এসডিজির জন্য মানবাধিকার

মোহাম্মদ জমির
 | প্রকাশিত : ২০ নভেম্বর ২০১৮, ১২:২৩

জাতিসংঘ ঘোষিত সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) শেষ হয় ২০১৫ সালে। বাংলাদেশ এতে অনুসরণীয় সাফল্য দেখিয়েছে। এই দেশকে বলা হয় এমডিজির ‘রোল মডেল’। অভীষ্ট লক্ষ্য অনুযায়ী তা দেখানো সম্ভব হয়েছে।

২০০০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত চলা এমডিজিতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল আটটি। সেখানে প্রায় সব ক্ষেত্রেই দারুণ সাফল্য অর্জন করেছে আমাদের দেশ। এবার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) যে ১৭টি বিষয় আছে, সেগুলোর সূচকে উন্নতি করতে কাজ করছে বর্তমান সরকার। এমডিজির সফলতা ধরে রাখতে হলে ২০১৬ সালে শুরু হওয়া এসডিজি ২০৩০ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে হবে। তাহলেই আমাদের অর্জন বা উন্নয়ন টেকসই হবে।

এসডিজির ১৭টি লক্ষ্যের উদ্দেশ্য হলো: দারিদ্র্য দূরীকরণ, খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টিমান উন্নয়ন, স্বাস্থ্যমান অর্জন, মানসম্পন্ন শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি, নারীর সর্বজনীন ক্ষমতায়ন, নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলাসহ সামুদ্রিক সম্পদ সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা। এসডিজির ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা বিস্তারিত একটু বলতে চাই। এগুলো হচ্ছে: ১. সর্ব প্রকার দারিদ্র্য দূর করা; ২. খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টির উন্নয়ন ও কৃষির টেকসই উন্নয়ন; ৩. সবার জন্য সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা; ৪. সবার জন্য ন্যায্যতাভিত্তিক ও মানসম্পন্ন শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিতকরণ; ৫. জেন্ডার সমতা অর্জন এবং সব নারীর ও মেয়েদের ক্ষমতায়ন; ৬. সবার জন্য নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনের ব্যবস্থাপনা; ৭. সবার জন্য জ্বালানি বা বিদ্যুতের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা; ৮. স্থিতিশীল ও অংশগ্রহণমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, পূর্ণকালীন উৎপাদনমূলক কর্মসংস্থান ও কাজের পরিবেশ; ৯. স্থিতিশীল শিল্পায়ন এবং উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করা; ১০. রাষ্ট্রগুলোর অভ্যন্তরীণ ও আন্তঃরাষ্ট্র বৈষম্য বিলোপ; ১১. মানব বসতি ও শহরগুলোকে নিরাপদ এবং স্থিতিশীল রাখা; ১২. উৎপাদন ও ভোগ কাঠামোর স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা; ১৩. জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব মোকাবেলায় তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণ; ১৪. টেকসই উন্নয়নের জন্য সাগর, মহাসাগর ও সামুদ্রিক সম্পদ সংরক্ষণ এবং পরিমিত ব্যবহার নিশ্চিত করা; ১৫. স্থলভ‚মির জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উন্নয়ন; মরুকরণ প্রতিরোধ করা এবং জমির ক্ষয়রোধ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি কমানো; ১৬. শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক সমাজ, সবার জন্য ন্যায়বিচার, সর্বস্তরে কার্যকর, জবাবদিহি ও অংশগ্রহণমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা এবং ১৭. টেকসই উন্নয়নের জন্য এ সব বাস্তবায়নের উপায় নির্ধারণ ও বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের স্থিতিশীলতা আনা।

এসডিজির এই ১৭ লক্ষ্য অর্জনে ১৬৯টি টার্গেট আছে। এর প্রায় সব কটিই আমাদের দেশের সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত আছে। এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য সরকার থেকে ভালো পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। কোনো টার্গেট নিয়ে কোন মন্ত্রণালয় কাজ করবে, কাজটি কারা সমন্বয় করবে এবং চ‚ড়ান্তভাবে কাজটি হলো কি না, এগুলো তদারক করার জন্য একটি এজেন্সিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সরকার প্রতিটি কাজকেই গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে। এ কাজগুলো অর্জন করতে গেলে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা থাকতে হবে। এটি কোনো একক মন্ত্রণালয় বা ব্যক্তির কাজ নয়, এসডিজির লক্ষ্য অর্জন আসলে সবার কাজ। দেশের জনগণকে সম্পৃক্ত করে অবশ্যই এ কাজ করতে হবে।

এসডিজিতে থাকা ১৭ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে আমাদের দেশে যেসব পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে সেই পরিকল্পনায় সুশাসনকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। এসডিজির লক্ষ্যসমূহের মধ্যে অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন যেমন আছে, তেমনি বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের স্থিতিশীলতা আনার কর্মসূচিও আছে। এসডিজি লক্ষ্য পূরণ একই সঙ্গে বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনার দ্বার যেমন উন্মোচিত করেছে, ঠিক তেমনি কিছু চ্যালেঞ্জও হাজির করছে।

প্রধানমন্ত্রীর এসডিজি বাস্তবায়নবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদের উদ্যোগে সম্প্রতি এসডিজি ও মানবাধিকারবিষয়ক এক সম্মেলন হয়েছে, যা আয়োজন করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। এতে নেপাল, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধি, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এবং মানবাধিকার কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। যেখানে এসডিজির জন্য তিনটি দিক আলোকপাত করা হয়। প্রথমত, অর্থনৈতিক অগ্রগতি, দ্বিতীয়ত, পরিবেশ সুরক্ষা ও সামাজিক বৈষম্য বিলোপ।

আমরা জানি, এমডিজি থেকে এসডিজির পরিসর অনেক বড়। বাংলাদেশ এমডিজিতে সাফল্য পেয়েছে। সবাই পরিকল্পিতভাবে কাজ করলে এসডিজি অর্জনও সম্ভব হবে। তবে এত বিশাল কাজ সম্পন্ন করতে হলে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে স্থানীয় পর্যায় পর্যন্ত সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। এসডিজিতে ১৭টি লক্ষ্য, ১৬৯টি টার্গেট রয়েছে। এসডিজি প্রণয়নে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের প্রায় ৯০ লাখ মানুষের মতামত নেওয়া হয়েছে। একইভাবে মনে রাখতে হবে, জনগণ এখন আর কেবল উপকারভোগী নয়, তারা দেশের অংশীদার। যেকোনো কাজ তাদের সম্পৃক্ত করে করতে হবে। এসডিজিতে বাইরের অর্থায়ন হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। নিজস্ব অর্থায়নের বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে।

এদিকে এসডিজি অর্জনে মানবাধিকার রক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করবে। কারণ বিশ্লেষকদের মত হচ্ছে, লক্ষ্যমাত্রার ১৬৯টি বিষয়ের মধ্যে ১৫২টিই মানবাধিকারের সঙ্গে সম্পর্কিত। আর এ কাজ সরকারের একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। এ জন্য সরকার ও বেসরকারি খাতে সমন্বিত উদ্যোগ দরকার।

বাংলাদেশের সংবিধানেও মানবাধিকারের বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। আবার ভালো ভালো যেসব আইন আমাদের দেশে আছে, সেগুলোর ওপর ভিত্তি করে আগামী দিনে আমরা এগিয়ে যাব। তবে সেসব আইনে কোনো ত্রুটি থাকলে, তা আমাদের তুলে ধরতে হবে। সামগ্রিক উন্নয়নের স্বার্থেই তা পরিবর্তন করতে হবে। যেমন- মানবাধিকার নিশ্চিতে প্রত্যেক মানুষের, তিনি যত সংখ্যালঘু বা ক্ষুদ্রই হোন না কেন, তার অধিকার যতদিন পর্যন্ত নিশ্চিত না হবে, ততদিন পর্যন্ত এসডিজি অর্জন অসম্ভব। তাই সরকারকে এই দিকটি গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে।

ইতিবাচক আরো বিষয় হচ্ছে-এসডিজির উদ্দেশ্য কাউকে পেছনে ফেলে রাখা নয়। ধনী, দরিদ্র সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। আশার বিষয়, বর্তমান সরকার ২০২১ সালের রূপকল্প বাস্তবায়ন করছে। ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার সব উদ্যোগ নিয়েছে। সব মিলিয়ে ৮৩ বছরের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে সরকার। পৃথিবীর অনেক দেশই ১৫ বছরের বেশি পরিকল্পনা নিতে পারেনি। এখন পর্যন্ত যা দেখা যাচ্ছে, সরকার সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এসডিজি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে।

অবশ্য সংশ্লিষ্টদের মনে রাখতে হবে, এসডিজি সম্পর্কে মানুষের ভাবনা ও উপলব্ধি কী, তা জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য যত বেশি মানুষকে সম্পৃক্ত করে সংলাপ করা যায়, তত ফলপ্রসূ হবে বলে আমি মনে করি। আবার সুশাসন পেলে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা সহজ হয়ে যায়। মানবাধিকার পেলে নিশ্চিত হয় নিরাপত্তা। নিরাপত্তা পেলে শান্তি আসবে। তাই সুশাসনের ক্ষেত্রে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে, সেগুলোর উত্তরণ ঘটানো জরুরি। যেখানে যে পরিকল্পনা করা হোক না কেন, তা সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের জন্য আইনি কাঠামো গড়ে দিতে হবে।

এমডিজি ও এসডিজির মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। এসডিজিতে শান্তি, নিরাপত্তা, মানবাধিকার ও সুশাসনের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এটিকে সামাজিক আন্দোলন হিসেবে দেখা হচ্ছে। তাই সব পক্ষের অংশগ্রহণ ছাড়া এসডিজিতে সাফল্য অর্জন করা কঠিন হয়ে পড়বে। এসডিজি বাস্তবায়নে এখনো কিছু ক্ষেত্রে আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার বাঞ্ছনীয়। এ ক্ষেত্রে গতি আনার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া না হলে ২০৩০ সালের মধ্যে যে উন্নয়নের আকাক্সক্ষা আমরা করেছি, তা অর্জন করা যাবে না। এর বাস্তবায়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছা সম্ভবত বেশি প্রয়োজনীয়। লক্ষ্য বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তরকে উদ্যম ও পেশাদারির সঙ্গে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি এটি বাস্তবায়ন করতে হলে শুধু সরকারের একার প্রচেষ্টা যথেষ্ট নয়।

মানবাধিকারের সঙ্গে মানুষের অর্থনৈতিক সংগতি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তাই এসডিজি বাস্তবায়নে অতি দারিদ্র্য অবশ্যই নিরসন করতে হবে। বর্তমানে দেশে অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠী আছে দুই কোটি। এ সংখ্যা কমিয়ে আনতে হবে। এজন্য সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করাও গুরুত্বপূর্ণ। কেননা শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। শিক্ষকদের দক্ষতা-যোগ্যতা বাড়াতে হবে। রেমিট্যান্স বাড়াতে কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। এছাড়া রপ্তানি বহুমুখীকরণ, বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, সুশাসন ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার অবশ্যই প্রয়োজন।

এসডিজি অর্জনে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা ধরে রাখতে হবে। এর জন্য কৃষি উৎপাদনের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার পাশাপাশি নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে।

এসডিজির লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতি ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে। এছাড়া অর্থায়নে যেহেতু ব্যক্তি খাত অন্যতম ভ‚মিকা পালন করবে, তাই ব্যক্তি খাতে কীভাবে বিনিয়োগ বাড়ানো ও তা টেকসই করা যায়, সে বিষয়ে বেশি নজর দিতে হবে।

সবার সহযোগিতা ও অংশগ্রহণ ছাড়া নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই এসডিজি অর্জন সম্ভব নয়।

টেকসই উন্নয়নে শিক্ষাক্ষেত্র নিয়ে কাজ করতে হবে। শিক্ষার হারে যে অগ্রগতি তা অবশ্যই বিশাল অর্জন। এখন শিক্ষার মানে উন্নয়ন আনতে হবে। কর্মমুখী শিক্ষা জোর দিতে হবে। আমরা দেখছি, সাধারণ শিক্ষা ও মাদ্রাসা শিক্ষার সমন্বয়ে সরকার দারুণ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থায়ও সাধারণ শিক্ষার মতো গণিত, বিজ্ঞান, আইসিটি, রসায়নসহ সব আধুনিক বিষয় পড়াতে হবে।

এসডিজি হচ্ছে মানুষ ও পৃথিবীর সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার একটি বৃহৎ কর্মপরিকল্পনা, যা ব্যক্তি-স্বাধীনতা নিশ্চিত করাসহ বৈশ্বিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভ‚মিকা রাখবে। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত পৃথিবী গড়ে তোলার পাশাপাশি সব নাগরিকের সম্ভাবনা, মর্যাদা ও সমতা নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ জাতিসংঘ। সম্পদের টেকসই উৎপাদন ও ব্যবহার, প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনা, জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তন রোধে ত্বরিত উদ্যোগ এবং বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পৃথিবীকে সব ধরনের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করাই এসডিজির লক্ষ্য।

এসডিজির মাধ্যমে সব মানুষের সমৃদ্ধ ও নিরাপদ জীবনের নিশ্চয়তা, অর্থনৈতিক-সামাজিক ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সমন্বয় এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাসহ সমাজে সব ধরনের ভয়ভীতি ও বৈষম্য দূর করা হবে। এতে বলা হয়, পৃথিবীর কোথাও অশান্তি নিয়ে কোনো টেকসই উন্নয়ন হতে পারে না এবং টেকসই উন্নয়ন ছাড়া শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। এ লক্ষ্যে সব নাগরিক, অংশীদার ও রাষ্ট্রের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা হবে।

বৈশ্বিকভাবে গৃহীত এসডিজির ৫ এবং ১০ নম্বর ধারায় নারী-পুরুষের সমতা ও বৈষম্য বিলোপের ধারা কর্মসূচি বাস্তবায়নে আমাদের অতি জরুরিভাবে নিতে হবে। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের জেনারেল ইকোনোমিক ডিভিশনের পক্ষ থেকে এসডিজি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সবার জন্য যে নির্দেশনা পুস্তিকা তৈরি ও প্রকাশ করেছে তা একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে যথাযথ বাস্তবায়ন, মনিটরিং ও মূল্যায়ন ব্যবস্থা থাকা দরকার। এসডিজির ধারা-৫ বাস্তবায়নে নারীর মানবাধিকার দৃষ্টিকোণ থেকে কর্মসূচি মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয়কে গ্রহণ করতে হবে। অর্থনৈতিক বিভিন্ন খাতে নারীর অংশগ্রহণ ও ভ‚মিকা কিভাবে স্থায়ী করা যায় এ বিষয়ে রাষ্ট্রকে যেমন ভ‚মিকা রাখতে হবে, তেমনি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলে নাগরিকদেরও এগিয়ে আসতে হবে।

এসডিজির মাধ্যমে পরিবর্তনশীল বিশ্বের সমতা নিশ্চিত করা যাবে। বৈষম্যহীন উন্নয়ন নিশ্চিত সম্ভবপর হবে। ‘রূপান্তরিত আমাদের পৃথিবী: ২০৩০ সালের জন্য টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা’ হচ্ছে এসডিজির আনুষ্ঠানিক শিরোনাম। এ দিকটি দেখলেই নিশ্চিত যে, এসডিজির মাধ্যমে সর্বজনীন মানবাধিকার নিশ্চিত হবে। আবার মানবাধিকার নিশ্চিত ছাড়া এসডিজি বাস্তবায়ন অসম্ভব। একটির সঙ্গে অন্যটি সম্পৃক্ত। তাই ‘মানুষ মানুষের জন্য’ এই বাণীর যথার্থ পূরণে এসডিজির জন্য আমাদের সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে ভ‚মিকা রাখতে হবে।

মোহাম্মদ জমির: সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং প্রধান তথ্য কমিশনার

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :