ত্রিশালে আ.লীগ না জাতীয় পার্টি?

প্রকাশ | ১৮ নভেম্বর ২০১৮, ২১:১০

আজহারুল হক, ময়মনসিংহ

ময়মনসিংহ ৭ আসনে বিএনপির বিপরীতে মহাজোটের প্রার্থী কে এই বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি এখনও। গত সংসদ নির্বাচনে আসনটি থেকে আওয়ামী লীগের ছাড়ে জেতা আবদুল হান্নান মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কারাগারে। জাতীয় পার্টি চাইছে দলের অন্য কাউকে প্রার্থী করতে, কিন্তু আওয়ামী লীগ এবার সেখানে নিজের প্রার্থী চায়।

একটি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ আসনটিতে তিন দলেরই সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা সক্রিয়। এখানে ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ৭ হাজার ৩৩৮ জন।

১৯৯১ সালে বিএনপি জিতলেও এরপর অংশগ্রহণমূলক আর কোনো নির্বাচনে এখান থেকে ধানের শীষের প্রার্থী জিততে পারেননি। আর গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ছাড় পেয়ে জেতেন জাতীয় পার্টির হান্নান।

তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ অন্তর্দ্বন্দ্বে অন্তত চারভাগে বিভক্ত। তবে মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা আরও বেশি। বিএনপিতেও রয়েছে কোন্দল। জাতীয় পার্টিরও আসনটিতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ভোট আছে।

১৯৯১ সালে এখান থেকে পাঁচশ ভোটের ব্যবধানে জেতেন বিএনপির এমএ খালেক। তবে ৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে বিএনপি সেখানে তৃতীয় হয়। জেতে আওয়ামী লীগ। ২০০১ সালেও আসনটি ধরে রাখে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল। বিএনপি তখন দ্বিতীয় হলেও ভোটের ব্যবধান ছিল ২৫ হাজারের বেশি। ২০০৮ সালেও বিপুল ব্যবধানে জেতে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগে দৌড়ে ১৬ জন

তবে ১৯৯১ থেকে প্রায় প্রতিটি নির্বাচনে এখানে আওয়ামী লীগ আসন পাল্টেছে। ৯৬ সালে জেতেন রুহুল আমীন মাদানী, ২০০১ সালে জেতেন আবদুল মতিন, ২০০৮ সালে জয় পান রেজা আলী। ২০১৪ সালে রেজা আলীকে মনোনয়ন দিলেও পরে প্রত্যাহার করিয়ে নেয়া জয় জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিতে।

এই তিন সাবেক সংসদ সদস্যই এবার মনোনয়ন পাওয়ার আশায় মাঠে চষে বেড়াচ্ছেন। আর তাদের তিন জনকে ঘিরে দলে আছে তিনটি ধারা। এদের বাইরে পৌরসভার দুই বারের মেয়র এবিএম আনিছুজ্জামান আনিছও দলীয় মনোনয়ন পেতে কাজ করে যাচ্ছেন। যদিও দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা জানিয়ে দিয়েছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিজয়ী কাউকে তিনি প্রার্থী করবেন না এবার।

দলের কেন্দ্রীয় উপ কমিটির সদস্য নুরুল আলম মিলন পাঠানও নেতাকর্মীদের মধ্যে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করেছেন। চালিয়ে যাচ্ছেন প্রচার।

আরও আছেন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম জুয়েল সরকার, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এ এন এম শোভা মিয়া আকন্দ, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নবী নেওয়াজ সরকার, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি জালাল উদ্দীন খান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জিয়াউল হক সবুজ, আশরাফুল ইসলাম ম-ল, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক মহাব্যবস্থাপক এম হাবিবুর রহমান খান, আওয়ামী লীগ নেতা ছাইফুল ইসলাম মানিক, যুবলীগ নেতা শাহিন পারভেজ লিটন, সাংবাদিক শরিফ তালুকদার ।

বিএনপিতে যারা

দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ত্রিশাল উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাহবুবুর রহমান লিটন ২০০৮ সালে ধানের শীষ প্রতীক পান আসনটি থেকে। এবারও তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। তার মনোনয়ন অনেকটা নিশ্চিত দাবি করছেন তার অনুসারীরা।

লিটন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমি মনোনয়ন পেলে ধানের শীষের জয় নিশ্চিত করব।’
বিএনপিতে মনোনয়নপ্রত্যাশী অন্যরা হলেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন, ময়মনসিংহ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শহিদুল ইসলম খসরু, উপজেলা যুবদলের  সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম আমিন সরকার এবং সাবেক ছাত্রনেতা শাহাবুল ইসলাম।

জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘আমি দলের দুঃসময়ে হাল ধরেছি। জনগণের আস্থা, বিশ্বাস আর ভালোবাসায় তাদের উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। আমার দাবি থাকবে। তবে দল যাকে মনোনয়ন দেবে দলের স্বার্থে তার পক্ষেই কাজ করব। ’

প্রার্থী পাল্টাতে হচ্ছে জাতীয় পার্টিকে

আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য শরিক জাতীয় পার্টিও আসনটি ধরে রাখতে চাইছে। দশম সংসদ নির্বাচনে জয়ী এমএ হান্নান মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার থাকায় অন্য প্রার্থী দিতে চাইছে তার দল।

প্রার্থী হিসেবে জেলা জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি কে আর ইসলাম উঠান বৈঠক, মতবিনিময় চালিয়ে যাচ্ছেন।
আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী সহিদ আমনী রুমি। জাপার তৃণমূল নেতাকর্মীরাও তার মনোনয়নের পক্ষে। তাদের সঙ্গে নিয়েই রুমি বিভিন্ন এলাকায় জনসংযোগ করছেন।

রাজনীতির পাশাপাশি লেখালেখিও করেন রুমি। কবি হিসেবেও সমধিক পরিচিত। তিনি বলেন, ‘ছাত্রজীবন থেকেই জাতীয় পার্টির পক্ষে কাজ করছি। ত্রিশালবাসীর সুখে-দুঃখে পাশে আছি। এবার মনোনয়ন পাব বলেই আশা করছি।’
দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন সুরুজ আলী মণ্ডল, আব্দুল বারী, গোলাম সারুয়ার তপন এবং মুহিদুল আলম মহিতও।

আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটের আলোচনায় যেসব আসন দাবি করেছে জাতীয় পার্টি, তার মধ্যে এই আসনটিও আছে। তবে ক্ষমতাসীন দল তাদেরকে এখনও কোনো কথা দেয়নি।