দেশ ছাড়ছেন ভেনেজুয়েলার সুন্দরীরা

প্রকাশ | ১৮ নভেম্বর ২০১৮, ১৯:৫৫

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

দেশের অর্থনীতি ক্রমশ দুর্বল হওয়ার কারণে ভেনেজুয়েলা ছাড়ছেন দেশটির একাধিক নারী৷ ‘মিস ভেনেজুয়েলা'-র মতো প্রতিযোগিতার হাত ধরে যে নারীরা এতদিন কর্মসংস্থান পেতেন, অর্থনীতির পতনের ফলে সেই সুযোগ হারিয়ে যাওয়ায় দেশ ছাড়ছেন তারা৷

ডয়েচে ভেলে জানায়, আসন্ন ‘মিস ইউনিভার্স' প্রতিযোগিতায় চিলির প্রতিনিধিত্ব করবেন বছর ২৬ বছর বয়সী আন্দ্রেয়া ডিয়াজ৷ আন্দ্রেয়ার জন্ম ভেনেজুয়েলার শহর ভালেন্সিয়াতে হলেও প্রথমে পানামা ও পরে মেক্সিকো হয়ে চিলিতে আসেন তিনি৷ আপাতত সেখানেই তার বসবাস৷ কিন্তু যে দেশের মাটিতে প্রথম ব়্যাম্পে হাঁটতে শেখেন আন্দ্রেয়া, সেই ভেনেজুয়েলায় মডেলের চাহিদা কমতে থাকায় দেশত্যাগ করেন তিনি৷

কারাকাস শহরের রেডিও সঞ্চালক রাফায়েল ব্রিসেনোর মতে, নব্বইয়ের দশক থেকেই ভেনেজুয়েলায় বাড়তে থাকে সৌন্দর্য্য প্রতিযোগিতার চল৷ বিশেষ করে ‘মিস ভেনেজুয়েলা' শিরোপায় অংশগ্রহণে বাড়ে অল্পবয়সী নারীদের আগ্রহ৷

শুধু তাই নয়, মিস ইউনিভার্স, মিস ওয়ার্ল্ড বা মিস আর্থ-এর মতো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ভেনেজুয়েলার জয়যাত্রা অব্যাহত থাকার ফলে, বিভিন্ন সৌন্দর্য্য প্রতিযোগিতা হয়ে ওঠে নারীদের কর্মসংস্থানের নির্ভরযোগ্য উপায়৷

এই প্রতিযোগিতার মঞ্চ থেকেই উঠে আসেন বহু মডেল, অভিনেত্রী, টেলিভিশন সঞ্চালিকা থেকে মেয়র বা রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীও৷

কিন্তু গত কয়েক বছরে ভেনেজুয়েলার অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থা৷ প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ খাদ্যাভাব ও মুদ্রাস্ফীতি এড়াতে অন্য দেশে বাসা বাঁধছেন৷ অন্যান্য শিল্পের মতোই এতে ক্ষতিগ্রস্ত সৌন্দর্য্য জগতও৷ ফলে একের পর এক সুন্দরীরা পাড়ি দিচ্ছেন মেক্সিকো, কোলোম্বিয়া বা পর্তুগালে৷

সোশ্যাল মিডিয়া থেকে জানা গেছে, জীবিকার খোঁজে এই নারীরা পাড়ি দিয়েছেন তুরস্ক বা ভারতের মতো দূরের দেশগুলিতেও৷

আগামী মাসে অনুষ্ঠিত হতে চলা ‘মিস ওয়ার্ল্ড' প্রতিযোগিতায় পর্তুগালের হয়ে মঞ্চে নামবেন এক ভেনেজুয়েলান নারী৷ এই প্রবণতার চিত্র আগেও ‘মিস আর্থ' প্রতিযোগিতায় দেখা গেছে যখন পেরু ও স্পেন, দুই দেশেরই প্রতিনিধিত্ব করেন দুই ভেনেজুয়েলান নারী৷

পেরুর প্রতিনিধি জেসিকা রুসো বলেন, ‘দেশ ছেড়েছি বলে সৌন্দর্য্য প্রতিযোগিতার স্বপ্ন আমি ছাড়িনি৷ আমার বয়স কম৷ আমি ভবিষ্যতে সারা বিশ্বের ভালো হয় এমন কোনো কাজ করতে চাই।’

অনেকে যদিও এই সৌন্দর্য্য প্রতিযোগিতাকে দেখছেন নারীর পণ্যায়ন হিসাবে, নারীদের রোজগারের নির্ভরযোগ্য উপায় হওয়ার কারণে এই সমালোচনা সেভাবে ভেনেজুয়েলার সাধারণ মানুষের কাছে গৃহীত হয় না৷

শুধু অর্থনৈতিক পতন নয়৷ সুন্দরী নারীদের দেশত্যাগের পেছনে রয়েছে আরো একটি কারণ৷ ভেনেজুয়েলায় থাকাকালীন আন্দ্রেয়া একটি ত্বক পরিচর্যা কেন্দ্রে যান৷ পরে দেখা যায়, পরিচর্যার বদলে তার মুখে দেখা দিয়েছে ফুসকুড়ি৷ ফলে কমতে থাকে মডেল হিসেবে ভেনেজুয়েলায় তার কাজের সুযোগ৷

নারীর সৌন্দর্য্যের মান কেমন হবে, সে বিষয়ে ভেনেজুয়েলার সৌন্দর্য্য শিল্পের অন্দরমহলে বাস করে কিছু বাঁধাধরা চিন্তা বা স্টিরিওটাইপ, যা ভাঙতে অক্ষম হলে নারীরা অন্য দেশে আশ্রয় নেন৷ অবশ্য চিলিতে আসার পর আন্দ্রেয়ার এই সমস্যা সমাধান হয়েছে৷ এখানে উন্নত মেকআপের ফলে সহজেই ঢেকে নিতে পারেন তিনি ত্বকের সব খুঁত৷

দুর্বল অর্থনীতি বা সামাজিক চাপ – একাধিক সমস্যার সম্মুখীন হয়ে ভেনেজুয়েলা ত্যাগ করছেন সেই দেশের উঠতি তারকারা৷ এতে সেই দেশের শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হলেও শেষ পর্যন্ত লাভবান হচ্ছে অন্যান্য দেশের সৌন্দর্য্য বাণিজ্য৷

(ঢাকাটাইমস/১৮নভেম্বর/এসআই)