যুদ্ধাপরাধ: লিয়াকত-রজবের রায় পড়া শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৫ নভেম্বর ২০১৮, ১১:৩০

হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার মুড়াকরি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী ও কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলার আমিনুল ইসলাম ওরফে রজব আলীর যুদ্ধাপরাধ মামলার রায় পড়া শুরু হয়েছে।

সোমবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রায় পড়া শুরু হয়। এটি হবে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যুদ্ধাপরাধের মামলার বিচারে গঠিত ট্রাইব্যুনালের ৩৫তম রায়।

গত ১৬ আগস্ট যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে বিচারিক কার্যক্রম শেষ হলে এ মামলার রায় ঘোষণা অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন ট্রাইব্যুনাল।

২০১৬ সালের ১ নভেম্বর লিয়াকত-রজবের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এ দুজনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট সাতটি অভিযোগ আনা হয়েছে। ২০১৬ সালের ১৮ মে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। সেই থেকে তারা পলাতক রয়েছেন।

তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন অনুসারে, ২০০৩ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত লিয়াকত আলী হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। তার বিরুদ্ধে ২০১০ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মামলাটি হয়।

আসামি লিয়াকত আলী ১৯৭১ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজের ছাত্র ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি মুসলিম লীগের সদস্য হিসেবে ফান্দাউক ইউনিয়নে রাজাকার কমান্ডারের দায়িত্বে ছিলেন। অন্য আসামি রজব আলী ১৯৭১ সালে ইসলামী ছাত্রসংঘের ভৈরব হাজী হাসমত আলী কলেজ শাখার সভাপতি ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ভৈরবে পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্পে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়ে অষ্টগ্রামে আল বদর বাহিনী গঠন করে কমান্ডার হন তিনি।

দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে তার বিরুদ্ধে দালাল আইনে তিনটি মামলা হয় এবং ওইসব মামলার বিচারে তার যাবজ্জীবন সাজা হয়। ১৯৮১ সালে রজব ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ‘আমি আলবদর বলছি’ নামে বই লেখেন।

লিয়াকত-রজবের বিরুদ্ধে সাত অভিযোগ

লিয়াকত-রজবের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনের ৩ (১), ৪ (১) ও ৪ (২) ধারায় হত্যা, গণহত্যা, আটক, অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণ ও লুটপাটের সাতটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।

এক

১৯৭১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ভোর পাঁচটা থেকে বেলা পৌনে দুইটা পর্যন্ত লিয়াকত আলী, আমিনুল ইসলাম (রজব আলী) ও তাদের সঙ্গী রাজাকাররা পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে নিয়ে লাখাই থানার কৃষ্ণপুর গ্রামে হামলা চালিয়ে গণহত্যা ও লুটপাট করেন। গ্রামের নৃপেণ রায়ের বাড়িতে রাধিকা মোহন রায় ও সুনীল শর্মাসহ ১৫ জন জ্ঞাত ও ২৮ জন অজ্ঞাত হিন্দুকে গুলি করে হত্যা করেন তারা।

দুই

১৯৭১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর বেলা ২টা থেকে বেলা পৌনে ৩টা পর্যন্ত লিয়াকত আলী, আমিনুল ইসলাম (রজব আলী) ও তাদের সঙ্গী রাজাকাররা পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে নিয়ে চণ্ডিপুর গ্রামে চন্দ্র কুমার ও জয় কুমারসহ নয়জন হিন্দু লোককে গুলি করে হত্যা এবং গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে লুটপাট করেন।

তিন

১৯৭১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর বেলা তিনটার দিকে লাখাই থানার গদাইনগর গ্রামে লিয়াকত আলী, আমিনুল ইসলাম (রজব আলী), রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনারা চিত্ত রঞ্জন দাসের বাড়ির বাইরের আঙ্গিনায় জগদীশ দাস, পিয়ারি দাস ও মহাদেব দাসসহ ২৬ জন জ্ঞাত হিন্দুকে হত্যা করেন। অজ্ঞাত আরও ৭/৮ জন আহত হয়ে বেঁচে যান।

চার

১৯৭১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর লিয়াকত আলী, আমিনুল ইসলাম (রজব আলী) ও রাজাকাররা পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে নিয়ে কৃষ্ণপুর এলাকায় হামলা চালান। এ সময় হরিদাস রায় ও ক্ষিতিশ রায়সহ ১০ জন হিন্দু লোককে অপহরণ করে অষ্টগ্রাম থানার সদানগর গ্রামের শ্মশানঘাটে এনে রাত ১০টার দিকে পাকিস্তানি সেনারা তাদেরকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি ও বেয়নেট চার্জ করে। এতে ঘটনাস্থলে আজ জন শহীদ হন এবং দুই জন আহত হয়ে বেঁচে যান।

পাঁচ

লিয়াকত আলী, আমিনুল ইসলাম (রজব আলী) ও তার সঙ্গী রাজাকাররা ১৯৭১ সালের ভাদ্র মাসের প্রথম সপ্তাহে যেকোনো দিন সকাল দশটার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর থানার ফান্দাউক বাজার থেকে রঙ্গু মিয়া ও বাচ্চু মিয়াকে অপহরণ করে নিয়ে রাজাকার ক্যাম্পে টর্চার সেলে নিয়ে নির্যাতন করেন। পরদিন বেলা ১২টার দিকে রঙ্গু মিয়াকে নাসিরনগর থানার ডাকবাংলোর পাশে দত্তবাড়ির খালে হত্যা করে মরদেহ পানিতে ফেলে দেন। অপহৃত বাচ্চু মিয়া অর্থের বিনিময়ে রাজাকারদের হাত থেকে মুক্তি পান।

ছয়

১৯৭১ সালের ৭ নভেম্বর বেলা আনুমানিক ১২টার দিকে লিয়াকত আলী ও আমিনুল ইসলাম (রজব আলী) রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে অষ্টগ্রাম থানার সাবিয়ানগর গ্রামে চৌধুরী বাড়ির উত্তর পাশে খালি জায়গায় ইশা খাঁ ও আরজু ভূঁইয়াসহ পাঁচজনকে গুলি করে হত্যা করেন।

সাত

১৯৭১ সালের ৭ নভেম্বর বেলা আনুমানিক ১২টা থেকে সাড়ে ১২টার দিকে লিয়াকত আলী ও আমিনুল ইসলাম (রজব আলী) রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে অষ্টগ্রাম থানার সাবিয়ানগর গ্রামে খাঁ বাড়িতে হামলা চালিয়ে মনির খাঁ ও সফর আলীসহ আওয়ামী লীগ ও স্বাধীনতাকামী ১০ জনকে গুলি করে হত্যা করেন। ওই সময় রাজাকাররা বাড়িতে লুটপাট করে।

(ঢাকাটাইমস/০৫নভেম্বর/এমএবি/এমআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

আদালত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

আদালত এর সর্বশেষ

আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি

কক্সবাজারে কতজন রোহিঙ্গা ভোটার, তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট

সাউথ এশিয়ান ল' ইয়ার্স ফোরাম ন্যাশনাল ও ইন্টারন্যাশনাল চ্যাপ্টারের দায়িত্ব পুনর্বণ্টন

আদেশ প্রতিপালন না হওয়ায় চট্টগ্রামের ডিসি এসপিসহ চার জনকে হাইকোর্টে তলব

১১ মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগের শুনানি ২৯ জুলাই

২৮ দিন পর খুলল সুপ্রিম কোর্ট

ব্যবসায়ী নাসিরের মামলা: পরীমনিকে আদালতে হাজির হতে সমন জারি

বোট ক্লাব কাণ্ড: পরীমনির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন

সেই রাতে ৮৭ হাজার টাকার মদ খেয়েছিলেন পরীমনি, পার্সেল না দেওয়ায় তাণ্ডব

বোট ক্লাব কাণ্ড: প্রতিবেদন দিল পিবিআই, ব্যবসায়ী নাসিরের মামলায় ফেঁসে যাচ্ছেন পরীমনি?

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :