গাজীপুর-৩
দুর্জয় নাকি সবুজ?
শ্রীপুর উপজেলা ও সদরের তিনটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত গাজীপুর-৩ আসনটিতে বরাবর ভালো করেছে আওয়ামী লীগ। বর্ষীয়ান রাজনীতিক ও বঙ্গবন্ধুর সহচর রহমত আলী টানা ছয়বার জিতলেও বয়সের ভারে নুইয়ে পড়েছেন। যদিও তিনি এবারও মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে চাউড় আছে। আর বয়স বিবেচনায় যদি তাকে দেয়া না হয়, সে ক্ষেত্রে ছেলে জামিল হাসান দুর্জয় হবেন দাবিদার।
তবে নৌকা পাওয়ার আশায় দুর্জয় একা নন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ দাবি করেছেন, তিনি কেন্দ্রের সবুজ সংকেত পেয়ে গেছেন। যদিও একই কথা বলছেন দুর্জয়ও।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ১৯৭৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে বর্তমান সংসদ সদস্য রহমত আলী কারাগারে থাকায় ভোটে দাঁড়াতে পারেননি। জিতে যান বিএনপির চৌধুরী তানভীর আহম্মদ সিদ্দিকী। কিন্তু এরপর রহমত আলী আসনটি নিজের করে নেন। ১৯৯৬ স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী হয়ে এলাকায় দৃশ্যমান উন্নয়নও করেন। তার নেতৃত্ব নিয়েও কখনও প্রশ্ন ওঠেনি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। তবে এখন তার বয়স হয়ে দাঁড়িয়েছে সমস্যা। শারীরিকভাবে দুর্বল অবস্থানে থাকা রহমত আর জনসংযোগের ধকল নিতে পারবেন কি না, এ নিয়েও আছে আলোচনা।
রহমতপুত্র দুর্জয় ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর কন্যা দলীয় সভানেত্রী এ আসনে নৌকার মাঝি বানাবেন বলেই জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদটি আমাকে দেননি। মাঠের পারফরমেন্সে অন্যদের চেয়ে ঢেড় এগিয়ে আমি। আওয়ামী লীগের একজন প্রবীণ রাজনীতিবীদের সন্তান হিসেবেও আমি মনোনয়ন চাইব।’
আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী ইকবাল হোসেন সবুজ বলেন, ‘আসন্ন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে বলেই আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়েছেন।’
গত উপজেলা নির্বাচনে দলীয় সভাপতির নির্দেশে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের কথা জানিয়ে সবুজ বলেন, ‘ছাত্রজীবনে সেই ভাওয়াল কলেজের ভিপি নির্বাচন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্তই শেখ হাসিনাকে জানানো ছাড়া নেইনি। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তই আমার সিদ্ধান্ত।’
সম্ভাব্য দুই প্রার্থীরই এলাকায় রয়েছে বিশাল কর্মী বাহিনী। নিয়মিত সভা সমাবেশ করে জনমত তৈরির জন্য কাজ চলছে। যদিও দুই বলয়ের বাইরে থাকা দলের কর্মী সমর্থকরা দুই জনের দ্বন্দ্বের কারণে তৃতীয় পক্ষের সুবিধা নেয়ার আশঙ্কায়।
সম্ভাব্য প্রার্থী আরও আছে। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হারিছ উদ্দিন আহমেদ গত সংসদ নির্বাচন ছাড়া আগের সব নির্বাচনেই মনোনয়ন চেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘১৯৬২ সালে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হই। বঙ্গবন্ধুর ডাকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেই জীবনটা পার করলাম। এবার আশা করছি দল আসন্ন নির্বাচনে আমাকে মনোনয়ন দেবে।’ কোন্দল বিএনপিতেও, দাবিদার ছয় জন
তফসিল ঘোষণা হয়ে গেলেও বিএনপির ভোটে আসার ঘোষণা না আসায় এখনও প্রকাশ্য তৎপরতা নেই দলটির। যদিও দলটির অন্তত ছয় প্রার্থী ধানের শীষ প্রতীক পেতে কেন্দ্রের মন জোগানোর চেষ্টায়।
এই আসনে রহমত আলীকে বরাবর চ্যালেঞ্জ করে এসেছেন চৌধুরী তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী। তবে দল থেকে বহিষ্কার হওয়ার পর বিএনপিতে একক নেতৃত্বের অবসান ঘটে। শুরু হয় কোন্দল। নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে এই দ্বন্দ্ব আরও বেড়েছে।
বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও দলে কর্তৃত্ব ও প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। আর প্রার্থীরা নেতাকর্মীদেরকে নিয়ে আলাদা বলয় তৈরি করে ভোটের প্রস্তুতিতে।
শ্রীপুর উপজেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি পীরজাদা এসএম রুহুল আমীন বহুদিন ধরেই নির্বাচনী এলাকায় চষে বেড়াচ্ছেন। কেন্দ্র থেকে নির্দেশ পেয়েই তিনি মাঠ গোছাচ্ছেন বলে দাবি করেছেন।
বিএনপির সহ স্বাস্থ্যবিষয়ক যুগ্ম সম্পাদক ও ড্যাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এস এম রফিকুল ইসলাম বাচ্চুও চান মনোনয়ন। সংকেত পাওয়ার দাবি করেছেন তিনিও।
শ্রীপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক শফিকুল ইসলামও দলের ভেতর শক্তিশালী বলয় গড়ে তুলেছেন।
শফিকুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘গত নির্বাচনের আগে কেন্দ্র থেকে আমাকে মাঠ গোছাতে বলা হয়েছিল। তখন থেকেই মাঠ পর্যায়ের সকল নেতাকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে কেন্দ্রীয় প্রায় সকল কর্মসূচি পালনসহ তাদের সুখে দুঃখে পাশে দাঁড়িয়ে আসছি। বহুদিন ধরেই বিনা মূল্যে মানুষজনকে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছি।’
আরেক সম্ভাব্য প্রার্থী জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াৎ হোসেন সবুজ বলেন, ‘বিএনপির চরম দুঃসময়ে রাজপথে থেকেছি। আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে দলটিকে সুসংগঠিত করার জন্য ছাত্র জীবন থেকেই কাজ করছি। দল আমাকেই মনোনয়ন দেবে বলে আশা করছি।’