সুচিকে দেয়া সম্মাননা প্রত্যাহার অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের
রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনীর বর্বর নির্যাতনের বিরুদ্ধে নিরবতা পালন করায় মিয়ানমারের কার্যত সরকার প্রধান অং সাং সুচিকে দেয়া সর্বোচ্চ সম্মাননা প্রত্যাহার করেছে মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
২০০৯ সালে অং সান সুচিকে ‘অ্যাম্বাসাডর অফ কনশেন্স’ বা ‘বিবেকের দূত’ খেতাব দিয়েছিল অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। গৃহবন্দী থাকার সময় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষায় অং সান সুচির শান্তিপূর্ণ ও অহিংস আন্দোলনের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়েছিল। সেই সম্মাননাই এখন প্রত্যাহার করে নেওয়া হল।
সোমবার এক বিবৃতিতে অ্যামনেস্টি জানায়, সুচি তার এক সময়কার নৈতিক অবস্থান থেকে লজ্জাজনকভাবে সরে যাওয়ার কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংস্থাটির মহাসচিব কুমি নাইডু এক চিঠির মাধ্যমে অং সান সুচিকে এই খবর দিয়েছেন।
তিনি লিখেছেন, ‘আট বছর আগে গৃহবন্দী থাকা নেত্রী ক্ষমতা গ্রহণের পর তার রাজনৈতিক নীতি-আদর্শ, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার কথা ভুলে সামরিক বাহিনীর চালানো জাতিগত নিধনযজ্ঞ এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়ে ছিলেন উদাসীন।’
কুমি নাইডু চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, ‘সংস্থার একজন দূত হিসেবে সুচির কাছে প্রত্যাশা ছিল। শুধু মিয়ানমারের ভেতরে নয়, পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তের অবিচারের বিরুদ্ধে আপনি আপনার নৈতিক কর্তৃত্ব ও ভূমিকা রাখবেন কিন্তু আমরা গভীর দুঃখ ভারাক্রান্ত। কারণ আপনি আর আশা, সাহস এবং মানবাধিকার রক্ষার প্রতিনিধিত্ব করেন না। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল আপনাকে দেওয়া অ্যাম্বাসেডর অফ কনসায়েন্স সম্মাননা অব্যাহত রাখার কোন যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছে না।’
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, ‘অং সান সুচির নেতৃত্বে বেসামরিক সরকার মিয়ানমারের ক্ষমতায় আসার পর তার প্রশাসন একাধিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় সরাসরি জড়িত ছিল। গত বছর নিধনযজ্ঞ চলার সময় মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী হত্যা করেছে হাজারো মানুষ। ধর্ষিত হয়েছে অগণিত নারী ও শিশু, আটক ও নৃশংসতার হাত থেকে রেহাই পায়নি বৃদ্ধ, শিশু এবং কিশোরও। শতাধিক গ্রাম আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। নিরাপত্তা বাহিনীর অপরাধ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায় অস্বীকার করে অং সান সুচি ও তার দপ্তর তাদেরকে রক্ষা করেছেন।’
চিঠিতে সংস্থাটি জানায়, ‘রোহিঙ্গাদের পক্ষে অং সান সুচির দাঁড়ানোর ব্যর্থতাই এর মূল কারণ। ভয়ঙ্কর নিপীড়ন এবং নির্যাতনের এইসব ঘটনা অস্বীকার করে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, বাংলাদেশে কিংবা রাখাইন রাজ্যে অবস্থানরত লাখো রোহিঙ্গার জীবনমান উন্নয়নের বা পরিবর্তনের আশা ক্ষীণ। নৃশংসতা থামাতে ভবিষ্যতে সরকারের উদ্যোগ কেমন হতে পারে তা সহজেই বোঝা যায় যখন একটি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সংগঠিত অপরাধের কথা অস্বীকার করে রাষ্ট্রযন্ত্র।’
সেখানে বলা হয়, ‘সামরিক বাহিনীর বিস্তর ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও আইন তৈরি ও সংশোধনের বেশ কিছু ক্ষমতা ছিল বেসামরিক সরকারের হাতে। কিন্তু অং সান সুচির সরকার ক্ষমতা গ্রহণের দু’বছরের মাথায় মানবাধিকার কর্মী, শান্তিকর্মী ও সাংবাদিকদের হুমকি, ভয়, হয়রানি এমনকি কারাবরণও করতে হয়েছে।’
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, অং সান সুচি সাহায্য করুণ আর নাই করুন, মিয়ানমারে বিচার ও মানবাধিকার নিশ্চিত করার ব্যাপারে তারা তাদের লড়াই অব্যাহত রাখবে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর অভিযানের পর সেখান থেকে নতুন করে আরো সাত লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে পালিয়ে আসার ঘটনায় এর আগেও আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা সুচিকে দেওয়া তাদের খেতাব প্রত্যাহার করে নিয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে কানাডার পার্লামেন্টের দেওয়া সম্মানসূচক নাগরিকত্ব, ব্রিটেনের অক্সফোর্ড শহরের দেওয়া সম্মাননা, গ্লাসগো নগর কাউন্সিলের দেওয়া ফ্রিডম অফ সিটি খেতাবসহ আরো অনেক সম্মাননা। এই তালিকায় সর্বশেষ যুক্ত লন্ডনভিত্তিক সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
এরআগে জাতিসংঘও রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো দেশটির সেনাবাহিনীর অভিযানকে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যা বলে উল্লেখ করেছে এবং এই অপরাধের দায়ে দেশটির শীর্ষস্থানীয় জেনারেলদেরকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর আহবান জানিয়েছে।
ঢাকা টাইমস/১৩নভেম্বর/একে