সাইপ্রাসে রিফিউজিদের জন্য আইন-কানুন

প্রকাশ | ১৮ নভেম্বর ২০১৮, ২০:১০

মাহাফুজুল হক চৌধুরী, সাইপ্রাস

প্রথমেই জানিয়ে রাখি রিফিউজি কি? রিফিউজি হচ্ছে যারা স্বদেশ ত্যাগ করে অন্যদেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ে বা দেশের সংকটাপন্ন অবস্থা দেখিয়ে সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে চায়- তাদের রিফিউজি বলে। রিফিউজি অনেক প্রকারের হয়ে থাকে। যেমন- কেউ সাইপ্রাসে বাই-রোডে বা অন্যকোন দেশ হতে অবৈধভাবে ঢুকেছে তাকেও রিফিউজি বলে।

আবার অনেকেই ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় এসে মালিকের সাথে কাজ আর কথায় মিল না থাকায় অবৈধ হয়ে যায় বাধ্য হয়ে। তারাও রিফিউজির আবেদন করেন। আবার অনেকেই দীর্ঘদিন যাবত সাইপ্রাসে বৈধ থেকে শেষে এসে রিফিউজি হিসেবে থাকতে চান।

এইবার জেনে নিই, রিফিউজি আবেদন করার নিয়ম-কানুন এবং এর কি সুযোগ-সুবিধা আছে।

প্রথমেই আবেদনকারীকে ইমিগ্রেশন অফিস অথবা থানায় গিয়ে পুলিশের কাছে বলতে হবে, সে রিফিউজি আবেদন করতে চায়।

এরপর থানায় তাকে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে (রেজিস্ট্রেশন সম্পূর্ণ ফ্রি)। তারপর থানা থেকে তাকে একটা তারিখ দেবে ইমিগ্রেশনে যাওয়ার জন্য।

দ্বিতীয় ধাপে তাকে ওই তারিখ বরাবর ইমিগ্রেশনে যেতে হবে। এইবার ইমিগ্রেশন তার ফিঙ্গার ফ্রিন্ট নেবে। তারপর তার ছবিসহ মেডিকেল রিপোর্ট

জমা দিতে হবে ইমিগ্রেশন অফিসে। এরপর ইমিগ্রেশন থেকে তাকে একটা এলিয়েন রেজিস্ট্রেশন বুক দেবে।

তারপর আবারো তারিখ দেবে ইন্টারভিউ নেয়ার জন্য। এটা সাধারণত দুই থেকে তিন মাসের ভেতর ইন্টারভিউ নিয়ে নেয়।

তৃতীয় ধাপে তাকে ওই তারিখ বরাবর আবার যেতে হবে ইমিগ্রেশনে ইন্টারভিউ দেয়ার জন্য। ইন্টারভিউতে মূলত জিজ্ঞেস করা হয় কি সমস্যা, কেন সে সাইপ্রাস থাকতে চাই- এসব ব্যাপারে। ইন্টারভিউ শেষে দুই থেকে তিন মাসের ভেতর রেজাল্ট দিয়ে দেয়।

রেজাল্ট আসে তারা বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইন্ডিয়াসহ দক্ষিণ এশিয়ার কোন দেশের কারো রিফিউজি ফাইল

গ্রহণ করে না। সবগুলো বাতিল করে দেয়। একমাত্র সিরিয়া, ফিলিস্তিনিদের রিফিউজি ফাইল গ্রহণ করে।

চতুর্থ ধাপে ফাইল বাতিল হওয়ার বিশ দিনের মধ্যে আবারো আপিল করা যায়। আপিলের এক-দুই মাসের ভেতর আবারো রেজাল্ট আসে, আবার ফাইল বাতিল হিসেবে গণ্য করা হলো।

পঞ্চম ধাপে আবারো সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা যায় আড়াই মাসের মধ্যে। এরপর আবারো রেজাল্ট আসে ফাইল বাতিল। এরপর আর আবেদন করার সুযোগ নেই। সব মিলিয়ে সবগুলো প্রক্রিয়া শেষ হতে সময় লাগে সর্বোচ্চ বছরখানেক। এরপর দেশ ছাড়ার নোটিশ দিয়ে দেয় সাইপ্রাস সরকার।

আরেকটি বিষয় জানিয়ে রাখি- তা হলো- ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশেই একই নিয়মে রিফিউজি আবেদন হয়। অন্যান্য দেশগুলোতে এশিয়ানদের ফাইল টিকলেও সাইপ্রাসে কোন সুযোগ নেই। আর ইউরোপের যে কোন একটি দেশে যদি একবার রিফিউজি ফাইল বাতিল হয়ে যায়, তাহলে সেটা ইউরোপের ২৭টি দেশেই তা রেকর্ড হয়ে যায়। এক দেশে ফাইল রিজেক্টেড হলে সেটা সব দেশেই রিজেক্ট হয়ে যায়। আর কোন দেশেই গিয়ে রিফিউজি আবেদন করার সুযোগ নেই।

রিফিউজি আপিল করতে সাইপ্রাসে কেমন খরচ হতে পারে?

সাইপ্রাসের আইনে উল্লেখ থাকে যে, রিফিউজি আবেদনের সবগুলো প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ ফ্রি।

একমাত্র সুপ্রিম কোর্টে আপিলের জন্য ব্যক্তিগত উকিল নিয়োগে ৫০০-৮০০ ইউরোর মত খরচ হতে পারে।

এছাড়াও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানিয়ে রাখি- বর্তমানে তুর্কি দখলকৃত সাইপ্রাস হয়ে অসংখ্য অবৈধ বাংলাদেশি গ্রিক সাইপ্রাস ঢুকে রিফিউজি আবেদন করছেন। প্রকৃতপক্ষে এগুলো মিথ্যা শান্ত্বনা ছাড়া আর কিছুই নয়।

রিফিউজিদের কোন ভবিষ্যৎ নেই বললেই চলে বর্তমান সাইপ্রাসে।

এই লেখায় আমাকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন সাইপ্রাসে বসবাসরত সিনিয়র বাংলাদেশি সিটিজেন এ. কে. এম শামীম ফয়সাল।

সাইপ্রাস ইমিগ্রেশনের কর্মকর্তা হিসেবে তিনি ২০০৪ সাল থেকে সাইপ্রাস স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রিফিউজি বিভাগের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

(ঢাকাটাইমস/১৮নভেম্বর/এলএ)