গণপরিবহন খাতে বিশেষ নজর দিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী

শেখ আদনান ফাহাদ
 | প্রকাশিত : ২৮ অক্টোবর ২০১৮, ১৭:২১

রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ যখন প্রায় সবকটি ক্ষেত্রে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন সড়ক পরিবহন খাতে নৈরাজ্য আর কত দিন চলতে পারে?

সড়ক পরিবহন খাতে জনদুর্ভোগ স্বাভাবিক বিষয় হয়ে উঠেছে। শ্রমিকরা চাইলেই সব পরিবহন বন্ধ করে দিতে পারে, গাড়ি চালাতে ইচ্ছুক চালকদের মুখে, যাত্রীদের মুখে, কাপড়ে আলকাতরা মেখে দিতে পারে! এ নৈরাজ্য থেকে পরিত্রাণের উপায় কী?

শুধু শ্রমিকদের কেন দোষ দিচ্ছি আমরা? শ্রমিকের কষ্টে, ঘামে ফুলেফেঁপে উঠা মালিকরাও কি এই নৈরাজ্যের অংশ নয়? শ্রমিকদের মানুষই মনে করে না এই মালিক গোষ্ঠী। শ্রমিকের কোন নির্দিষ্ট বেতন নেই, উৎসব ভাতা নেই, চাকরির কোন নিরাপত্তা নেই, প্রশিক্ষণ নেই, অবসর নেই। এই প্রশিক্ষণবিহীন, বেতন-ভাতাবিহীন শ্রমিকরা যখন নৈরাজ্য করে তখন এর দায় অবশ্যই পুরো ব্যবস্থাকেই নিতে হবে।

নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী পরিবহন শ্রমিকদের পেছনে কি কোন বড় শক্তির হাত আছে? থেকে থাকলে কে বা কারা সেই শক্তি? সরকার জঙ্গি-সন্ত্রাসী দমনে ব্যাপক সাফল্য প্রদর্শন করলেও চেনাজানা শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না কেন? কয়েক লাখ শ্রমিকের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে ঢাকা ও সারা দেশের কোটি কোটি যাত্রী। এভাবে পুরো জাতিকে জিম্মি করে রাখা শ্রমিক ও শ্রমিকনেতার কাছে কি রাষ্ট্র নিজেও অসহায়?

বেপরোয়া বাস-ট্রাকের ধাক্কায় সড়কে নারী-শিশুসহ মানুষ হত্যার ঘটনা বাংলাদেশে অহরহ ঘটছে। যাত্রী পাওয়ার আশায়, এক বাস আরেক বাসের সাথে দানবীয় পাল্লা দেয়। সিটি বাসগুলোর পাল্লাপাল্লিতে নিয়মিত ঘটছে দুর্ঘটনা।

সরকার যখন সড়ক নিরাপদ করতে আইন পাস করেছে, তখন এর প্রতিবাদে ধর্মঘট ডাকল এই শ্রমিকরা।

এমনিতেই রাজধানী ঢাকায় গণ-পরিবহন বলতে তেমন কোন ভালো ব্যবস্থা নেই। হাতে গোনা কিছু বাস, তাও আবার নিম্নমানের সেবা। সিটিং সার্ভিসগুলো নিয়মিত প্রতারণা করে নাম পেয়েছে ‘চিটিং সার্ভিস’ বলে। ইচ্ছে মত ভাড়া নেয় এরা, দেখার কেউ নেই।

দুই বাসের প্রতিযোগিতায় সতেজ তরুণের হাত হারিয়ে ফেলার স্মৃতি এখনো আমাদের মনে সজীব। রাস্তায় বাসের ধাক্কায় মায়ের কোল থেকে নবজাতক শিশু মৃত্যুর ঘটনা তো এই সেদিন ঘটল।

নারী, শিশু ও বয়স্ক যাত্রীদের জন্য রাজধানীর গণ-পরিবহন যেন এক দুঃস্বপ্ন। দরকারের চেয়ে অনেক কম বাস ঢাকায়। ছোট ছোট ৩০-৪০ আসনের বাস। বাসগুলো কোনভাবেই যাত্রী-বান্ধব নয়। আসন ছোট, দাঁড়ানোর জায়গা থাকে না। গায়ের সাথে গা লাগিয়ে, ঠেসে থেকে চলাচল করতে হয় যাত্রীদের। এমন ভিড়ের বাসে নারী যাত্রীদের নিয়মিতভাবে যৌন নিপীড়নের শিকার হতে হয়। এভাবেই চলছে ঢাকার গণ-পরিবহন।

অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এগিয়ে চলেছে উড়ন্ত সেতু ও মেট্রো রেল প্রকল্পের কাজ। ঢাকা শহরে প্রচুর ফ্লাইওভার, ওভারপাস নির্মিত হচ্ছে। মানুষ মেট্রো রেলের আশায় বসে আছে। মেট্রো রেল হয়ে গেলে মানুষের কষ্ট অনেক কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। কিন্তু শুধু কি মেট্রো রেল দিয়ে একটি মহানগরীর সমস্যা মেটানো সম্ভব? চাইলেও সম্ভব নয়।

রাস্তাগুলোতে তাহলে কি শুধু কিছু উবার, পাঠাও, লেগুনা আর নিম্নমানের বাস চলবে? শুধু মেট্রো দিয়ে সড়কের যাত্রীদের দুর্ভোগ কমানো যাবে না। ঢাকার দুই-আড়াই কোটি মানুষের চাহিদা মেট্রো দিয়ে পুরোপুরি পূরণ করা সম্ভব নয়।

মেট্রোর পাশাপাশি দরকার ভালো বাস। গত ১০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি সারা বিশ্বে প্রশংসিত হচ্ছে। কিন্তু ঢাকার গণ-পরিবহন খাতে দৃশ্যত কোন পরিবর্তন নেই। প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক গণপরিবহন খাতে পরিবর্তন আনতে সৎ ও আন্তরিক চেষ্টা শুরু করেছিলেন। চার হাজার নতুন বাস নামানোর কথা ছিল ঢাকায়। সরকার যদি নিজের নিয়ন্ত্রণ রেখে চার/পাঁচটি কোম্পানিকে উন্নতমানের ৪/৫ হাজার বাস ঢাকায় নামানোর ব্যবস্থা করে দিত তাহলে আজ এইভাবে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে রাখত পারত না শ্রমিকরা।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এই গণপরিবহন খাত নিয়ে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, দেশের অধিকাংশ মানুষ শেখ হাসিনাকে তাদের নেতা হিসেবে সমর্থন করে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা নির্মাণে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। দেশের সর্বশ্রেণির মানুষ শেখ হাসিনাকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পরিবহন খাতের শ্রমিক ও মালিকরাই কেবল সরকারকে নিয়মিতভাবে বিব্রত করে যাচ্ছে। নির্বাচনের আগে শ্রমিকদের এই নৈরাজ্য কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না।

দীর্ঘমেয়াদী সমাধান হিসেবে কয়েক হাজার বাস কিনে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঢাকার রাস্তায় ছেড়ে দিতে হবে।

লেখক: সাংবাদিক ও শিক্ষক

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :