গর্ভবতী রোহিঙ্গা নারীরা পাচ্ছেন নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা

ঢাকা টাইমস ডেস্ক
 | প্রকাশিত : ১২ নভেম্বর ২০১৮, ০৮:৪১

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার শুরু হওয়ার প্রথম দিকেই বাংলাদেশে চলে আসেন ২৫ বছর বয়সী আমেনা খাতুন। তার সঙ্গে আসে স্বামী আর তিন সন্তান। এখানে উখিয়ার এক রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঠাঁই হয় এই পরিবারের। ক্যাম্পে আসার দুই মাসের মাথায় নতুন করে গর্ভবতী হন আমেনা। এই গর্ভধারণের বিষয় নিয়ে প্রথম দিকে তার একেবারেই কোনো মাথাব্যথা ছিল না। কারণ, মিয়ানমারে থাকতে তিনি গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্যসেবা কী জিনিস তা জানতেনই না।

ক্যাম্পের পাশের এক স্বাস্থ্য ক্যাম্পে বসে তার সঙ্গে কথা হয়। গর্ভবতী হওয়ার পর থেকে স্বাস্থ্য ক্যাম্পে নিয়মিত আসছেন তিনি। আমেনা জানান, ‘ডাক্তার আপা’ বলেছেন আর দেড় মাস বাকি তার ডেলিভারির।

আমেনা বলেন, আগের তিনটি সন্তান জন্মদানের সময় মিয়ানমারে চেকআপ কী জিনিস তা সম্পর্কে তাদের কারওই কোনো ধারণা ছিল না। বাড়িতে তিনি সন্তান জন্ম দিয়েছেন। এখানে আসার পর তিনি অনেক নতুন তথ্য জানতে পারছেন ‘ডাক্তার আপা’দের কাছে।

আমেনার পাশেই বসে ছিলেন আরেক রোহিঙ্গা নারী জোবেদা খাতুন। তার বয়স ৩১। তিনিও সাড়ে সাত মাসের গর্ভবতী। স্বাস্থ্য ক্যাম্পে এসেছেন চেকআপের জন্য।

জোবেদা বলেন, ‘এখানে এসে আমার অনেক উপকার হয়েছে। বাচ্চার কীভাবে যতœ নিতে হয়, প্রথম ছয় মাস তাদের কী ধরনের খাবার দিতে হবে এবং এর পরে তাদের কী কী খাওয়াতে হবে- এমন অনেক তথ্য এখান থেকে জানতে পারছি।’

তার আগের বাচ্চাদের তিনি জন্মের দুই মাস পর থেকে পানি খাওয়ান জোবেদা। ‘অথচ এখানে এসে জানলাম, জন্মের ছয় মাস পর্যন্ত শুধু বুকের দুধ ছাড়া বাচ্চাদের আর কিছুই দেওয়া যায় না।’ বলেন জোবেদা, ‘এখানকার ডাক্তার আপারা ঘুরে ঘুরে গর্ভবতী নারীদের খুঁজে বের করে তাদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। মিয়ানমারে তা কখনো কল্পনাও করতে পারিনি।’

স্বাস্থ্য ক্যাম্পে রোহিঙ্গা নারীরা যাদের ‘ডাক্তার আপা’ বলে ডাকেন, তারা আসলে মিডওয়াইফ। কারণ, এত বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা নারীর সেবা দেয়ার মতো চিকিৎসক সেখানে নেই।

মিডওয়াইফ রোদেলা বলেন, ‘এই ক্যাম্পে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ জন রোহিঙ্গা নারী আসেন সেবা নেয়ার জন্য। আমরা তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও পরামর্শ দিই। এ ছাড়া এখান থেকে এসব রোহিঙ্গা নারী প্রসব-পরবর্তী সেবাও পেয়ে থাকেন।’

সম্প্রতি পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, দেশে এখনো সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে প্রতি এক লাখ মায়ের মধ্যে ১৯৬ জন মা মারা যান। জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান পরিচালিত ওই গবেষণা থেকে জানা যায়, বর্তমান বাংলাদেশ সরকার এই মাতৃমৃত্যু কমিয়ে আনতে বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। তার মধ্যে রয়েছে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত মিডওয়াইফ, যারা প্রসবকালীন সময়ে মায়েদের সেবা দেবেন।

এ লক্ষ্যে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১২ সালে চালু করা হয় ডেভেলপিং মিডওয়াইভস প্রজেক্ট। এই প্রজেক্টের মাধ্যমে শুরু হয় তিন বছর মেয়াদি মিডওয়াইফারি প্রশিক্ষণ।

ব্র্যাকের সূত্রমতে ঢাকা, দিনাজপুর, খুলনা, সিলেট ও ময়মনসিংহে এ পর্যন্ত সাতটি একাডেমিক সেন্টার চালু করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে ৮৬০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন এবং ৪০০ জন কোর্স সম্পন্ন করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সেবা দিচ্ছেন।

এসব প্রতিষ্ঠানে কোর্স সম্পন্ন করা ১৫০ জন মিডওয়াইফ বিভিন্ন রোহিঙ্গা স্বাস্থ্য ক্যাম্পে চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

এমনই একজন মিডওয়াইফ মেহের আফরোজ বলেন, ‘আমি এখানে এসেছি আজ সাড়ে পাঁচ মাস। এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে সাত শ ডেলিভারি করেছি।’

মেহের আফরোজ বলেন, ক্যাম্পে আসা প্রায় সব নারীই তাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন নন। আমাদেরই খুঁজে খুঁজে বের করতে হয় গর্ভবতী নারীদের। শুরুর দিকে তারা স্বাস্থ্য ক্যাম্পে আসতে চান না। অনেক বোঝানোর পর তারা আসতে রাজি হন। তবে, আগের তুলনায় রোহিঙ্গা নারীরা এখন অনেক সচেতন হয়েছেন।

রোহিঙ্গা স্বাস্থ্য ক্যাম্পে কর্মরত গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. নূরানী সুলতানা বলেন, ‘আসলে ডাক্তারদের পক্ষে এত সংখ্যক নারীকে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া সম্ভব নয়। আমাদের প্রতিদিন গড়ে ৭০ থেকে ৮০ জন রোগী দেখতে হয়। অনেক সময় তা ১০০ ছাড়িয়ে যায়। এখানে আমরা মিডওয়াইফদের বুঝিয়ে দিই করণীয় সম্পর্কে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মিডওয়াইফরা দিনরাত পরিশ্রম করে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।’-বাসস

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :