মুসলিম ও সংখ্যালঘু হত্যা
কম্বোডিয়ার দুই শীর্ষ খেমার রুজ নেতার আমৃত্যু কারাদণ্ড
প্রকাশ | ১৬ নভেম্বর ২০১৮, ২১:৪০
কম্বোডিয়ার নৃশংস খেমার রুজ শাসনামলের শীর্ষ দুই নেতাকে গণহত্যা ও নৃশংসতার দায়ে এই প্রথম আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার এ রায় ঘোষণা করা হয়। খবর বিবিসি ও রয়টার্সের।
দোষীসাব্যস্ত দুজন হলেন দেশটির মাওবাদী সাবেক শাসক পল পটের ডেপুটি নুওন চে (৯২) এবং তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান খিউ সাম্ফান (৮৭)। তাদের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ সমর্থিত ট্রাইব্যুনালে মুসলিম ও ভিয়েতনামি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়।
এই রায় খেমার রুজ শাসকদের আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে গণহত্যা চালানোর অভিযোগের প্রথম আনুষ্ঠানিক রায়। এর আগে ২০১৪ সালে একই ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দোষীসাব্যস্ত করে খেমার রুজের এই দুই শীর্ষ নেতাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
১৯৭৫ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত এই সংক্ষিপ্ত সময়ে অত্যন্ত কৌশলে প্রায় ২০ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে বলা ধারণা করা হয়। তাদের মধ্যে অধিকাংশই খেমার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়।
শুক্রবার দ্য এক্সট্রাঅর্ডিনারি চেম্বারস ইন দ্য কোর্টস অব কম্বোডিয়া (ইসিসিসি) জানায়, খেমার রুজ ‘ব্রাদার নম্বর টু’ নুওন চে এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট খিউ সাম্ফানকে চ্যাম মুসলমান এবং ভিয়েনামিদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং গণহত্যা চালানোর অভিযোগে দোষীসাব্যস্ত করা হচ্ছে।
এই ট্রাইব্যুনালে এখন পর্যন্ত মাত্র তিনজন খেমার রুজ নেতাকে দোষীসাব্যস্ত করা হয়েছে। অন্যজন হলেন, কমরেড ডাচ। পল পটের ডেপুটি নুওন চে কম্বোডিয়ার মানুষের কাছে ‘ব্রাদার টু’ নামে পরিচিত ছিলেন।
‘ব্রাদার ওয়ান’ পল পটের নেতৃত্বে ১৯৭৫ সালের ১৭ এপ্রিল সেনাবাহিনীকে হটিয়ে খেমার রুজ গেরিলারা তৎকালীন কম্পুচিয়ার রাজধানী নমপেন দখল করে নেয়। নমপেন দখল করে পল পট সরকার মূলত কৃষি সংস্কারের নামে ভয়ংকর হত্যাযজ্ঞ চালায়। পল পট ১৯৯৮ সালে কম্বোডিয়ার জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় মারা যান। খেমার রুজের আনুষ্ঠানিক নাম ছিল কমিউনিস্ট পার্টি অব কাম্পুচিয়া (সিপিকে)।
২০১১ সালে কম্বোডিয়ার মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে খেমার রুজের বিরুদ্ধে গণহত্যা, যুদ্ধ অপরাধ এবং মানবতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে বিচার শুরু হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নাৎসিদের বিরুদ্ধে যে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছিল খেমার রুজদের বিরুদ্ধে চলমান বিচার প্রক্রিয়াকে তার চেয়ে জটিল বলে অনেকে অভিহিত করেছেন। নুওন চে এ বিচার প্রক্রিয়াকে প্রহসন বলে মন্তব্য করেছিলেন।
এ বিচার দেখার জন্য খেমার রুজ শাসকদের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়েছে।
খেমার রুজের শাসনামলে শহরগুলো খালি করে ফেলা হয়েছিল। কৃষিনির্ভর সমাজ বিনির্মাণে খেমার রুজের লক্ষ্য বাস্তবায়নে শহরের বাসিন্দাদের গ্রামে সমবায়ভিত্তিক কাজে নিয়োজিত করা হয়। তখন অনেকেই কাজ করতে গিয়ে মারা যান।
চার বছরের ভয়াবহ শাসনের সময় সম্ভাব্য শত্রু অনুমানে বুদ্ধিজীবী, সংখ্যালঘু, সাবেক কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদেরও হত্যা করা হয়।
(ঢাকাটাইমস/১৬নভেম্বর/এসআই)