ঠাকুরগাঁও-১

ফখরুলের ‘পরীক্ষা’, আ.লীগে একাধিক প্রার্থী

বদরুল ইসলাম বিপ্লব
 | প্রকাশিত : ১৩ নভেম্বর ২০১৮, ১০:৫৯

সারাদেশের যে কয়টি আসনে এবার নজর থাকবে, তার একটি উত্তরের জনপদ ঠাকুরগাঁও সদর। এখান থেকে ভোটে লড়বেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আসনটিতে বরাবর শক্তিশালী অবস্থান আওয়ামী লীগের। আর ১৯৯১ সালের পর অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে একবারই হারতে হয়েছে দলটিকে।

বিএনপি অবশ্য ফখরুলের পরিচিতি দিয়ে আসনটি নিজেদের করে নেয়ার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী। তবে আওয়ামী লীগ প্রত্যয়ী ঘাঁটি ধরে রাখায়।

স্বাধীনতার পর থেকে এই আসনে সিংহভাগ নির্বাচনেই জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে দলের বিভেদে সম্প্রতি বিভিন্ন স্থানীয় নির্বাচনে দলের প্রার্থীদের হার হয়েছে। আর একে সুযোগ হিসেবে দেখছে বিএনপি।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ২১টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন পোড়খাওয়া রাজনীতিক। তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীরও সদস্য।

তবে দলের একটি অংশ আবার প্রার্থিতা পাল্টানোর দাবি করছে। তারা বলছেন, নতুন মুখ দিলে আসনটি ধরে রাখা সহজ হবে। তারা প্রয়াত সংসদ সদস্য খাদেমুল ইসলামের ছেলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

তবে এবার রমেশ আবারও ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিন্তু কেন্দ্র কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে আভাস মিলছে তৃণমূলের বিভেদের। প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নেই নেতাকর্মীরা বিভক্ত। বিশেষ করে একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে জামায়াত নেতার ছেলেকে চাকরি দেয়াকে মানতে পারছেন না তারা।

রমেশ চন্দ্র অবশ্য কোন্দলের বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চান না। তিনি উন্নয়নের অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে আবার মনোনয়ন পেতে চান।

রমেশ বিরোধীদের সবচেয়ে বড় অভিযোগ, সংসদ সদস্য নেতাকর্মীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেন না। তার অবস্থান নিয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য খাদেমুল ইসলামের ছেলে সাহেদুল ইসলাম সাহেদের পক্ষে।

সাহেদের পরিবারের পক্ষ থেকে মাঠ পর্যায়ে আগাম জনসংযোগ শুরুও হয়ে গেছে। দলীয় মনোনয়ন ফরমও সংগ্রহ করেছেন।

আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘দলকে সংগঠিত করতে সাহেদকে মনোনয়ন দেওয়া উচিত।’

সাহেদুল ইসলাম জাপানে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেট অফিসের ডেপুটি কনসাল জেনারেলও কর্মরত ছিলেন।

মনোনয়নপ্রত্যাশী আরও আছেন। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অরুনাংসু দত্ত টিটোও মনোনয়ন চান। তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালে আমি সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেই। কিন্তু দলের ভেতরের ষড়যন্ত্রের কারণে এক লক্ষ ৭০ হাজার ভোট পেয়েও পরাজিত হই। সাধারণ মানুষের ভালোবাসা রয়েছে আমার প্রতি। মনোনয়ন পেলে আমি বিপুল ভোটে জয়ী হতে পারব।’

জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মকবুল হোসেন বাবুও বলেন, ‘দলের অনেক সুখ-দুঃখের সাথী আমি। আবার বাবা ফজলুল করিমও ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। ১৯৭০ ও ৭৩ সালে সংসদ সদস্যও হন। এসব বিবেচনায় আমি মনোনয়ন পাব বলে আশা করি।’

যুব মহিলা লীগের সভাপতি তাহমিনা আকতার মোল্লাহ বলেন, ‘মনোনয়ন হলো দলের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি। সেজন্য আমি আসন্ন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে ইচ্ছুক।’

বিএনপিতে একক প্রার্থী ফখরুল

অতীতের ইতিহাসে ভোটে পিছিয়ে থাকলেও বিএনপি অন্তত এক দিক থেকে স্বস্তি যে দলে কোনো কোন্দল নেই। বরং মির্জা ফখরুল ইসলামকে জিতিয়ে এতে তারা আসনটি দখলে নিয়ে নিতে চান।

বর্তমান সরকারের আমলে সদর উপজেলা ও পৌর নির্বাচনে বিএনপির জয়ে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে দলের।

জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর রহমানের দাবি, ‘বিএনপির অবস্থান শক্ত হওয়ায় তারা উপজেলা পরিষদ ও পৌর নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন। একাদশ জাতীয সংসদ নির্বাচনে নির্বাচনে লেভেল প্রেয়িং ফিল্ড ঠিক থাকলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বিপুল ভোটে জিতবেন।’

একই কথা বলেছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলও। তিনি বলেন, ‘যদি মিনিমান লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড পাওয়া যায়, তবে আমরা মির্জা ফখরুলকে জয়ের মালা পড়াব।’

জাপা নেতাও আগ্রহী

জাতীয় পার্টির জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রাজিউর রাজি স্বপনও এখান থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে চান। তিনিও জনসংযোগ শুরু করেছেন। বলেন, ‘এই অঞ্চলে বেশিরভাগ উন্নয়ন হয়েছে এরশাদ সরকারের সময়ে। দল আলাদা নির্বাচন করলে আমি মনোনয়ন পাব। আর বিপুল ভোটে জয়ের আশাও রাখি।’ কবে কে জিতেছেন

১৯৯১ সালে প্রথমবারের মতো ধানের শীষে প্রার্থী হয়ে নৌকা প্রতীকের খাদেমুল ইসলামের কাছে হেরে যান ফখরুল। ১৯৯৬ সালে খাদেমুল জিতেন আবার। তবে কমিয়ে আনেন ব্যবধান। এক বছরের মাথায় খাদেমুলের মৃত্যুর পর উপ নির্বাচনে রমেশ ৭৮ হাজার ২০৮ ভোট পেয়ে জিতেন।

আসনটিতে জামায়াতেরও ভোট আছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। ২০০১ সালে এই দলটির ভোট যোগ হওয়ার সুফল পান মির্জা ফখরুল। তিনি জিতে যান। তবে ২০০৮ সালে ফখরুল আবার বড় ব্যবধানে হারেন। সেবার রমেশ পান এক লাখ ৭৭ হাজার ১০১ ভোট। আর বিএনপি পায় এক লাখ ২০ হাজার ৪১১ ভোট।

ওই বছর রমেশ পান পানিসম্পদ মন্ত্রীর দায়িত্ব। তবে তার নানা কর্মকাণ্ডে দলের মধ্যে তৈরি হয় ক্ষোভ। রাজনীতিতে না থাকলেও ভাতিজা পার্থ সারর্থী সেনকে এপিএস পদে নিয়োগ দেন।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট নির্বাচনে অংশ নেয়নি। ব্যাপক সহিংসতা জোটের চার কর্মী এবং ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার মৃত্যুর পর ভোটে জিতেন রমেশ।

ঢাকা টাইমস/১৩ নভেম্বর/প্রতিনিধি/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

উপজেলা ভোটের মাঠে বিএনপির তৃণমূল নেতারা

উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ: বিএনপির ৬৪ নেতাকে শোকজ

ভোটের মাঠ থেকে স্বজনদের সরাতে পারেননি আ.লীগের মন্ত্রী-এমপিরা

দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে: বিএনপির আরও ৫ নেতা বহিষ্কার

সরকারকে পরাজয় বরণ করতেই হবে: মির্জা ফখরুল

এমপি-মন্ত্রীর স্বজন কারা, সংজ্ঞা নিয়ে ধোঁয়াশায় আ.লীগ

মন্ত্রী-এমপির স্বজনরা প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে ব্যবস্থা: ওবায়দুল কাদের

স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপির আরও এক নেতা বহিষ্কার 

দেশ গরমে পুড়ছে, সরকার মিথ্যা উন্নয়নের বাঁশি বাজাচ্ছে: এবি পার্টি

বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদ সালাম-মজনুর

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :