‘উপরে ঠনঠন বিত্তে পেক’

সৈয়দ রশিদ আলম
 | প্রকাশিত : ১৮ নভেম্বর ২০১৮, ১২:০৯

১৬.১২.২০১৪, ভালুকা, ময়মনসিংহ, একটি বিয়ের অনুষ্ঠান। পাত্রের সামনে কয়েক পদের পিঠা রাখা হয়েছে। কয়েকজন শ্যালিকা তাদের প্রিয় দুলাভাইকে ময়মনসিংহের আঞ্চলিক ভাষায় জিজ্ঞেস করছেন, ‘উপরে ঠনঠন বিত্তে পেক, বুদ্ধি থাকলে খুইল্যা দেক, কইতারবাইন জিনিসটা কী?’ বেচারা জামাই বাবু এই ধাঁধাঁর উত্তর দিতে পারেন নাই, কিন্তু তারপরও তার সামনে কয়েক পদের পিঠা রাখা হলো। প্রথমে জামাই বাবু খুদির পিঠা খেলেন। ঢেকিতে ধান ভাঙার পর যে চালগুলো ভেঙে যায় সেই ভাঙা চাল গুলোকে খুদি বলা হয়। যদিও এই পিঠা বর্ষাকালে বেশি তৈরি হয়, কিন্তু তারপরও নতুন জামাইকে শীতকাল হলেও তার সামনে দেয়া হয়। এই পিঠার কদর ১২ মাসই ময়মনসিংহ অঞ্চলে রয়েছে। ময়মনসিংহের নারীর এই পিঠা তৈরি করতে যথেষ্ট দক্ষ। এই পিঠায় খুদি, পেঁয়াজ, মরিচ, লবণ ও সামান্য জিরা গুঁড়া দিয়ে মাখিয়ে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখা হয়। তারপর একটি চুলার ওপর মাটির পাত্রে কলাপাতা দিয়ে বিচিয়ে তাতে মেশানো উপরকণগুলো ঢেলে দিয়ে আর একটা কলাপাতা উপরে দিয়ে ঢাকনা দিয়ে ভেঙে দেয়া হয়। পাত্রটির মুখ আর মৃদু আঁচে দেয়া হয় চুলার তাপ। কিছুক্ষণ পর তৈরি হয়ে যায় মুখরোচক খুদির পিঠা।

বাংলাদেশের সব জেলাতেই পিঠা তৈরি হলেও বৃহত্তর বরিশাল, বৃহত্তর ময়মনসিংহ ও গাজীপুরে সবচাইতে বেশি শীতের সময় পিঠা তৈরি করা হয়। ধনী, দরিদ্র সবার বাড়িতে নানা পদের পিঠা তৈরি করা হয়। বাংলাদেশে হাজার বছরের ইতিহাস পাঠ করলে দেখতে পাবেন আমাদের সাংস্কৃতির সাথে পিঠাও জড়িয়ে আছে।

পিঠা শীতকালের খাবার হিসেবে পরিচিতি পেলেও এখন প্রায় ১২ মাসই পিঠা তৈরি হচ্ছে। উচ্চ বিত্ত সমাজ থেকে দরিদ্র সমাজ পর্যন্ত সবার কাছেই পিঠার কদর রয়েছে। পিঠা তৈরি করতে সাধারণত চালের গুঁড়া, আটা, ময়দা, চিনি বা গুড়ের প্রযোজন হয়। কখনও বা খেজুরের রসেরও প্রয়োজন হয় পিঠা তৈরি করতে। পিঠা স্বাদে মিষ্টি হলেও কখনও ঝাল, টক হতে পারে। আমাদের দেশে কয়েকটি বহুল জনপ্রিয় মুখরোচক পিঠা হলো, ভাপা পিঠা, ছাচ পিঠা, ছিটকা পিঠা, আশকে পিঠা, চুটকি পিঠা, চাপড়ি পিঠা, চাঁদ পাকন পিঠা, ছিট পিঠা, সুন্দরী পিঠা, কুলি পিঠা, পাতা পিঠা, পাটিসাপটা পিঠা, মেরা পিঠা, মালই পিঠা, মুচি পিঠা, কাটা পিঠা, কলা পিঠা, খেজুরের পিঠা, গোকুল পিঠা, গোলাপ ফুল পিঠা, রসফুল পিঠা, জামদানি পিঠা, হাঁড়ি পিঠা, ঝালপোয়া পিঠা, ঝুড়ি পিঠা, ঝিনুক পিঠা, সূর্যমুখী পিঠা, নকশী পিঠা, নারিকেল ভাজা পিঠা, তেজপাতার পিঠা, সন্দেশ পিঠা, ঝিকিমিকি পিঠা, কুল পিঠা, কুলঝুড়ি পিঠা, বিবিয়ানা পিঠা। এরকম শত শত পিঠার নাম বলা যাবে, যা গ্রাম বাংলায় শীত এলেই তৈরি হয়। গ্রামের যে বাড়িতেই যাবেন আপনাকে পিঠা দিয়ে আপ্যায়িত করা হবে। এটিই বাংলার চিরন্তন ঐতিহ্য। অতিথিকে শীতের সময় কিছু দেওয়া হোক বা না হোক প্রথমেই পিঠা দিয়ে আপ্যায়িত করা হয়। এই শীতে যারা পিঠা খেতে ইচ্ছুক, তারা গ্রামের বাড়িতে ঘুরে আসতে পারেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :