ঐক্যফ্রন্টের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী ড. কামাল

এম গোলাম মোস্তফা
 | প্রকাশিত : ১৭ নভেম্বর ২০১৮, ০৯:১১

আগামী সংসদ নির্বাচনে জিততে পারলে কে হবেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে প্রধানমন্ত্রী ভোটের প্রচারে নামার আগেই বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। জোটের নেতাদের মুখে কুলুপ। তবে জোটের ভেতরের আলোচনা বলছে, ক্ষমতায় জিততে পারলে ড. কামাল হোসেনকেই প্রধানমন্ত্রী করা হতে পারে।

এই আলোচনার বিষয়টি ঢাকা টাইমসকে নিশ্চিত করেছেন ঐক্যফ্রন্টের একাধিক নেতা। তাদের মধ্যে আছেন বিএনপির একজন শীর্ষস্থানীয় নেতাও।

সংসদীয় গণতন্ত্রে প্রধান দলগুলো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলেও তাদের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী কে তার ইঙ্গিত দিয়ে রাখেন। কিন্তু ঐক্যফ্রন্টের ক্ষেত্রে এটি বোঝার উপায় নেই। ফ্রন্টে সবচেয়ে বড় দল বিএনপি। গত ১৩ অক্টোবর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর প্রধান নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন ড. কামাল হোসেন। ১ ও ৭ নভেম্বর দুই দফা সংলাপে বিএনপি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপে যায় কামাল হোসেনের নেতৃত্বে। ঐক্যফ্রন্টের সব কর্মসূচিতেও প্রধান অতিথি থাকেন ড. কামালই।

বিএনপির চেয়ারপারসন এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনের ভোটে দাঁড়ানোর যোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন আছে। আর নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতা না থাকলে তাদের কারও পক্ষে প্রধানমন্ত্রী হওয়াও সম্ভব নয়।

ঐক্যফ্রন্টের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী কে, সেই প্রশ্ন বারবার তুলছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। কিন্তু ফ্রন্টের নেতাদের মুখে কুলুপ।

শুক্রবার জাতীয় দৈনিকের সম্পাদকদের সঙ্গে ফ্রন্টের নেতাদের বৈঠকেও এই প্রশ্ন বড় হয়ে ওঠে। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বসে সিদ্ধান্ত নেবে জানিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান ঐক্যফ্রন্টের নেতারা।

তবে ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শীর্ষ নেতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘অবশ্যই কামাল হোসেন। দেশে এখন শান্তি নাই। অথচ আমরা শান্তির বাংলাদেশ চাই। কামাল হোসেন সেই শান্তি নিয়ে আসবেন। তিনি একজন ওয়ান্ডারফুল পারসন। বাংলাদেশের সৌভাগ্য যে তার মতো একজন লোক পেয়েছে।’

কামাল হোসেনের উদ্যোগে জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার সদস্য সচিব আ ব ম মোস্তফা আমিন একই প্রশ্নের জবাব দেন আরও সরাসরি। তিনি বলেন, ‘আমাদের ফ্রন্টে কামাল হোসেন সাহেব প্রধানমন্ত্রী হবেন।’

জোটের সবচেয়ে বড় দল বিএনপি তাদের কোনো নেতাকে বাদ দিয়ে কামাল হোসেনকে মেনে নেবে কি না এ নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন আছে। যদিও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার ইঙ্গিত দিয়েছেন, এটা মেনে নিতে তাদের আপত্তি নেই।

ঢাকা টাইমসকে সাবেক স্পিকার বলেন, ‘ঐক্যফ্রন্ট বিজয়ী হলে আমাদের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, সেটা সংসদ ঠিক করবে। ড. কামাল হোসেনকে প্রধানমন্ত্রী করা হলে আমাদের অসুবিধা কিছু নাই। পার্লামেন্ট যদি চায় কামাল হোসেন প্রধানমন্ত্রী হবেন, আমাদের বলার কিছু নাই। প্রধানমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন হতে পারেন।’ খালেদা-তারেক ‘অযোগ্য’

ঐক্যফ্রন্টের প্রধান দল বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে বলা যাচ্ছে না আইনি জটিলতার কারণে। দুর্নীতির দুই মামলায় দ-িত হওয়ায় তার ভোটে অংশ নেওয়াই অনিশ্চিত। কারণ, সংবিধান অনুযায়ী নৈতিক স্খলনজনিত কারণে দুই বছর দ-িত হলে দ- ভোগের পাঁচ বছর পর্যন্ত তিনি ভোটে আসতে পারবেন না। আর সংসদ সদস্য হতে না পারলে তার পক্ষে প্রধানমন্ত্রীও হওয়া হবে না।

