ফোন করলেই বাসায় বিশেষজ্ঞ ডাক্তার

প্রকাশ | ০৮ নভেম্বর ২০১৮, ০৮:৩৮ | আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৮, ১৫:৩৭

সিরাজুম সালেকীন, ঢাকাটাইমস

চিকিৎসকের কাছে গিয়ে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার অভিজ্ঞতা কম-বেশি সবারই আছে। সেই বিড়ম্বনা হয়ত আর থাকবে না। এখন থেকে মোবাইল ফোনে কল করলেই কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসক পৌঁছে যাবেন রোগীর ঠিকানায়। এর জন্য ডাক্তারের ফি ৮০০ টাকা বাদে বাড়তি কোনো খরচ দিতে হবে না। এছাড়া রোগ নির্ণয় করে প্রেসক্রিপশনও রোগীর বাসার ঠিকানায় পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করেছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।  

এমনই একটি সেবা চালু করেছে ‘কল এ ডক্টর বিডি’। তাদের তথ্যকেন্দ্রে কর্মরত সাদিয়া ঢাকা টাইমসকে বলেন, কেউ অসুস্থ হয়ে আমাদের কল করলে আধা থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রোগীর বাসায় পৌঁছে যান। সঙ্গে একজন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট থাকেন। চিকিৎসক রোগী দেখার পর টেস্টের প্রয়োজন হলে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট রোগীর স্যাম্পল সংগ্রহ করেন এবং সঙ্গে সঙ্গে রোগ নির্ণয় করেন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে সব রিপোর্ট দেয়া সম্ভব হয় না। এজন্য সময় দরকার হয়। এক্ষেত্রে রোগীর স্যাম্পল নিয়ে আমরা পপুলার হাসপাতালে যাই। পরে রোগ নির্ণয় শেষে সেটা রোগীর বাসায় পৌঁছে দিই।

সাদিয়া বলেন, রাজধানীতে আমরা ১৯টি পয়েন্টে সার্ভিস দিয়ে থাকি। প্রতি রোগী দেখতে চিকিৎসকরা ৮০০ টাকা ফি নেন। তবে প্যাথলজি রিপোর্টের জন্য আলাদা ফি দিতে হয়। সেটা পপুলারের সঙ্গে চুক্তি করা। তাদের প্যাথলজি খরচ যা তাই রোগীর কাছ থেকে নেয়া হয়। অতিরিক্ত কোনো ফি এখানে নেয়া হয় না।

ভুয়া চিকিৎসকদের দৌরাত্ম চলছে। সেক্ষেত্রে কীভাবে চিকিৎসক বাছাই করবেন। জানতে চাইলে সাদিয়া বলেন, এখানে যেসব চিকিৎসক আছেন সবাই এমবিবিএস পাস করা। আমরা তাদের সার্টিফিকেট ডিএমডিসি পরীক্ষা করি। তারপর তাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হই। এর বাইরে কারও সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হই না। বর্তমানে আমাদের বিভিন্ন বিষয়ে অভিজ্ঞ এমন ১৩ জন চিকিৎসক আছেন। প্রতিটি জোনে একজন করে চিকিৎসক সার্বক্ষণিক থাকেন।

কাজের প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, রোগীর কল পাওয়ার পর আমরা তার রোগ সম্পর্কে প্রথমে জানতে চাই। এরপর সেই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে রোগীর ঠিকানায় পাঠানো হয়। জ্বর, কাঁশি হওয়া রোগীদের ক্ষেত্রে স্পেশালাইজড চিকিৎসক পাঠানো হয় না। এক্ষেত্রে মেডিসিন স্পেশালাইজড চিকিৎসককে পাঠানো হয়। তবে সার্বক্ষণিক প্রতিটি জোনে আমরা একজন স্পেশালাইজড চিকিৎসক রাখার চেষ্টা করি। তবে বেশি জরুরি রোগীদের চিকিৎসা আমরা দিতে পারি না। এক্ষেত্রে তাদের স্থানীয় হাসপাতালে পাঠাতে বলি। অনেক সময় কেউ পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হন। ফলে রোগীর জরুরি চিকিৎসা দরকার হয়। এই তাৎক্ষণিক চিকিৎসার ব্যবস্থা আমাদের নেই।

বর্তমানে চক্ষু বিশেষজ্ঞ বাদে সব ধরনের রোগীকেই আমরা সেবা দিয়ে থাকি। কারণ চোখের সমস্যা নির্ণয়ের জন্য যে ধরনের যন্ত্র প্রয়োজন সেসব বহন করে নিয়ে যাওয়া কষ্টসাধ্য।

কল এ ডক্টর বিডি’র ম্যানেজার মো. রফিকুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, প্রতিদিন আমরা শতাধিক কল পাই। এক্ষেত্রে শিশু ও বয়স্ক রোগী বেশি পাওয়া যায়। কারণ তাদের নিয়ে রোগীর স্বজনদের যাতায়াত, সিরিয়াল এগুলো নিয়ে বেশি বিড়ম্বনা থাকে। সবকিছুই এখন অনলাইনে হচ্ছে। সেই চিন্তা থেকেই এই ধারণা নিয়ে মাঠে নামা। অ্যাপস, ফেসবুকের মাধ্যমে রোগী বা স্বজনরা আমাদের কল করতে পারেন। ধানমন্ডি, গুলশান, বারিধারা, বসুন্ধরা, মিরপুর, মগবাজার, কাকরাইল, রাজারবাগ, মোহাম্মদপুর, রামপুরা, খিলগাঁও, তেজগাঁও, উত্তরা এলাকায় আমাদের সেবা পাওয়া যাচ্ছে। আস্তে আস্তে পরিধি বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। বিদেশ থেকেও আমাদের ফোন করা হয়। কারণ অনেকে দেশের বাইরে থাকেন কিন্তু বয়স্ক বাবা-মা দেশে থাকেন। বেশির ভাগ সময় তাদের কিছু হলে হাসপাতালে নেয়ার লোক থাকে না। আমাদের চিকিৎসক ডাকতে কল করতে হবে এই নাম্বারে ০৯৬৭৮৪৪৬৬৮৮।

অলওয়েল নামে আরেক প্রতিষ্ঠান চালু করেছে এই সেবা। সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কল করলেই (০৯৬৬৬ ৭৬৬ ০০০) বাসায় পৌঁছে যাবে একজন এমবিবিএস ডাক্তার।

সাইফুল আলম জুয়েল নামে একজন বলেন, ‘কিছু দিন আগে আমার মেয়ে জাগোরী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। বাসায় স্ত্রী বুঝতে পারছিল না কী করা প্রয়োজন। পরে ইন্টারনেট ঘেঁটে অলওয়েলে কল করি।’ তিনি বলেন, আধঘণ্টার মধ্যে একজন চিকিৎসক বাসায় আসেন। পরে তিনি আমার মেয়েকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ওষুধ লিখে দেন।

সেবাটি পেয়ে কেমন লেগেছিল জানতে চাইলে জুয়েল বলেন, ‘তাৎক্ষণিক এভাবে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেখাতে পারব ভাবিনি। জরুরি ভিত্তিতে এমন সেবা মানুষের জন্য উপকারই হবে।’

(ঢাকাটাইমস/০৮নভেম্বর/এসএস/জেবি)