আবুধাবিতে নিউজিল্যান্ডের রুদ্ধশ্বাস জয়

প্রকাশ | ১৯ নভেম্বর ২০১৮, ১৭:১৬ | আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৮, ১৭:৩৬

ক্রীড়া ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

এভাবেও ম্যাচ জেতা যায়! লক্ষ্যটা খুব বেশি ছিল না, মাত্র ১৭৬ রানের। সেটা তাড়া করতে নেমে একটা সময় ৩ উইকেটে ১৩০ রান তুলে ফেলেছিল পাকিস্তান। কিন্তু এরপরই উল্টে গেল দাবার চাল। এজাজ প্যাটেলের দারুণ বোলিংয়ে মুখ থুবড়ে পড়ল স্বাগতিকদের ব্যাটিং লাইনআপ। শেষতক জয় থেকে ৪ রান দূরে থাকতে ১৭১ রানে অলআউট পাকিস্তান। আবুধাবিতে নিউজিল্যান্ড পেল রুদ্ধশ্বাস এক জয়। দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেট নেয়ার সুবাদে ম্যাচসেরা হয়েছেন অভিষিক্ত বাঁহাতি স্পিনার প্যাটেল।

ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের দাপটে নাকি টেস্ট ক্রিকেটের জৌলুশ হারিয়ে যেতে বসেছে। কিন্তু আবুধাবি টেস্ট দেখার পর এই কথা ভুলেও মুখে আনবে না কেউ! সাদা পোশাকেও যে রোমাঞ্চকর লড়াই উপহার দেয়া যায়, সেটাই দেখা গেল পাকিস্তান আর নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার প্রথম টেস্টে। সেশন বাই সেশন সমান তালে লড়েছে দুটি দল।

প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৫৩ রানেই গুটিয়ে গিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। পাকিস্তান লিড নিয়েছিল। তবে লিডটা বড় করে তোলার আগেই তাদের ২২৭ রানে থামিয়ে দেয় কিউই বোলাররা। দ্বিতীয় ইনিংসে কিউইরা তুলে ২৪৯ রান। তাতে পাকিস্তানের সামনে ১৭৬ রানের লক্ষ্য দাঁড়ায়। তৃতীয় দিন শেষে বিনা উইকেটেই তারা তুলে ফেলেছিল ৩৭ রান। অর্থাৎ জয়ের জন্য তাদের প্রয়োজন ছিল মাত্র ১৩৯ রান।

পাকিস্তান এই ম্যাচে জিততে, এমনটাই হয়ত ভেবেছিল সবাই। কিন্তু ক্রিকেট যে গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা। আর দলটি যখন পাকিস্তান, ‘দ্য আনপ্রেডিক্টেবল’ যাদের নাম তাদের নিয়ে আগে থেকে কিছু বলা মুশকিল। চতুর্থ দিনের শুরুতেই তিন উইকেট হারিয়ে বসে স্বাগতিকরা। স্কোরবোর্ডে আর ৩ রান যোগ করে প্যালেটের বলে এলবিডবিøউয়ের ফাঁদে পড়েন ইমাম-উল-হক (২৭)। এরপর ৮ রানের ব্যবধানে মোহাম্মদ হাফিজ (১০) আর হারিস সোহেলকেও (৪) তুলে নেন লেগস্পিনার ইশ সোধি।

চতুর্থ উইকেটে আসাদ শফিককে নিয়ে পাকিস্তানকে জয়ের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন আজহার আলী। কিন্তু দলীয় ১৩০ রানে শফিককে (৪৫) ফিরিয়ে নিউজিল্যান্ডকে ম্যাচে ফেরান নেইল ওয়াগনার। এরপর রানআউটে কাটা পড়েন বাবর আজম (১৩)। অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদেও টিকেছেন মাত্র সাত বল। ব্যক্তিগত ৩ রানে উইকেটরক্ষক বিজে ওয়াটলিংয়ের কাছে প্যাটেলের বলে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন তিনি।

দলীয় ১৫৪ রানে ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে সরফরাজ ফেরার পরই পাকিস্তানের হার নিশ্চিত হয়ে যায় অনেকটা। কারণ বাকি চার ব্যাটসম্যানের কেউই রানের খাতা খুলতে পারেননি। একপ্রান্ত আগলে রেখে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন আজহার আলী। একটা সময় ৩ উইকেটে পাকিস্তনের দরকার ছিল ১৯ রান। হাসান আলী ফেরার পর ২ উইকেটে সেটা হয়ে যায় ১২ রান। প্রতি ওভারের চতুর্থ কিংবা পঞ্চম বলে সিঙ্গেল নিয়ে আজহার আলী প্রায় জিতিয়েই ফেলেছিলেন দলকে। কিন্তু নায়ক বনে যেতে পারলেন না।

জয়ের জন্য তখন মাত্র ৪ রান দরকার পাকিস্তানের। প্যাটেলে করা ৫৯তম ওভারের পরপর তিনটি বল ডট যাওয়ার পর চতুর্থ ডেলিভারিটি লাগলো আজহারের প্যাডে। কিউই ক্রিকেটারদের জোড়ালো আবেদন। আম্পায়ার কয়েক সেকেন্ড ভেবে আঙুল তুললেন। সঙ্গে সঙ্গে রিভিউ নিলেন আজহার। টিভি রিপ্লেতে দেখা গেল, বল উইকেটের লাইনে পিচিং করে তার ব্যাট কিংবা গ্লাভ, কোনোটিই স্পর্শ না করে আঘাত হেনেছে অফস্ট্যাম্পে। সিদ্ধান্ত বহাল থাকে। নিউজিল্যান্ড শিবিরের উচ্ছ্বাস তখন দেখে কে? কেনইবা হবে না, এমন জয় যে কদাচিৎ আসে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

নিউজিল্যান্ড : ১৫৩ ও ২৪৯
পাকিস্তান: ২২৭ ও ১৭১ (ইমাম ২৭, আজহার ৬৫, শফিক ৪৫, বাবর ১৩; প্যাটেল ৫/৫৯, সোধি ২/৩৭, ওয়াগনার ২/২৭)
ফল: নিউজিল্যান্ড ৪ রানে জয়ী
ম্যাচসেরা: এজাজ প্যাটেল
সিরিজ: ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে নিউজিল্যান্ড

(ঢাকাটাইমস/১৯ নভেম্বর/এবিএ)