খালেদা জিয়া উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে আসতে না পারলে তিনি ভোটে আসতে পারবেন নাÑএটি রিটার্নিং কর্মকর্তাদের জানিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে যে দুটি মামলায় বিএনপির নেত্রীর সাজা হয়েছে, সেগুলোতে আপিল করার প্রস্তুতি চলছে। তবে উচ্চ আদালত যে মামলায় তাকে ১০ বছরের সাজা দিয়েছে, সেটিতে আপিল করা যাবে কি না, সেটা নিশ্চিত নয়। কারণ, এই মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়নি। যদিও আইনজীবীরা চেম্বার জজ আদালতে আপিলের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

আর বিচারিক আদালতে সাত বছরের সাজার রায়ের অনুলিপি বিএনপি পেয়ে গেছে এবং সোমবারের মধ্যে আপিলের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। অবশ্য গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় আপিলের পর খালেদা জিয়ার দ- স্থগিত না করেই শুনানি হয়েছে উচ্চ আদালতে।

একই কথা প্রযোজ্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের ক্ষেত্রেও। তার পক্ষেও ভোটে দাঁড়ানো সম্ভব নয় দুর্নীতির দুই মামলায় দ-ের কারণে। ফলে তিনিও প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না।

ভোটে না দাঁড়ালেও সুযোগ আছে কামালের

ভোটে কখনো জিততে না পারা ড. কামাল হোসেন অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন, নির্বাচনে তার আগ্রহ নেই। একই সঙ্গে সরকার বা রাষ্ট্রীয় কোনো পদ পাওয়ার ইচ্ছা তার নেই। অবশ্য এটিই শেষ কথা, সেটিও বলার সুযোগ নেই। কারণ, আগামী নির্বাচনে নিজ প্রতীক উদীয়মান সূর্য নিয়ে ভোটে লড়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েও সিদ্ধান্ত পাল্টেছেন। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক ব্যবহার করবেন গণফোরামের প্রার্থীরাও।

আবার জামায়াত থাকলে বিএনপির সঙ্গে জোটে আসবেন নাÑএমন ঘোষণাও দিয়েছেন প্রকাশ্যেই। কিন্তু কথা রাখতে পারেননি। আর কেন জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধ বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক গড়লেন, সেই ব্যাখ্যাও দেননি এখন পর্যন্ত।

কামালের দল গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী এখনো বলছেন, ‘ড. কামাল হোসেন বয়স ও শারীরিক অবস্থার কারণে এই নির্বাচনে কোনো আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না।’

ভোটে না দাঁড়ালে কীভাবে প্রধানমন্ত্রী হবেন ড. কামালÑএই প্রশ্নে ঐক্যফ্রন্টের আ ব ম মোস্তফা আমিন বলেন, ‘সংসদ যদি তাকে প্রধানমন্ত্রী করে, তবে ছয় মাসের মধ্যেই কোনো আসন থেকে একজন পদত্যাগ করবেন। তারপর ওই আসন থেকে কামাল হোসেন সাহেব নির্বাচিত হয়ে আসবেন। এটাতে কোনো সমস্যা হবে না।’ সংবিধানের ৫৬(৩) অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘যে সংসদ-সদস্য সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন বলিয়া রাষ্ট্রপতির নিকট প্রতীয়মান হইবেন, রাষ্ট্রপতি তাঁহাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করিবেন।’

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সংখ্যাগরিষ্ঠ দল থেকে নির্বাচন করা হবে কে প্রধানমন্ত্রী হবেন। সংসদ সদস্য না হলেও প্রধানমন্ত্রী হতে সমস্যা নেই। তবে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাকে নির্বাচন করে আসতে হবে। এ ব্যাপারে আইনে কিছু নেই, তবে এটি সংসদীয় ব্যবস্থার অনুশীলন।’

ভোটে দুর্বল কামালের গণফোরাম

ড. কামাল প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আলোচনায় থাকলেও তার দল গণফোরামের জনভিত্তি নেই বললেই চলে। ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো অংশ নিয়ে দলটি প্রার্থী দেয় ১০৪ আসনে। জামানতের টাকা ফেরত পাননি কেউ। সব মিলিয়ে উদীয়মান সূর্যে ভোট পড়ে ৫৪ হাজার ২৫০টি, যা প্রদত্ত ভোটের ০.০৯৫ শতাংশ।

২০০১ সালে ধানমন্ডি-মোহাম্মদপুর আসন থেকে ছয় হাজার ১৮৭ ভোট পেয়ে জামানত হারানোর পর জনতার মন জয়ের লড়াইয়ে ক্ষ্যান্ত দেন ড. কামাল।

ফ্রন্টের আরেক শরিক জেএডির অবস্থাও একই রকম। তাদের ভোট এতটাই নগণ্য যে সেটি গুরুত্বের মধ্যে পড়ে না। আর নাগরিক ঐক্য কখনো ভোটে দাঁড়ায়নি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :