কঠিনের সহজ প্রকাশ

প্রকাশ | ০৬ নভেম্বর ২০১৮, ০৮:২৬ | আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৮, ১১:০০

আরিফুর রহমান দোলন

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হাওয়া বইছে। রাজনীতি এখন চাঙ্গা। এই সময়ে সারা দেশে নতুন কলেবরে আত্মপ্রকাশ করছে দৈনিক ঢাকা টাইমস। খবরটি নিঃসন্দেহে আনন্দের। আশার। চ্যালেঞ্জও আছে বটে।

অনলাইন প্রযুক্তির উৎকর্ষতার যুগ চলছে। অনেকে বলেন, ছাপা পত্রিকার চাহিদা দিন দিন কমছে। পাঠক বাড়ছে অনলাইনে। তবে একথাও ঠিক, ভোরের আলো ফোটার পর এখনো সংবাদপত্রের বিপুল পাঠক ছাপা পত্রিকার অপেক্ষায় বসে থাকেন। পত্রিকা ছাড়া দিন শুরু ভাবতে পারেন না, এমন পাঠকের সংখ্যাও কম নয়। আশার আলো পুরোপুরি নিভে যায়নি। এই আলোয় পথ দেখার আশা নিয়ে আমরা যাত্রা শুরু করছি।

অতীতেও অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এগোতে হয়েছে। ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বরের কথা। যাত্রা শুরু হয়েছিল ‘সাপ্তাহিক এই সময়’র। যে কোনো নতুন উদ্যোগের জন্য ওই সময়টা ছিল বড্ড অনুপযোগী। হরতাল, অবরোধের কারণে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কার্যত স্থবির হওয়ার পথে। ওই পরিপ্রেক্ষিতে নতুন পত্রিকা প্রকাশ করা কি ঠিক হবে? শুভাকাঙ্ক্ষীরা বারবার এই প্রশ্ন করেছেন। কী করব? পিছিয়ে যাব? সুসময়ের অপেক্ষা করব? নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করি। শেষমেশ ঠিক করলাম, যত সমস্যাই হোক শুরু করব। সফল হতে পারি, আসতে পারে ব্যর্থতাও। ব্যর্থতা নাকি সাফল্যের পথ দেখায়। এই দুটো মাথায় রেখেই এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। সাপ্তাহিক ‘এই সময়’ যখন বাজারে এলো তখন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছিল অত্যন্ত নাজুক।

৪৮ ঘণ্টার মধ্যে শুরু করেছিলাম অনলাইন গণমাধ্যম ঢাকা টাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাজ। আমি তখন দৈনিক ‘আমাদের সময়’-এর নির্বাহী সম্পাদক।  পত্রিকাটির মালিকানা নিয়ে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খানের সঙ্গে বিশিষ্ট শিল্পপতি, ইউনিক গ্রুপের কর্ণধার নুর আলী ভাইয়ের মামলা-মোকদ্দমাজনিত কারণে প্রতিষ্ঠানটির সাংবাদিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। সবাইকে পুরোদমে কাজে নেমে পড়তে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়েছিলেন প্রিয় নুর আলী ভাই।

তখন ‘আমাদের সময়’-এর সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন (মঞ্জু) ভাই খানিকটা হতোদ্যম হয়ে পড়েছিলেন। নাছোড়বান্দা এই আমি বেঁধে দেয়া সময়ের আগেই ‘আমাদের সময়’-এর সব সাংবাদিক-কর্মচারী নিয়ে কাজে নেমে পড়ি। এভাবেই ঢাকা টাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমের জন্ম।

দ্রুতই মামলার ফল নুর আলী ভাইদের অনুকূলে চলে গেলে তিনি ‘আমাদের সময়’ নিয়েই আমাকে পুরো মনোযোগ দিতে বলেন। কিন্তু যে দরদ দিয়ে তত দিনে ঢাকা টাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাজ করছি, তাতে মন সায় দিল এটি নিয়েই থাকতে। অত্যন্ত সজ্জন এবং এখনো আমার শুভাকাঙ্ক্ষী নুর আলী ভাইয়ের সঙ্গে সরাসরি কাজের সম্পর্ক ছেদ হলো। হাতে গোনা কয়েকজনকে নিয়ে শুরু করলাম আমার জন্য ভিন্নমাত্রার সংবাদমাধ্যম, ২৪ ঘণ্টার ওয়েব পোর্টাল ঢাকা টাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

‘প্রথম আলো’তে বছর দশেক ভালো পেশাগত জীবন কেটেছে আমার। শুধুই পেশাগত জীবন! কাছ থেকে অনেক কিছু দেখেছি। শিখেছিও। আবার অনেক কিছু দুর্বোধ্যও ঠেকেছে। সারাদেশ ঘুরে ঘুরে গডফাদারের সুলুকসন্ধানে বছরের পর বছর কাটিয়েছি। বাংলা ভাইয়ের জেএমবি বাহিনীর তাণ্ডবলীলা স্বচক্ষে দেখে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোরের প্রত্যন্ত এলাকায় কাটিয়েছি দিনের পর দিন।

সিডরে সর্বহারাদের অসহায়ত্বের চিত্র পত্রিকার পাতায় তুলে আনতে পটুয়াখালী, বরিশালের অজপাড়াগাঁয়ে আধপেটা খেয়ে নির্ঘুম রাতও কাটিয়েছি। রাজনৈতিক প্রতিবেদক হিসেবে সংশ্লিষ্ট দলের হাঁড়ির খবর অনায়াসে তুলে ধরেছি। কর্মজীবনের এই অভিজ্ঞতার ছাপ দৈনিক ঢাকা টাইমসে থাকবে।

দৈনিক ঢাকা টাইমস এগিয়ে যাবে নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতায় ভর করে। অনেক বাধা আসবে। কারণ সত্যকে যারা আড়াল করতে চান, তারা অনেক শক্তিশালী। এই বাধা আমরা অতিক্রম করব। কঠিনের সহজ প্রকাশই হবে আমাদের মূলমন্ত্র।

বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক চর্চায় আমাদের অকুণ্ঠ সমর্থন থাকবে। আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী যে কোনো অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে নিরন্তর কাজ করে যাব আমরা। এ জন্য সবার সাহায্য-সহযোগিতা চাই।

পাঠক, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতা, শুধানুধ্যায়ী সবাই ‘দৈনিক ঢাকা টাইমস’-এর যাত্রায় সব সময় পাশে থাকবেন, এই আশাবাদ রাখছি।

লেখক: সম্পাদক, ঢাকা টাইমস ও সাপ্তাহিক এই সময়