শেখ হাসিনার কিছু প্রশ্নের জবাব দিতে পারবেন ড. কামালরা?

শেখ আদনান ফাহাদ
 | প্রকাশিত : ০১ নভেম্বর ২০১৮, ১৬:০১

খালেদা জিয়ার কি তার রাজনৈতিক জীবনে কখনো গণভবনে গিয়েছেন? না, তিনি সেখানে যাননি। খালেদা জিয়া দাওয়াত পেয়েছিলেন, কিন্তু ফিরিয়ে দেন সে নিমন্ত্রণ।

অবশ্য বিএনপি নেত্রীর স্বামী জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা থাকাকালে একবার গণভবনে গিয়েছিলেন। সাংবাদিক অজয় দাশ গুপ্তের লেখা থেকে আমরা জানতে পারি, জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীর উপপ্রধান হিসেবে একবার প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে শেরে বাংলা নগরের গণভবনে গিয়েছিলেন।

বেগম জিয়া স্বাধীনতার পর একজন গৃহবধূ হিসেবে পারিবারিক সমস্যা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কথা বলেছেন। তবে এ সাক্ষাৎ সম্ভবত ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে হয়েছে বলে নিজের লেখায় জানিয়েছেন অজয় দাশ গুপ্ত।

তবে ২০১৩ সালের ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি বিশেষ ঘটনা ঘটতে পারত। ২৫ অক্টোবর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এক জনসভায় বেগম খালেদা জিয়া 'আজ-কালের' মধ্যে সংলাপের দাবি জানান। আর শেখ হাসিনা পরদিন তাকে ফোন করে ৩৭ মিনিট কথা বলেন এবং গণভবনে বৈঠকের জন্য আমন্ত্রণ জানান। সেদিন ভালো ব্যবহার করেননি বিএনপি নেত্রী।

২০১৪ সালের ২৪ জানুয়ারি খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর শেখ হাসিনা খালেদা জিয়াকে সমবেদনা জানাতে গুলশান ছুটে গিয়েছিলেন। খালেদা জিয়া সেদিন দেখা দেননি।

বিএনপি নেত্রীর জীবনে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার অনেক অবদান থাকলেও দিন দিন দূরত্ব বেড়েছে। আদালতের রায় বলছে, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যায়ও জিয়াউর রহমানের সম্পৃক্ততার অভিযোগ করে আওয়ামী লীগ।

বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ৬ বছর বাবার কবর জিয়ারত করতে দেয়া হয়নি শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে। ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরলেও শেখ হাসিনাকে ৩২ নম্বরের বাড়িতে ঢুকতে দেয়া হয়নি। বাবার বাড়িতে ঢুকতে না পেরে রাস্তায় বসে কোরআন তেলাওয়াত করেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।

আজ তারেক রহমান বিদেশে অবস্থান করছেন, খালেদা জিয়া কারাগারে। আদালত তাদের বিচার করেছে। খালেদা জিয়া একাধিক মামলায় শাস্তি পেয়েছেন। সম্প্রতি এক মামলায় তার পাঁচ বছরের শাস্তি বেড়ে ১০ বছর হয়েছে।

এমন বাস্তবতায় বিএনপির নতুন জোটের নেতা ড. কামাল হোসেন মির্জা ফখরুল ইসলাম, কামাল হোসেন, মাহমুদুর রহমান মান্নারা যাচ্ছেন গণভবনে। নিজেরাই দাবি জানিয়েছিলেন সংলাপের। তাদের দাবিতে সাড়া দিয়ে গণভবনে দাওয়াত দিয়েছেন শেখ হাসিনা।

কামাল হোসেন, জাফরুল্লাহরা গণভবনে দাওয়াত পেয়ে নিজেদের বিরাট বিজয়ী ভাবলেও বিএনপির নেতারা অবশ্য বলতে শুরু করেছেন, খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে নাকি এই সংলাপ সফল হবে না। অন্যদিকে দেশে অরজাকতার আশায় নানা ষড়যন্ত্র করা সুশীল সমাজের একটা অংশও সংলাপ সফল হবে না বলে রব তুলেছেন।

আবার সংলাপের পর ঐক্যফ্রন্ট নেতারা নাকি শেখ হাসিনার সঙ্গে নৈশভোজে অংশ নেবেন না। এই সিদ্ধান্ত কেমন হলো? প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে দাওয়াত নিয়ে তাঁর বাসায় খাবার না খেয়ে আসবেন? খালেদা জিয়া জেলে, তাই নাকি এই সিদ্ধান্ত? তবে খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে ইনারা একদিনও রাতে খানাপিনা করেননি? খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে প্রতিদিন রাতে নিয়ম করে খেতে পারলে, গণভবনের রাতে কেন খাওয়া যাবে না?

শেখ হাসিনার সাথে তাদের ঐক্যফ্রন্ট এর নেতাদের যা কথা হবে, তার খুব কমই আমরা জানতে পারব। মিডিয়াতে বাছাই করা কিছু কথা আসবে। শেখ হাসিনা যদি সংবিধানের আলোকে নির্বাচন আয়োজনের কথা বলেন, তখন কী যুক্তি দেবেন কামাল হোসেনরা?

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় একসময় যাদের বিচারের দাবিতে রাস্তায় মিছিল করেছেন কামাল হোসেন, আজ তাদের পক্ষ নিয়ে গণভবনে গেলেন তিনি। শেখ হাসিনা যদি উনাকে এই বিষয়ে কিছু জিজ্ঞেস করেন, কী বলবেন কামাল হোসেন? সাম্প্রতিক কালেই পেট্রোল বোমা সন্ত্রাস নিয়ে যদি শেখ হাসিনা জিজ্ঞেস করেন তাহলে কী উত্তর দেবেন ইনারা।

কামাল হোসেন বঙ্গবন্ধুর খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। শেখ হাসিনার বাবা, মা, ১০ বছরের শিশু রাসেলসহ সব ভাই-ভাবির হত্যার সম্পৃক্ত বলে অভিযুক্ত জিয়াউর রহমানের দল বিএনপি। এই বিএনপির সাথে জোট বেধে গণভবনে যাওয়া কামাল হোসেনের সামনে যদি শিশু রাসেলের ছবি তোলে ধরেন শেখ হাসিনা, কী বলবেন তিনি?

হয়ত শেখ হাসিনা এগুলো কিছুই করবেন না। বাবা, মা, ভাই-ভাবিদের হত্যার প্রতিশোধ নেননি তিনি। দেশের প্রচলিত আইনে বিচার হয়েছে খুনিদের।

আজ আর শুধু বাংলাদেশের নেতা নন শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন, তাঁর মেয়ে শেখ হাসিনা সোনার বাংলা নির্মাণ করে চলেছেন। দেশের মানুষ উন্নয়নের তাড়নায় দিনরাত পরিশ্রম করে চলেছে। উন্নয়নের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা নিজেকে আজ বিশেষ মাত্রায় নিজেকে উন্নীত করেছেন। কামাল হোসেন বা মাহমুদুর রহমান মান্নারা শেখ হাসিনার সাথে যখন একটা পক্ষ হয়ে কথা বলবেন, তখন তাদের আত্মবিশ্বাস এর মাত্রা কোথায় থাকবে?

শেখ হাসিনা যদি যুক্তি দিয়ে, প্রমাণ দিয়ে সাম্প্রতিক আর পুরনো ইতিহাসের নানা ঘটনা-দুর্ঘটনা তুলে ধরেন, সেগুলো কীভাবে খণ্ডাবেন ঐক্যফ্রন্ট নেতারা?

লেখ: শিক্ষক ও সাংবাদিক

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :