ভোটে যাচ্ছে বিএনপি

বোরহান উদ্দিন
ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১০ নভেম্বর ২০১৮, ০০:১৩
বৈঠকে বিএনপি নেতারা। ফাইল ছবি

দাবি পূরণ না হলেও আবার ভোট বর্জনের সিদ্ধান্তকে ঝুঁকিপূর্ণ ভাবছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের একাংশ। এ কারণে তফসিল ঘোষণার পর দলটির প্রতিক্রিয়া হয়েছে তুলনামূলক নমনীয়।

২০১৩ সালে তফসিল ঘোষণার পর তাৎক্ষণিকভাবে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ ডাকে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বে সে সময়কার ১৮ দল। তুমুল সহিংসতায় পরদিন প্রাণ হারায় সাতজন। উদ্বেগ জানায় দেশি-বিদেশি মহল।

তবে এবার বিএনপির নেতাদের বক্তব্য অনেকটাই নমনীয়। তারা বলছেন, তফসিল পিছিয়ে দিলে ক্ষতি হতো না।

বিএনপি এবং তার নতুন জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বৃহস্পতিবার তফসিল ঘোষণার বিরুদ্ধে ছিল। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপের চূড়ান্ত ফল না দেখে তফসিল না দেয়ার অনুরোধ করেছিলেন তারা। তবে নির্বাচন কমিশন তা অগ্রাহ্য করেছে।

পাশাপাশি সংলাপেও ঐক্যফ্রন্টের দাবি নাকচ হয়েছে। আর সংলাপে সফল না হলে আন্দোলনের ঘোষণা থাকলেও বিএনপি কোনো কর্মসূচি দেয়নি। এর মধ্যে বিএনপির স্থায়ী ও নির্বাহী কমিটির নেতাদের একটি বড় অংশ নির্বাচনে অংশ নেয়ার পক্ষে মত দিচ্ছেন। তবে আরেকটি অংশ আবার বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া মূল্যহীন বলছেন। তাদের মত, এটা করা হলে সেটি সরকারের কাছে নতি স্বীকার হবে। আর এতে গত পাঁচ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামও অর্থহীন হয়ে পড়বে।

যারা নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে, তারা বলছেন, ভোটে না গেলে তা ঠেকানোর শক্তি থাকতে হবে। কিন্তু সেটা পারা যায়নি। আর সরকার তার মেয়াদও শেষ করে ফেলেছে। ফলে আগামীতেও আন্দোলনে গেলে সাফল্যের নিশ্চয়তা নেই।

আবার নির্বাচন কমিশনের রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইনে পরপর দুবার ভোট বর্জন করা দলের নিবন্ধন বাতিল হওয়ার বিধান আছে। আর এটি হলে দলীয় প্রতীকে ভোটে অংশ নেয়ার সুযোগই থাকবে না বিএনপির।

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে জামায়াতের পাঁচ ও বিএনপির এক প্রভাবশালী নেতার ফাঁসি, দুর্নীতির দুই মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সাজা, বহু চেষ্টা করেও দলীয় প্রধানকে কারাগার থেকে মুক্ত করতে না পারার পর আন্দোলন বা আইনি লড়াই করে নিবন্ধন টিকিয়ে রাখা যাবে কি না, এ নিয়েও আছে সংশয়।

আর এই নেতাদের বক্তব্যকেই এখন গুরুত্ব দিচ্ছেন শীর্ষ নেতারা। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে কিছুটা সময় নিতে চান তারা। সিদ্ধান্ত হয়েছে আজ শনিবার দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা আবার বসবেন। এরপর ২০ দলীয় জোট এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের সঙ্গেও কথা বলবেন তারা।

বিএনপির নেতারা জানান, তফসিল ঘোষণার দিন কারাগারে স্থাপিত আদালতে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কথা হয়েছে বিষয়টি নিয়ে। সেখানেও বিএনপির নেত্রী ভোটে যাওয়ার পক্ষেই মত দিয়েছেন। এরপর রাতে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বৈঠকে বসলে সেখানে নির্বাচনের যাওয়ার পক্ষেই বেশির ভাগ মত আসে।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম মিয়ার কাছে জানতে চাইলে ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘আমরা তো নির্বাচনে যেতে চাই। যদিও পক্ষে-বিপক্ষে মত আছে। কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানতে হয়তো আর একটু সময় লাগবে।’

বিএনপি চেয়ারপারসনের একজন উপদেষ্টা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘বৈঠকে মহাসচিব তো আমাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য বলেছেন।’ বিএনপির একজন সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, ‘আমাদের মতামত নেয়া হয়েছে। সবাই সবার মতো কথা বলেছেন। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত দেয়া হয়নি বৈঠকে।’

সিদ্ধান্ত নিতে বিএনপির সময়ক্ষেপণের সুযোগ নেই। হাতে সময় আছে নয় দিন। ২৩ ডিসেম্বরের ভোটে আসতে হলে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে ১৯ নভেম্বরের মধ্যে। অবশ্য ২০ দল এবং ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আসন বণ্টনের জন্য আরও কিছু সময় পাবে। কারণ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সুযোগ থাকছে ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত। ততদিনে আসন বণ্টন নিয়ে সমঝোতায় আসা কঠিন হবে না বলে মনে করছেন বিএনপির নেতারা।

নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন এমন নেতারা মনে করেন, সংলাপে প্রধানমন্ত্রী গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হবে না আশ^াস দিলেও গ্রেপ্তার থেমে নেই। এই অবস্থায় নির্বাচনে না গিয়ে কর্মসূচিতে গেলে আরও কর্মী গ্রেপ্তার হবে। সাংগঠনিক শক্তিও ক্ষয় হবে।

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘নির্বাচনে না যাওয়ার কথা আমরা এখনো বলিনি। আমরা সব সময় বলেছি নির্বাচনে যেতে চাই। কিন্তু সেজন্য পরিবেশ চাই। আবার সংলাপে অংশ নিলাম, সেখানে ফলাফল তো দূরে থাক উল্টো নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এ অবস্থায় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে।’

নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি পূরণ না হওয়ায় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি-জামায়াত জোট। সেই সঙ্গে ভোট ঠেকাতে নামে আন্দোলনে। কিন্তু সহিংস কর্মসূচির মধ্যেও নির্বাচন হয়।

ঢাকাটাইমস/১০নভেম্বর/বিইউ/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এমপি-মন্ত্রীর স্বজন কারা, সংজ্ঞা নিয়ে ধোঁয়াশায় আ.লীগ

মন্ত্রী-এমপির স্বজনরা প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে ব্যবস্থা: ওবায়দুল কাদের

স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপির আরও এক নেতা বহিষ্কার 

দেশ গরমে পুড়ছে, সরকার মিথ্যা উন্নয়নের বাঁশি বাজাচ্ছে: এবি পার্টি

বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদ সালাম-মজনুর

নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে রাজধানীতে রিজভীর নেতৃত্বে মিছিল

মন্দিরে আগুন ও দুই শ্রমিক পিটিয়ে হত্যায় বিএনপির উদ্বেগ, তদন্ত কমিটি গঠন

প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় এদেশে আইনের প্রয়োগ হয়: রিজভী

দেশি-বিদেশি চক্র নির্বাচিত সরকারকে হটানোর চক্রান্ত করছে: ওবায়দুল কাদের

প্রতিমা পোড়ানোর মিথ্যা অভিযোগে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শাস্তি দিতে হবে: ছাত্রশিবির সভাপতি

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :