যদি না যেতে চান তাহলে তো কোনো পথ থাকে না। তাছাড়া আগেই তো বলা হয়েছে যে, তার অনুপস্থিতিতে বিচার হবে। বিচারের অর্থ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন, বিচারের অর্থ রায় ঘোষণাও।’
গত ১৬ অক্টোবর দুপুরে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আসামিপক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতে না চাওয়ায় ঢাকার ৫ নাম্বর বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামানের আদালত ২৯ অক্টোবর রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন।
চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় মোট আসামি চারজন। খালেদা জিয়া ছাড়া অভিযুক্ত অন্য তিন আসামি হলেন- খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
২০১১ সালের ৮ আগস্ট খালেদা জিয়াসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলাটি দায়ের করে দুদক। এ মামলায় ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক।
মামলাটিতে খালেদা জিয়াসহ অপর আসামিদের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ আদালতের তৎকালীন বিচারক বাসুদেব রায় অভিযোগ (চার্জ) গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু করেন।
(ঢাকাটাইমস/২৮অক্টোবর/এমএবি/এআর)