ব্যাংক পেল পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ২৯ অক্টোবর ২০১৮, ২৩:০৮ | প্রকাশিত : ২৯ অক্টোবর ২০১৮, ২০:৫৯

ব্যাংক খাতে অস্থিরতার মধ্যেই নতুন করে আরও একটি ব্যাংকের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ‘কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ’ নামে নুতন এই ব্যাংক নিয়ে দেশে মোট ব্যাংকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৯।

আজ সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় নতুন ব্যাংকটির অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম।

রাত পৌনে নয়টার দিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সিরাজুল ইসলাম জানান, কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ-এর উদ্যোক্তা বাংলাদেশ পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্ট (বিপিডব্লিউটি)।

আজকের সভায় আরও তিনটি ব্যাংকের অনুমোদন দেয়ার গুঞ্জন ছিল। শেষ পর্যন্ত সেগুলোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রস্তাবিত ব্যাংকগুলো হলো- বেঙ্গল ব্যাংক, পিপলস ব্যাংক ও সিটিজেন ব্যাংক। তবে সেগুলোর অনুমোদনও দেয়া হবে বলে জানান নির্বাহী পরিচালক।

কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ অনুমোদনের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের চাপ ছিল না জানিয়ে নির্বাহী পরিচালক বলেন, দেশের অর্থনীতির আকার অনেক বড় হয়েছে। সেদিকে বিবেচনা করে নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। কোনো চাপের কারণে নয়।

সিরাজুল ইসলাম বলেন, কিছু সমস্যার কারণে অন্য তিনটি ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হয়নি। সমস্যাগুলো নিষ্পত্তি করার পর সেগুলোর বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা হবে। এই তিন ব্যাংকের অনুমোদন না পাওয়ার সমস্যাগুলোও তুলে ধরেন তিনি।

বেঙ্গল ব্যাংকের সমস্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাংকের তিন পরিচালকের বিরুদ্ধে কর-সংক্রান্ত মামলা রয়েছে। এ মামলা নিষ্পত্তি হলে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।’

প্রস্তাবিত পিপলস ব্যাংকের চেয়ারম্যানের কী পরিমাণ সম্পদ যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে সে বিষয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সিটিজেন ব্যাংকের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ মুখপাত্র বলেন, তাদের বেশকিছু কাগজপত্রে সমস্যা রয়েছে। এগুলো সমাধানের পর আমরা এটি চিন্তাভাবনা করব।

নতুন করে ব্যাংকের অনুমোদনের ফলে ব্যাংকিং খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালিদ।

তিনি বলেন, ব্যাংক কোম্পানি ও অন্য কোম্পানির মধ্যে বেশ পার্থক্য রয়েছে। অন্য কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারাই মূলত মালিক। কিন্তু ব্যাংকের ৯০ শতাংশ মালিক জনগণ বা গ্রাহকরা, আর মাত্র ১০ শতাংশ শেয়ারহোল্ডাররা। কিন্তু আমাদের দেশে জনগণের স্বার্থ রক্ষা করা হচ্ছে না। প্রতিনিয়ত গ্রাহকের আমানত সুরক্ষায় শঙ্কা তৈরি হচ্ছে।

খোন্দকার ইব্রাহিম বলেন, ‘মুদির দোকানের মতো ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়ার কারণে হুমকিতে পড়ছে দেশের ব্যাংকিং খাত। সর্বশেষ অনুমোদন দেয়া ৯টি ব্যাংকের বেশির ভাগই ভালো নেই। সরকারের উচিত নতুন করে ব্যাংকের অনুমোদন না দেয়া।’ নতুন তিন ব্যাংকের উদ্যোক্তা যারা

বেঙ্গল ব্যাংক চালুর উদ্যোগ নিয়েছে দেশীয় প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। আওয়ামী লীগের সাংসদ মোর্শেদ আলম এই গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং প্রস্তাবিত ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হলেন তার ছোট ভাই জসীম উদ্দিন।

প্রস্তাবিত ‘পিপলস ব্যাংক’-এর চেয়ারম্যান হলেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা এম এ কাশেম।

সিটিজেন ব্যাংকের চেয়ারম্যঅন হিসেবে রয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের মা জাহানারা হক।

গত বছর অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে চাপ আসা সত্ত্বেও নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়ার প্রস্তাব স্থগিত রেখেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘সামগ্রিকভাবে এই সেক্টরের স্বাস্থ্য ভেঙে পড়েছে। নতুন ব্যাংকগুলোর বিপর্যস্ত এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ।’

কিন্তু অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতসহ সরকারের শীর্ষপর্যায় থেকে ক্রমাগত আসতে থাকা চাপে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিরোধ আর বেশি দীর্ঘায়িত হয়নি। অর্থমন্ত্রী সর্বশেষ গত ২৫ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের তাগিদ দিয়েছেন।

ওই দিন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে দেওয়া এক চিঠিতে অর্থমন্ত্রী লেখেন, ‘সম্ভবত, বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি প্রস্তাবিত একটি ব্যাংককে লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি আপনাকে প্রস্তাবিত সবগুলো ব্যাংককে একে একে লাইসেন্স দেওয়ার অনুরোধ করছি।’

(ঢাকা টাইমস/২৯অক্টোবর/আরএ/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

অর্থনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অর্থনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :