সত্যিকারের টেস্ট মেজাজে দেখছি টাইগারদের

খন্দকার জামিল উদ্দিন
| আপডেট : ১২ নভেম্বর ২০১৮, ২০:৫১ | প্রকাশিত : ১২ নভেম্বর ২০১৮, ১৯:০১
খন্দকার জামিল উদ্দীন

সিলেট টেস্টে হারটা একদম প্রত্যাশিত ছিল না। বাংলাদেশ ওয়ানডেতে দুর্দান্ত খেলেছিল; সাদা পোশাকে এভাবে মুখ থুবড়ে পড়বে- ওমনটা কখনোই মনে হয়নি। সিলেটের ফলাফলে হতাশ হয়েছিলাম খুব। তবে সেই হতাশা এখন অনেকটাই কেটে গেছে। মিরপুরে যে দুর্দান্ত খেলছে টাইগাররা! আরও নির্দিষ্ট করে বললে মুশফিকুর রহিম আর মুমিনুল হক ছিলেন অসাধারণ। তাদের ইনিংস হৃদয়ে গেঁথে থাকবে অনেকদিন।

রঙিন পোশাকে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স নিয়ে কিছু বলতে চাই না। দেশ ও দেশের বাইরে- দুই জায়াগাতেই তারা নিজেদের প্রমাণ করেছে। একটা সময় শোনা যেত, টাইগাররা কেবল ঘরেই জেতে, বাইরে তারা বেড়াল। তবে সমালোচকদের এই ধারণা পাল্টে দিতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে ধারাবাহিক সাফল্য টেস্টেও ভালো করার প্রেরণা যোগাচ্ছে টাইগারদের। গত এক বছরের মধ্যে আমরা অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড আর শ্রীলংকার মত দলকে আমরা হারিয়েছি।

টেস্টে অধিকাংশ সাফল্য নিজেদের মাটিতেই পেয়েছে বাংলাদেশ। কাজেই আশা করেছিলাম জিম্বাবুয়েকে খড়কুটোর মত গুঁড়িয়ে দেবে টাইগাররা। ওয়ানডেতে সফরকারীদের হোয়াইটওয়াশ করার পর আমার লোভ আরও বেড়ে গিয়েছিল! কিন্তু সিলেটে দেখলাম উল্টো চিত্র। বাংলাদেশ ফিরে গেল সেই এক যুগ আগে। নিজেদের মাটিতে খর্বশক্তির জিম্বাবুয়ের কাছে লজ্জাজনকভাবে হেরে বসল তারা।

ওই ম্যাচ শেষে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ হতাশার সুরে বলেছিলেন, ‘আমরা আসলে টেস্ট ম্যাচ খেলিনি।’ মিরপুরে চলমান টেস্টে তাই সবার ওপর ভালোর খেলার একটা চাপ ছিল। সেই চাপেই কিনা টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ২৬ রানেই ৩ উইকেট খুইয়ে বসল টাইগাররা। আমার মনে হতাশা ফিরে এল আবারও। মনে হতে লাগল আরও একটি লজ্জার হার দেখতে হবে। কিন্তু না, দ্বিতীয় দিন শেষে অন্য কিছু ইনিংস দিচ্ছে ঢাকা টেস্ট। শুরুর ধাক্কা সামলে বাংলাদেশ নিজেদের প্রথম ইনিংস ঘোষণা করেছে ৭ উইকেটে ৫২২ রান তুলে।

কৃতিত্বের সিংহভাগ আমি দেব মুশফিক আর মুমিনুল হককে। মুশফিকের কথা আর কী বলব? বাংলাদেশের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান তিনি। বিপদের বন্ধু। দল যখনই পথ হারিয়ে দিশেহারা তখনই আলোকবর্তিকা নিয়ে হাজির হন মুশফিক। সব ফরম্যাটেই প্রমাণিত মুশফিকের এমন একটি ইনিংস খেলা খুব দরকার ছিল। তিনি সেটা খেললেন রেকর্ড গড়ে। প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে টেস্টে দুটি ডাবল সেঞ্চুরি। ২১৯ রানের হার না মানা ইনিংসটি দেশের পক্ষেও সর্বোচ্চ। ৫৮৯ মিনিট টানা ব্যাটিং করে প্রমাণ করেছেন তার ফিটনেস লেভেলটা কেমন। শুধু কি তাই? লম্বা ইনিংস খেলার পর ক্লান্তি ছুঁড়ে গ্লাভস হাতে উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে পড়েছেন। দেশের প্রতি তার ভালোবাসা আর নিবেদন দুটোই আমাকে মুগ্ধ করেছে। মুশফিককে অভিনন্দন জানাচ্ছি।

টেস্টে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের পক্ষে সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান মুমিনুল হক নিজেকে হারিয়ে খুঁজছিলেন। ওয়ানডেতে সুযোগ মেলে না, সাদা পোশাকেও রান পাচ্ছিলেন না। তিনিও স্বরূপে ফিরলেন ঢাকায়। মুমিনুলের ব্যাটে দেখলাম ১৬১ রানের চমৎকার ইনিংস। মুশফিকের সঙ্গে চতুর্থ উইকেটে ২৬৬ রানের রেকর্ড জুটি গড়ে দলকে খাদের কিনার থেকে টেনে তুলেছেন তিনি। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আর অফস্পিনার মেহেদী মিরাজও দলের বড় সংগ্রহে রেখেছেন অবদান। অষ্টম উইকেটে মুশফিকের সঙ্গে স্কোরবোর্ডে যোগ করেছেন ১৪৪ রান। ওটাও বাংলাদেশের পক্ষে রেকর্ড জুটি।

দুই তারকা সাকিব আল হাসান আর তামিম ইকবালকে ছাড়াই বাংলাদেশ যেভাবে ঘুরে দাঁড়ালো, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। মিরপুরে তাদের সত্যিকারের টেস্ট মেজাজেই দেখছি আমি। আশা করি, এই টেস্টে বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়বে তারা। বিশ্বাস করি, সাদা পোশাকে টাইগারদের ভাগ্য ঘুরিয়ে দেবে এই ম্যাচটা।

খন্দকার জামিল উদ্দিন: সাবেক সিসিডিএম চেয়ারম্যান ও বিসিবি পরিচালক

সংবাদটি শেয়ার করুন

খেলাধুলা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

খেলাধুলা এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :