দুশ্চিন্তার পেস বোলিং

হিমু আক্তার, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৬ নভেম্বর ২০১৮, ১৫:৩৭

ঘরের মাঠে শেষ হলো জিম্বাবুয়ে সিরিজ। নিজেদের প্রিয় ফরম্যাট ওয়ানডেতে দারুণ কাটালেও লাল বলের টেস্ট সিরিজটা ছিল অম্ল-মধুর। যদিও প্রাপ্তির খাতায় যোগ হয়েছে অনেক কিছু। মুশফিক-মাহমুদউল্লাহদের সেঞ্চুরি, তাইজুলের ক্যারিয়ার সেরা বোলিং, মিরাজের আত্মবিশ^াসী অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্স কিংবা বড় হারের বোঝা নিয়েও দারুণ ভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর জয়। এত প্রপ্তির মাঝেও যেটা চোখে পড়েছে- পেসারদের নখদন্তহীন বোলিং। এই যাত্রায় স্পিন দিয়ে রক্ষা মিললো। কিন্তু এভাবে কত দিন? সাদা-পোশাকে পরিনত হতে স্পিনের পাশাপাশি চাই শক্তিশালী পেস আক্রমণ।

জিম্বাবুয়েকে সহজ প্রতিপক্ষ ধরে নিয়ে প্রথম ম্যাচে এক পেসার নিয়ে খেলা হয়েছিল। যা নিয়ে নানা কথা উঠেছিল ভক্ত সমাজে। সে যাই হোক, একমাত্র পেসার হিসেবে তেমনটা জ¦লে উঠতে পারেননি সিলেটের আবু জায়েদ রাহী। দুই ইনিংসে ২৮ ওভার বোলিং করে ৯৫ রানের বিনিময়ে তার সংগ্রহ একটি কেবল একটি উইকেট। রং ছড়িয়েছে তাইজুল ইসলামের স্পিন। ৬৮ ওভার বোলিং করে ক্যারিয়ার সেরা ১১ উইকেট নিয়ে দারুণ ছন্দে ছিলেন এই স্পিনার। ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা আর দুর্বল বোলিংয়ে সেই টেস্টের পরিণাম ছিল ১৭ বছর পর জিম্বাবুয়ের কাছে ঘরের মাঠে ১৫১ রানের বড় হার।

হার দিয়ে শেষ হওয়া সেই টেস্টের পর ঢাকায় দ্বিতীয় ম্যাচে দলে ফেরানো হলো দেশসেরা পেসার মোস্তাফিজুর রহমানকে। সিলেটে ব্যর্থ রাহীর জায়গায় অভিষেক হলো পেস তারকা খালেদ আহমেদের। কিন্তু কি লাভ হয়েছে তাতে?

দীর্ঘ নয় মাস পর সাদা-পোশাকে ফেরা মোস্তাফিজের অন্তভুক্তিতেও নখদন্তহীন বাংলাদেশের পেস বিভাগ। দুই ইনিংস মিলিয়ে মাত্র ১ টি উইকেট নিয়েছেন ‘কাটার মাস্টার’। অভিষেক হওয়া খালেদের বলেও তেমন কিছু দেখা যায়নি। অভিষেক টেস্টে ৩০ ওভার বোলিং করে উইকেট শূন্য ছিলেন তিনি। যদিও ইকোনোমিতে সচেতন ছিলেন দুজনই।

বরং সিলেটে যে জায়গায় শেষ করলেন, সেই জায়গা থেকেই মিরপুর টেস্ট শুরু করলেন তাইজুল ইসলাম। প্রথম ইনিংসে নিজের হ্যাটট্রিক ৫ উইকেটের পাশাপাশি দ্বিতীয় ইনিংসে নিয়েছেন দুটি উইকেট। তাইজুলের পাশাপাশি বল হাতে দারুণ ছিলেন স্পিন অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ। প্রথম ইনিংসে ৩ নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে শিকার করেন পাঁচটি উইকেট।

খালেদ-মোস্তাফিজদের ব্যর্থতার পেছনে মিরপুরের উইকেটের আচরণ কিংবা সিলিটের শুকনো উইকেটকে কারণ হিসেবে খোঁজা হলেও প্রকৃতপক্ষে ঠিক কতটা সফল ছিলেন তারা? কারণ একই উইকেটে বাংলাদেশের নিস্তেজ পেস আক্রমণের ঠিক উল্টো পিঠে ছিলেন জিম্বাবুয়ে পেসাররা। দুই টেস্টে যেমনটা চোখে পড়েছে অতিথি পেসারদের দুর্দান্ত বোলিং। রান নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি দুই টেস্টে মোট ১০ টি উইকেট নিয়েছেন জিম্বাবুয়ে পেসার কাইল জার্ভিস। দ্বিতীয় টেস্টে চোটে পড়ে আর বোলিং করতে না পারা তেন্ডাই চাতারাও পেয়েছেন চারটি উইকেট। সেখানে বাংলাদেশি তিন পেসার দুই টেস্টের চার ইনিংস মিলে পেয়েছেন মাত্র ২ উইকেট!

ব্যাটসম্যান আর স্পিনারদের নৈপুন্যে সমতায় শেষ হলো জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। আগামী ২২ নভেম্বর টেস্ট দিয়ে ঘরের মাঠে শুরু হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ। জিম্বাবুয়ে থেকে অনেকগুন বেশি শক্তিশালী ক্যারিবীয় বোলারদের পেস বিভাগ। তাছাড়া গত জুলাইতে নিজেদের মাঠে বাংলাদেশকে দুই টেস্টেই বড় ব্যবধানে হারিয়েছিল তারা। আমেরিকায় হওয়া সেই সফরের প্রথম টেস্টে লাল-সবুজের জার্সীধারীদের এক ইনিংসে ৪৩ রানে অলআউট হওয়ার লজ্জাও দিয়েছিলেন শ্যানন গ্যাব্রিয়েল-জেসন হোল্ডাররা।

আশার কথা হলো, উইন্ডিজরা নিজেদের বাউন্সি উইকেটে দুর্দান্ত হলেও উপমহাদেশে তাদের রেকর্ড খুব একটা ভালো নয়। সম্প্রতি ভারতে এসে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে স্পিনে নাস্তানাবুদ হয়েছে হোল্ডার বাহিনী। বাংলাদেশ ক্যারিবীয়দের এই স্পিন দুর্বলতাকে কাজে লাগাতে পারে। আভাসটা ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের মুখেও শোনা গিয়েছে। জিম্বাবুয়ে সিরিজ শেষে উইন্ডিজ সিরিজ নিয়ে ভাবনার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের আগে আমরা টিম-ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে বসে চিন্তা করব যে আমরা কেমন উইকেট চাচ্ছি। ওদের দলও আমাদের দেখতে হবে। তবে আমাদের সুবিধা হচ্ছে, আমরা সবসময় যে স্পিন সহায়ক উইকেট তৈরি করি। হয়তো এবারও সে দিকেই যাব।’

স্পিন উইকেট আশা জাগালেও মাহমুদউল্লাহর মুখে শুনা গেল ক্যারিবীয় পেসারদের নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা। তবে নিজেদের সেরা স্কিল ব্যবহার করে ভালো খেলার লক্ষ্য অধিনায়কের। তার কথার প্রতিফলন কি টেস্ট সিরিজে দেখা যাবে?

সংবাদটি শেয়ার করুন

খেলাধুলা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :