সচেতনতায় কমেছে উপকূলীয় অঞ্চলে মৃত্যুহার

চিন্ময় কর্মকার, পটুয়াখালী
 | প্রকাশিত : ১৭ নভেম্বর ২০১৮, ০৯:১৬

ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকা উপকূলের মানুষ এখন অনেকটাই সচেতন। ঝড়-বাদলের খবর পেলেই নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়াসহ জানমাল রক্ষায় বিভিন্ন প্রস্তুতি নেন আজন্ম সংগ্রামী মানুষগুলো।

২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর রাতে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডর আঘাত হানে উপকূলীয় জেলাগুলোতে। জলোচ্ছ্বাসে প্রাণ যায় মানুষ ও গবাদিপশুর। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফসলি জমি, ল-ভ- হয়ে যায় উপকূলীয় জনপদ। এরপর থেকে জনসচেতনতা ও সরকারি উদ্যোগে উপকূলীয় অঞ্চলে কমছে প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৃত্যুর হার কমছে বলে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী জানান, দুর্যোগের ক্ষতি কমাতে আপদকালীন পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ফলে এখন আর দুর্যোগ এলেও আগের মতো প্রাণহানি হয় না।

সরকারি হিসেব অনুসারে, সুপার সাইক্লোন সিডর শুধুমাত্র পটুয়াখালীতেই কেড়ে নেয় ৪৬৬ জন মানুষের প্রাণ। আহত হন সাড়ে আট হাজার ও নিখোঁজ হন আরও অর্ধশতাধিক মানুষ। আহতদের মধ্যে দুই হাজার মানুষ এখনো পঙ্গু। বিধ্বস্ত হয় ৫৫ হাজার ঘরবাড়ি, দেড় হাজার মসজিদ-মন্দিরসহ ৩৫১টি স্কুল ও কলেজ। নষ্ট হয়ে যায় প্রায় পাঁচ লাখ একর ফসলি জমি, মারা যায় ১৮ হাজার গবাদিপশু। ৪১২টি ড্রেনেজ, স্লুইস বিধ্বস্ত হয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় এক হাজার ২০৯ কিমি বেড়িবাঁধও।

এর আগে ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলায় আটজন মানুষের মৃত্যু হয়। ২০১৩ সালের ১৬ মে ঘূর্ণিঝড় মহাসেনে প্রাণ হারান তিনজন। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২১ মে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুতে একজন মানুষের প্রাণহানি ঘটে। এ ছাড়াও ২০০৮ সালের ৩ মে নার্গিস, ২০১৪ সালের ২৮ অক্টোবর নিলোফার, ২০১৭ সালের ৩০ মে ঘূর্ণিঝড় মোরা আঘাত হানে। গত ১১ অক্টোবর সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় তিতলি আঘাত হানে ভারতের ওড়িশা ও অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যে।

মৃত্যুর এ সংখ্যা কমাই প্রমাণ করছে, উপকূলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রাণঘাতী বৈশিষ্ট্য কমছে।

তবে উপকূলে একের পর এক দুর্যোগ আঘাত হানলেও আজও উপকূলবাসীর জন্য টেকসই বেড়িবাঁধ কিংবা পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র নির্মিত হয়নি। ফলে এখনো এখানকার মানুষ মৃত্যুঝুঁকি নিয়েই বসবাস করেন। ঝড় কিংবা ঘূর্ণিঝড় এলেই মৃত্যু তাদের তাড়িয়ে বেড়ায়।

মির্জাগঞ্জের চরখালী এলাকার বাসিন্দা করিম মিয়া বলেন, ‘সিডরের সময় এলাকায় বেড়িবাঁধ ছিল না। তাই হালের গরু মারা গেছে। এখন পর্যন্ত গরু কিনতে পারিনি। সিডরের ১২ বছর পরেও এলাকায় কোনো বেড়িবাঁধ নেই। সরকারের কাছে দাবি, আমাদের কিছুর প্রয়োজন নেই, শুধু বেড়িবাঁধ দেন।’

বাউফলের চন্দ্রদীপ এলাকার বাসিন্দা শামছু ফকির বলেন, ‘সিডরে আমার চার মেয়েকে হারিয়েছি।’

মেয়েদের স্মরণে কান্নায় ভেঙে পড়ে এই ভয়াবহ সাইক্লোন সিডরের কথা জীবনেও ভুলতে পারবেন না বলেও জানান তিনি।

পটুয়াখালী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বশির আহম্মেদ হাওলাদার জানান, দুর্যোগকালীন সময়ে আবহাওয়ার বুলেটিন সব টেলিভিশন, প্রিন্ট, অনলাইন মিডিয়ার পাশাপাশি সব মোবাইল অপারেটর বাংলায় এসএমএসের মাধ্যমে মানুষের কাছে পাঠালে প্রাণহানি শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে।

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম আব্দুল আহাদ বিশ্বাস বলেন, ‘উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং সেগুলো অভিযোজনের মাধ্যমে আমরা দুর্যোগ মোকাবেলা করতে পারি।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

সংরক্ষিত আসনের এমপিদের মধ্যেও সংখ্যায় এগিয়ে ব্যবসায়ীরা: সুজন

মানবাধিকার ও ভোক্তা অধিকার রক্ষায় গণমাধ্যমের ভূমিকা জরুরি: ড. কামাল উদ্দিন

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে রেলকে গড়ে তুলতে হবে: রেলমন্ত্রী

ইভ্যালির রাসেল-শামিমার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার

জিম্মি নাবিকদের মুক্তির আলোচনা অনেকদূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ডিএনসিসি কার্যালয় সরানোর মধ্য দিয়ে কারওয়ান বাজার স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু 

বিএসএমএমইউ উপাচার্যের দায়িত্ব নিলেন দীন মোহাম্মদ, বললেন ‘কোনো অন্যায় আবদার শুনব না’

সাত বিভাগে ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে

বাংলাদেশে মুক্ত গণতন্ত্র বাস্তবায়নে সমর্থন অব্যাহত থাকবে: যুক্তরাষ্ট্র

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :