এখনো অপেক্ষায় তুষার ইমরান

হিমু আক্তার

প্রকাশ | ০৯ নভেম্বর ২০১৮, ১০:০১

অনলাইন ডেস্ক

টেস্টে ব্যাটিং ব্যর্থতার চরমে বাংলাদেশ। একের পর নতুনদের সুযোগ দিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। তারপরেও সুযোগ মিলছে না প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেটে ব্যাটিং রাজত্ব করা তুষার ইমরানের।

দেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ৩১টি সেঞ্চুরির পাশাপাশি তাঁর রান ১১ হাজারেরও বেশি। এত ধারাবাহিকতার পরও নির্বাচকদের নজরে নেই তিনি। তবু হাল ছাড়ছেন না। ৩৪ বছর বয়সেও তরুণদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পারফর্ম করে দলে ফেরার অপেক্ষায় তিনি। 

ঢাকাটাইমসকে দেওয়া সাক্ষাতকারে সেই আশার কথাই জানিয়েছেন তুষার ইমরান। আলাপচারিতায় হিমু আক্তার।

এখন ব্যস্ততা কি নিয়ে?

এইতো জাতীয় লিগ নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম এতদিন।এরপর বিসিএল হবে, সেখানে মনোযোগ দিতে হবে।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দলে ডাক পাওয়ার গুজব ছিল,  কিন্তু পাননি। কিভাবে নিয়েছেন বিষয়টা?

আসলে এটা তো আমার হাতে নাই। কিন্তু আমি সাধ্য মত চেষ্টা করেছি। ঘরোয়া লিগ গুলোতে ভালো খেলে পারফরম্যান্স ধরে রাখছি। জাতীয় দলে নেওয়া তো নির্বাচকদের বিষয়। উনারা যদি মনে করেন আমাকে জাতীয় দলে নেওয়া প্রয়োজন। তাহলে ডাকবে। আমার কাজটা আমি সঠিক ভাবে পালন করে যাচ্ছি। তবে আমি এখনো অপেক্ষায় আছি।

সিলেট টেস্টে দল ঘোষণার পর কতটা হতাশ ছিলেন?

দলে নেওয়া বা ব্যাটিং ব্যর্থতা- এসব তো আসলে উনারা বলতে পারেন। কিন্তু যখন দল ঘোষণা করেছিল তখন অনেক হতাশ হয়েছিলাম। অনেকেই বলছে যে, ওকে দলে নেওয়া যায় এখন। যেহেতু বিবেচনায় আসিনি তাই হতাশ হয়েও আর লাভ নাই।

নির্বাচকরা খোঁজ খবর নেন?

নাহ! আপাতত কেউ কোনো খোঁজ খবর নেন না। সবাই তো ব্যস্ত। আমিও এনসিএল নিয়ে ব্যস্ত।

সিলেটে ব্যাটিং ব্যর্থতা ছাড়া হারের আর কোনো কারণ দেখছেন?

এখানে যদি আপনি একটু বিশ্লেষণ করেন, আমরা ঘোরায়া ক্রিকেটে ওই মাঠে যে উইকেটে খেলি সেই উইকেট এই টেস্টে ছিল না। সিলেট টেস্টের উইকেটে নূন্যতম ঘাসও নেই। আমরা বছরের  শেষের দিকে এনসিএলে যে উইকেটে শুরু করেছি, তখন বিবেচনা করা উচিত ছিল যে, আমরা কিছু কিছু ম্যাচ টার্নিং উইকেটে খেলব। তাহলে হয়তো ব্যাটিংয়ে আমাদের ব্যাটসম্যানরা আরো সুবিধা পেত। কারণ জিম্বাবুয়ের কিন্তু আহামরি  কোনো স্পিনার নেই। তাদের চেয়ে আমাদের তাইজুল-মিরাজ অনেক ভালো। মিরাজ-তাইজুলদের সামলানো করা কিন্তু অনেক কঠিন। বিশ্বের যেকোনো ব্যাটসম্যানই তাদের সামলাতে হিমসিম খাবে।  মোটকথা আমরা আমাদেরকে যাচাই করতে পারিনি।

সিলেটে এমন হারের পর কি মনে হয় ডাক আসবে?

এটা বলা অনেক কঠিন। কিন্তু আশা তো করি। এখনো অপেক্ষা করে যাচ্ছি। জাতীয় লিগের খেলাও প্রায় শেষ। নির্বাচকরা যদি মনে করেন, এই ব্যাটিং ব্যর্থতার পর আমাকে নেওয়া যাবে তাহলে নেবে আরকি।

সুযোগ পেলে তা কিভাবে কাজে লাগাতে চান?

আসলে বাড়তি কিছু নেই। ঘরোয়া ক্রিকেটে যেভাবে খেলে যাচ্ছি সেভাবেই খেলতে চাই। প্রস্তুতি তো নিয়েই আছি, যদি ডাক আসে আরকি। আর সুযোগ না পেলেও কিছু করার নেই। কারণ কয়েকদিন পর থেকে বিসিএল শুরু হবে  সেখানে এই প্রস্তুতি কাজে দিবে।

জাতীয় দলে না খেলেও এভাবে ফিটনেস ঠিক রেখে খেলে যাওয়া কতটা চ্যালেঞ্জ?

আসলে সবারই তো একটা লক্ষ্য থাকে। আমাদের খুলনা টিমে যারা খেলে তারা সবাই সুপারস্টার। সাকিব-ইমরুল-মিথুন- সৌম্য- মোস্তাফিজ-আফিফ সবাই জাতীয় দলে খেলে। তাদের মধ্যে নিজের জায়গাটা তৈরি করে নেওয়া তো অবশ্যই চ্যালেঞ্জ। তাই আমারও একটা লক্ষ্য থাকে যে, যারা আসছে বা যারা খেলছে ওদের চেয়ে বেশি রান করব। হয়তো কোনো মৌসুমে হয় আবার কোনো মৌসুমে হয়ওনা। তবে শেষ দুই-তিন বছর ধরে ওদের থেকে রান বেশি করছি। জাতীয় দলে সুযোগ পাচ্ছি না, যেন খুলনা টিমেও জায়গা না হারাই। খুলনার মতো দলে জায়গা ধরে রাখাই এখন নিজের সঙ্গে নিজের চ্যালেঞ্জ।

তবে যখন জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা সবাই আসে তখনও আমার জায়গা নিয়ে কোনো কথা হয় না। এটা আসলে আমার জন্য বড় পাওয়া। কারণ এই দলটাতে ১১ জনের ১০ জনই জাতীয় দলের। তার মধ্যেও আমার পজিশনটা থাকে।

নতুনদের মধ্যে টেস্টে ফেরাটা কতটা কঠিন?  

দেখুন ওয়ানডে ক্রিকেট আর টেস্ট ক্রিকেট সর্ম্পূণ দুটি ভিন্ন ফরম্যাট।  টেস্টে অবশ্যই অভিজ্ঞতা একটা ব্যাপার। এখানে ফিটনেসের চেয়েও অভিজ্ঞতাটা বেশি কার্যকারী। এই ফরম্যাটে মেন্টাল শক্তিটা আরও স্থির থাকাটা অনেক বড় বিষয়। আমার মনে হয়, তরুণরা খুব তাড়াতাড়ি  টেস্ট ক্রিকেটে সুযোগ পাচ্ছে। যদি ধারবাহিকভাবে পারফর্ম না করে, তাহলে এক দুই বছর পরে দলে সুযোগ পাচ্ছে না। তারা যদি আরও দুই তিন বছরের অভিজ্ঞ হতো তাহলে জাতীয় দলে আরও ধারাবাহিক হতে পারত। 

তবে নির্বাচকরা হয়তো চিন্তা করেন নতুন প্রজন্ম তৈরি করার। সেটা ভাবলেও খুব কম বয়সেই তাদের সুযোগ দেওয়া হয়।সাকিব-মুশফিকদের কথা বললে, ওরা কিন্তু খুব একটা ভালো খেলে দলে এসেছে তা না। তবে তারা ধারাবাহিকভাবে এগিয়েছে। স্টেপ বাই স্টেপ খেলে তারা এই অবস্থান তৈরি করছে। কিন্তু এখন যারা আসছে তারা ১০০ এর মধ্যে ৩০ ভাগ ভালো খেলছে। এরা হঠাৎ আসে, এক দুই বছর পর এদের আর খুঁজেও পাওয়া যায় যাবে না। তবে তরুণদের বলবো, তারা যেন তাদের পারফর্ম ধরে রাখতে আরও মনোযোগী হয়।

আর কতদিন খেলা চালিয়ে যাবেন?

আমার ইচ্ছা আছে আরও তিন বছর অন্তত, রান যদি করতে থাকি তাহলে খেলা চালিয়ে যাব ইনশাআল্লাহ।