নিজেদের অনৈক্যে বিচারবঞ্চিত সাংবাদিকরা!

ঢাকাটাইমস ডেস্ক
 | প্রকাশিত : ০২ নভেম্বর ২০১৮, ১৭:১৭
নিহত সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি

দেশে ২০০১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ১৫ বছরে ২০ জনের বেশি পেশাদার সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। সেসব ঘটনায় হওয়া মামলার মাত্র তিনটির এখন পর্যন্ত বিচার হয়েছে।

২০১২ সালে নিজেদের বাসায় সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন সারোয়ার রুনির হত্যার ঘটনার পর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রহস্য উদঘাটনের আশ্বাস দিয়েছিলেন সেসময়কার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন। তবে সাড়ে ছয় বছর পার হয়ে গেলেও সে বিচার এখনো পায়নি সাগর-রুনির পরিবার। নিহতদের পরিবারের সদস্যরা অনেকটা ধরেই নিয়েছেন যে এই ঘটনার বিচার তারা পাবেন না। খবর বিবিসি বাংলার।

রুনি'র ভাই এবং মামলার বাদী নওশের রোমানের মতে ছয় বছর পরেও বিচার প্রক্রিয়া শুরু না হওয়ার প্রধান কারণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আন্তরিকতা ও সদিচ্ছার অভাব।

রোমান বলেন, ‘ছয় বছর পর এখনো বিচার প্রক্রিয়া শুরুই হয়নি। আমার কাছে মনে হয় এত আলোচিত একটি ঘটনার সূত্র খুঁজে বের করা আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের জন্য খুব একটা কঠিন কাজ নয়।’

রোমান মনে করেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আন্তরিকতার অভাবই বিচারকাজে অগ্রগতি না হওয়ার মূল কারণ।

কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আন্তরিকতা বা সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবই কী এধরনের ঘটনার বিচারে প্রধান অন্তরায়?

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সমীক্ষার হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশে ২০০১ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত বাংলাদেশে অন্তত ২৩ জন পেশাদার সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। কিন্তু এই ২৩ জনের মধ্যে মাত্র তিনজনের ক্ষেত্রে মামলার চূড়ান্ত বিচার সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান এই বিষয় নিয়ে কাজ করা মানবাধিকারকর্মী তাহমিনা রহমান।

তবে তার মতে, আইনি তদন্তে বা আদালতের বিচারিক প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রিতা শুধু যে সাংবাদিকদের মামলার ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সেরকমটা নয়। বাংলাদেশে বিচার বিভাগ অনেকটা প্রথাগতভাবেই দীর্ঘসূত্রিতা বজায় রেখে কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।

‘আদালতে কার্যক্রম চলাকালে বারবারই নতুন করে তারিখ দেয়া হয়। এই তারিখ দেয়ার ক্ষেত্রে কিছু সুস্পষ্ট নিয়ম রয়েছে, যেগুলো অনেকসময়ই মানা হয় না। এটা একটা প্রচলিত প্রথার মতো চলছে।’

এছাড়া কোনো বিশেষ মামলার শুনানির সময় আদালতের বিচারক বদলি হলে বা পরিবর্তিত হলে নতুন বিচারক অনেক সময় পুরোনো মামলার কার্যক্রম চালাতে অনীহা প্রকাশ করেন; যে কারণে দীর্ঘসূত্রিতার জটে পড়ে মামলা।

তাহমিনা রহমান বলেন, ‘রাজনৈতিক সদিচ্ছার মতো একটি অদৃশ্য বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ না করে যেসব বিষয়ের পরিবর্তন সম্ভব সেগুলো নিয়ে চিন্তা করা উচিত আমাদের।’

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিচার ব্যবস্থার সুষ্ঠু প্রতিপালন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে বিদ্যমান আইনের নিয়মিত চর্চা এবং তদন্ত ও বিচারকাজে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে বিচার ব্যবস্থা আরও কার্যকরভাবে পরিচালিত হতে পারে বলে মনে করেন তাহমিনা রহমান।

সাংবাদিকদের সংগঠনগুলো কী ভূমিকা পালন করছে?

সাংবাদিক হত্যা বা নির্যাতনের ঘটনায় বিচার না হওয়ার কারণ হিসেবে সাংবাদিকদের সংগঠনগুলোর নিষ্ক্রিয়তাও দায়ী বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশের সাংবাদিকদের একটি সংগঠনের সহ-সভাপতি ইশতিয়াক রেজা।

সংগঠনগুলোর মধ্যে বিভেদ এবং সাংবাদিকদের মধ্যে রাজনৈতিক বিভাজন থাকায় সংগঠনগুলোও প্রয়োজনে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে পারছে না বলে মনে করেন রেজা।

এই সাংবাদিক নেতা বলেন, ‘আমাদের সাংবাদিক সমাজ রাজনৈতিকভাবে বিভাজিত। কে কোন পক্ষের, এনিয়ে হিসেব কষতে কষতে এবং তা নিয়ে রাজনীতি হতে হতে একটা সময় বিচার থেকে বঞ্চিত হয় ভুক্তভোগী সাংবাদিক।’

ইশতিয়াক রেজার মতে দলীয় রাজনীতির লেজুড়বৃত্তির কারণে সাংবাদিকদের সংগঠনের নেতৃত্বের একটা বড় অংশ একসময় আপসের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে চায়।

সংবাদকর্মীরা তাদের প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সাধারণত আইনি সহায়তা পান না; যেটিকে বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা হিসেবে উল্লেখ করেন ইশতিয়াক রেজা। তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকরা যেসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন, তাদের ওই অর্থে আইনগত সহায়তা দেয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। একজন কর্মীকে দীর্ঘ সময়ব্যাপী আইনি সহায়তা দেয়ার প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোটাই নেই বাংলাদেশের অধিকাংশ গণমাধ্যমের।’

সাংবাদিকদের সংগঠনের নেতাদের মতে বিচার বিভাগের কার্যপ্রণালীর সংশোধন বা সরকারের রাজনৈতিক ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশের মাধ্যমে নয়, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধ করতে এবং সহিংসতার ঘটনার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে প্রধান ভূমিকা রাখতে পারে সাংবাদিকদের নিজেদের মধ্যে ঐক্য। সূত্র: বিবিসি বাংলা

(ঢাকাটাইমস/০২নভেম্বর/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

গণমাধ্যম বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা