ফাঁসি হবে না বিশ্বাস ছিল আজমল কাসাভের

প্রকাশ | ১৩ নভেম্বর ২০১৮, ১৯:৩০ | আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৮, ১০:০৭

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

ভারতীয় আইনব্যবস্থা এমনই যে, কিছুতেই তার ফাঁসি হবে না। এমনটাই বিশ্বাস ছিল ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর মুম্বাইয়ে হামলার মূল সন্ত্রাসবাদী  লস্কর-ই-তাইয়েবার সদস্য আজমল আমির কাসাভের। যদিও সেই বিশ্বাস টলে গিয়েছিল ফাঁসির ঠিক আগের দিন। ওই হামলায় ১৬৬ জন নিহত এবং ৩০৮ জন আহত হয়েছিলেন।

ওই দিন তাকে ফাঁসি দেয়ার জন্য আর্থার রোড জেলের বিশেষ সেল থেকে ইয়েরওয়াড়া জেলে নিয়ে যেতে এসেছিলেন ২৬/১১ হামলার মূল তদন্তকারী কর্মকর্তা রমেশ মহালে।

হিন্দুস্তান টাইমসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে রমেশ জানিয়েছেন, ‘প্রথম বারের জন্য তখনই মৃত্যুভয় ফুটে উঠেছিল কাসাভের চোখেমুখে। অস্ফূট স্বরে সে বলে উঠেছিল, আপনারা জিতে গেলেন, আমি হেরে গেলাম। তারপরই একদম চুপ করে গিয়েছিল পাকিস্তান থেকে আসা এই কিশোর জঙ্গি।’ আজমল আমির কাসাভকে চার বছর ধরে জেরা করার এ রকমই নানান মুহূর্ত সামনে নিয়ে এলেন মুম্বাই পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চের তৎকালীন প্রধান রমেশ মহালে।

২৬/১১ হামলার সময়ই মুম্বাই পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চের প্রধান ছিলেন রমেশ মহালে। হামলার তদন্তের ভার ছিল তার হাতেই। কাসাভকে ধরার পর প্রথম ৮১ দিন তাকে নিজেদের কাছেই রেখেছিল ক্রাইম ব্রাঞ্চ। তারপরেই কাসাভকে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল আর্থার রোড জেলের বিশেষভাবে বানানো বুলেটপ্রুফ কারাগারে। প্রায় চার বছর ধরে কাসাভের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল রমেশ মহালের। বিভিন্ন সময় কাসাভের নানা মন্তব্য চমকে দিত তাকে। ক্রাইম ব্রাঞ্চে প্রায় দেড় মাস কাটানোর পর তার মন্তব্য ছিল, ‘ভারতীয় আইনব্যবস্থায় সহজে ফাঁসির সাজা দেয়া হয় না। মৃত্যুদ- ঘোষণা করার আট বছর পরও আফজাল গুরুর ফাঁসি দিতে পারেনি ভারত।’ ২০০৮ সালে এই কথা বলার সময় কাসাভের চোখেমুখে প্রত্যয়ের ছাপ ফুটে উঠত বলে জানাচ্ছেন রমেশ মহালে।

মাত্র ১৭ বছরের ওই কিশোরের বুদ্ধি অবাক করে দিত রমেশ মহালেকে, এমনটাই দাবি করেছেন তিনি। তদন্তের প্রথম দিনই তিনি বুঝে গিয়েছিলেন, সহজ রাস্তায় কাসাভের কাছ থেকে কথা বের করা যাবে না। তাই কাসাভের সঙ্গে আন্তরিক ব্যবহারের মাধ্যমে সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। এই উদ্দেশ্যে কাসাভকে দু’সেট জামাকাপড় উপহার দিয়েছিলেন তিনি।

উল্টোপাল্টা উত্তর দিয়ে কীভাবে কাসাভ তদন্তকারী অফিসারদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করত, সেই সবও সামনে এনেছেন মহালে। যেমন, আদালতে বয়ান দেয়ার সময় সে হঠাৎই এক দিন বলে, ‘আমি পাকিস্তানি নাগরিক। অমিতাভ বচ্চনকে দেখতে ভারতে এসেছি। অমিতাভের জুহু বাংলোর সামনে যখন দাঁড়িয়ে ছিলাম, তখনই আমাকে ধরে ফেলে ভারতীয় গোয়েন্দারা। তারপরেই আমাকে তুলে দেয়া হয় মুম্বাই পুলিশের হাতে। লকআপে ঢোকানোর আগে আমার হাতে গুলি করে পুলিশ। চার দিন পর  ২৬/১১  হামলার সঙ্গে ওরা আমাকে জড়িয়ে দেয়।’

২০১২ সালের ১১ নভেম্বর বিশেষ আদালতে ফাঁসির সাজা হয় কাসাভের। ১৯ নভেম্বর গভীর রাতে ওই জঙ্গিকে আর্থার রোড জেল থেকে ইয়েরওয়াড়া জেলে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব পড়েছিল রমেশ মহালের কাঁধেই।

কাসাভের কক্ষে গিয়ে এই ২১ বছরের বন্দিকে রমেশ বলেছিলেন, ‘কী বলেছিলে, মনে পড়ছে? চার বছর হতে এখনও সাত দিন বাকি। তার আগেই তোমাকে ফাঁসি দেয়া হবে।’

এরপরই প্রথম বারের জন্য কাসাভের মুখে মৃত্যুভয় দেখতে পেয়েছিলেন রমেশ মহালে। অস্ফুট স্বরে কাসাভ বলে উঠেছিল, ‘আপনি জিতে গেলেন, আমি হেরে গেলাম।’

২১ নভেম্বর সকালে পুনা যাওয়ার পথে সাড়ে তিন ঘণ্টার রাস্তায় একটিও কথা বলেনি সে। তার সব আত্মবিশ্বাস টলে গিয়েছিল সে দিন, এমনটাই দাবি রমেশের।

২১ নভেম্বরই ফাঁসি দেয়া হয় কাসাভকে। রমেশ মহালে আর কাসাভের চার বছরের যোগাযোগ শেষ হয়েছিল সে দিনই। কাসাভের ফাঁসি হয়েছে জানার পর স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছিলেন তিনি। এটা ছিল তার জীবনের অন্যতম সেরা খুশির মুহূর্ত, এমনটাই জানিয়েছেন ২০১৩ সালে অবসর নেয়া মুম্বাই পুলিশের এই তুখোর কর্মকর্তা।

(ঢাকাটাইমস/১৩নভেম্বর/এসআই)