আজ-কালের মধ্যেই ইবতেদায়ি মাদ্রাসা নীতিমালা

মহিউদ্দিন মাহী
 | প্রকাশিত : ১২ নভেম্বর ২০১৮, ০৮:৪৬

অর্থ মন্ত্রণালয়ের চারটি শর্ত যুক্ত করে চূড়ান্ত করা হয়েছে ‘স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা স্থাপন, স্বীকৃতি, পরিচালনা, জনবল ও বেতন কাঠামো সংক্রান্ত নীতিমালা-২০১৮’। আজ অথবা আগামীকালের মধ্যেই এই নীতিমালা জারি করা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রওনক মাহমুদ।

তিনি গতকাল ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা নীতিমালাটি চূড়ান্ত করছি। আশা করছি, খুব কম সময়ের মধ্যেই এটি জারি করতে পারবো।’

সূত্র জানায়, এটি এখন যাবে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের কাছে। তার অনুমোদনের পর পরিপত্র আকারে জারি হবে। গত ২ অক্টোবর কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ নীতিমালাটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগে অনুমোদনের জন্য পাঠায়। চারটি শর্ত দিয়ে গত ৮ নভেম্বর কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগে সম্মতিপত্র পাঠায় অর্থ বিভাগ।

শর্তগুলো হলো- সরকারের বাজেট বরাদ্দের ভারসাম্য রক্ষায় একসঙ্গে সব শিক্ষক নিয়োগ না দিয়ে পর্যায়ক্রমে দেওয়া, প্রচলিত প্রাথমিক শিক্ষার আওতায় নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের কাজের ধরন অনুযায়ী প্রশিক্ষণের মতোই প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপন করে প্রশিক্ষণ দেওয়া, উপজেলা বা থানাভিত্তিক শূন্যপদ অনুযায়ী কোটায় প্রার্থী না পাওয়া গেলে একই উপজেলা বা থানার উত্তীর্ণ মেধাক্রম অনুযায়ী প্রার্থীদের দিয়ে শূন্যপদ পূরণ এবং মহানগরে এক কিলোমিটার, পৌরসভায় দেড় ও মফস্বলে দুই কিলোমিটারের মধ্যে একটির বেশি মাদ্রাসা থাকলে একীভূত করা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নতুন এই নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বেড়ে যাবে। প্রধান শিক্ষকদের সম্মানি বর্তমানের তুলনায় ২৪০ শতাংশ এবং সহকারী শিক্ষকদের ২১৭ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে প্রধান শিক্ষকরা ২ হাজার ৫০০ টাকা আর সহকারী শিক্ষকরা ২ হাজার ৩০০ টাকা করে সম্মানি পাচ্ছেন।

বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে তিন হাজার ৪৩৩টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা আছে। এসব প্রতিষ্ঠানে ১৫ হাজার ২৪৩ জন শিক্ষক কর্মরত। প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা পাঁচ লক্ষাধিক।

প্রস্তাবিত নীতিমালা অনুযায়ী, মাদ্রাসা স্থাপনের অনুমোদন দেবে মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড। তবে সরকারের পূর্বানুমোদন নিতে হবে। ব্যক্তির নামে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা যাবে। কিন্তু যুদ্ধাপরাধী বা মানবতাবিরোধী কর্মকা-ে জড়িত কোনো ব্যক্তির নামে প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা যাবে না।

নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড বা জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড অনুমোদিত সিলেবাস বা পাঠ্যপুস্তকে পাঠদান করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারি নির্দেশনা মেনে শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি অনুসরণ করতে হবে। পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। মহানগর, পৌর ও শহর এলাকার মাদ্রাসায় কমপক্ষে ২০০ শিক্ষার্থী থাকতে হবে। এর মধ্যে প্রতি শ্রেণিতে কমপক্ষে ২০ জন শিক্ষার্থী বাধ্যতামূলক।

মফস্বলের প্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম ১৫০ জন শিক্ষার্থী থাকতে হবে। সেখানে শ্রেণিপ্রতি ১৫ জন থাকতে হবে। তবে দুর্গম ও বিচ্ছিন্ন এলাকায় এ শর্ত শিথিলযোগ্য। ইবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষায় মহানগর/পৌর/শহর এলাকার প্রতিষ্ঠান থেকে ন্যূনতম ২০ জন শিক্ষার্থীকে অংশ নিতে হবে। তাদের মধ্যে ১৫ জনকে পাস করতে হবে। গ্রাম এলাকায় সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে ১৫ জন শিক্ষার্থীকে। তাদের মধ্যে ১০ জনকে পাস করতে হবে।

প্রতিষ্ঠান স্থাপনের আগে মাদ্রাসার নামে জমি রেজিস্ট্রি করতে হবে। এরপর জমির সেই দলিলসহ মাদ্রাসা স্থাপনের আবেদন করতে হবে। বছরের প্রথম তিন মাস কেবল আবেদন নেয়া হবে। আবেদনপত্রের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের নামে স্থায়ী আমানত হিসাবে ব্যাংকে ২০ হাজার টাকা গচ্ছিত থাকার প্রমাণপত্র দিতে হবে।

প্রস্তাবিত মাদ্রাসার নামে মফস্বল এলাকায় শূন্য দশমিক ৩৩ একর জমি থাকতে হবে। শহর বা পৌর এলাকায় শূন্য দশমিক ২০ একর ও মহানগর এলাকায় শূন্য দশমিক ১০ একর জমি থাকতে হবে। মাদ্রাসার নামে রেজিস্ট্রি করা জমির নামজারি ও ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের হালনাগাদ দাখিলা থাকতে হবে।

নীতিমালায় মাদ্রাসা ভবনের ব্যাপারে আটটি শর্ত আরোপ করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে- ন্যূনপক্ষে টিনের বেড়াসহ টিনশেড ঘর, শিক্ষকদের বসার জন্য একটি কক্ষ ও পাঁচটি শ্রেণিকক্ষ, থাকতে হবে। শ্রেণিকক্ষের আয়তন হবে মফস্বলে দেড় হাজার ও মহানগর/পৌর/শহর এলাকায় দুই হাজার বর্গফুট। শিক্ষক কক্ষের আয়তন হবে দেড়শ’ বর্গফুট। বসার জন্য পর্যাপ্ত আসবাবপত্র, মানসম্মত টয়লেট, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা থাকতে হবে। বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকলে পর্যায়ক্রমে সংযোগ নিতে হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য খেলার মাঠ ও পাঠাগার থাকতে হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :