কিশোরগঞ্জে ছয় আসন

লড়াইয়ে তিন রাষ্ট্রপতির পুত্র, আইজি প্রতিমন্ত্রী

প্রকাশ | ২০ নভেম্বর ২০১৮, ১৬:০৯

আমিনুল হক সাদী, কিশোরগঞ্জ

ভিভিআইপি জেলা হিসেবে খ্যাত কিশোরগঞ্জ জেলার ছয়টি সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে প্রার্থী হতে শতাধিক নেতা মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। তাদের মধ্যে আছেন তিন রাষ্ট্রপতিপুত্র। কারা পাবেন দলের মনোনয়ন, এ নিয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে চলছে জোর জল্পনা-কল্পনা।  তবে তিন রাষ্ট্রপতিপুত্রের মনোনয়ন নিশ্চিত এ ব্যাপারে কোনো সংশয় নেই।

কিশোরগঞ্জকে জাতীয় নির্বাচনে ভিভিআইপি বলার কারণ বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদসহ এ জেলার তিন কৃতী সন্তান দেশের এই সর্বোচ্চ পদ অলংকৃত করেছেন। দেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ছিলেন এ জেলার সৈয়দ নজরুল ইসলাম।  আওয়ামী লীগের গত মেয়াদে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন জিল্লুর রহমান, যার বাড়ি ভৈরবে।

এই তিন রাষ্ট্রপতির ছেলেরা নিজ নিজ এলাকার বর্তমান এমপি এবং এবারের নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশী। সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বর্তমান সরকারের জনপ্রশাসনমন্ত্রী। জিল্লুর রহমানের ছেলে বিসিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক ও রাসেল আহমেদ তুহিন।

জেলার ছয়টি আসনেই এবার আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে ওজনদার প্রার্থী মনোনয়ন চেয়েছেন। পাশাপাশি আছেন মাঝারি পর্যায়ের নেতারাও।
সবচেয়ে বেশি মনোনয়ন জমা পড়েছে কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে, ২৪টি। এখানে আওয়ামী লীগ থেকে ১৪ ও বিএনপি থেকে ১০ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন।
এরপর কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে সর্বোচ্চ ২৩টি মনোনয়ন ফরম জমা পড়ে দুই দলে। আওয়ামী লীগ থেকে ১৯টি ও বিএনপির চারটি। আর কিশোরগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের এক ডজন ও বিএনপির ১০ জন।   

কিশোরগঞ্জ-১ (কিশোরগঞ্জ সদর ও হোসেনপুর)

বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। গুরুতর অসুস্থ আশরাফুল নির্বাচন করতে পারবেন কি-না, এ সংশয় থাকায় তার দুই ভাইসহ ১০ জন নেতা মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। তারা হলেন, সৈয়দ আশরাফের দুই ভাই মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ সাফায়েতুল ইসলাম ও লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুক্তিযোদ্ধা ড. সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম, চাচাতো ভাই অ্যাডভোকেট সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটু, রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মেজ ছেলে রাসেল আহমেদ তুহিন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সহকারী কৃষিবিদ মশিউর রহমান হুমায়ুন, কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজ, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডের সদস্যসচিব অধ্যক্ষ শরীফ সাদী, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) কিশোরগঞ্জ জেলা সভাপতি ডা. দীন মোহাম্মদ, বাংলাদেশ কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির মহিলাবিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ গুলশান আরা বেগম এবং বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-পাঠাগার সম্পাদক অধ্যক্ষ এমএ হান্নান।

বিএনপি থেকেও অন্তত ১২ নেতা দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন বলে জানা গেছে। তারা হলেন, সাবেক এমপি মো. মাসুদ হিলালী, সাবেক ঢাকা বিভাগীয় স্পেশাল জজ রেজাউল করিম খান চুন্নু, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি রুহুল হোসাইন, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শরীফুল ইসলাম শরীফ, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওয়ালীউল্লাহ রাব্বানী, জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইসরাইল মিয়া, কিশোরগঞ্জ সদরের বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি প্রয়াত মাওলানা আতাউর রহমান খানের ছেলে মাওলানা উবায়দুর রহমান নদভী, হোসেনপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম মবিন, বিএনপির নেতা অ্যাডভোকেট মাজহারুল ইসলাম, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের ছোট ভাই মির্জা খোকন এবং বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মো. আবদুস সালামের ছেলে আফজাল সালাম।

কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী ও পাকুন্দিয়া )

এই আসনে বর্তমান সাংসদ অ্যাডভোকেট মো. সোহরাব উদ্দিনসহ অন্তত এক ডজন প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। অন্যরা হলেন সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ, কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ আফজল, পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রেণু, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মোখলেছুর রহমান বাদল, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক, কটিয়াদী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান লায়ন আলী আকবর, আওয়ামী লীগ নেতা মঈনুজ্জামান অপু, কটিয়াদী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক আহ্বায়ক তারিকুল মোস্তাক রানা, জেলা কৃষক লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার এম এ মান্নান, প্রয়াত সংসদ সদস্য প্রফেসর ডা. মো. আবদুল মান্নানের ছেলে অটিজম বিশেষজ্ঞ ডা. মাজহারুল মান্নান পার্থ এবং প্রয়াত কমান্ডার মোহাম্মদ বজলুর রহমানের ছেলে ড. জায়েদ মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ।

বিএনপির আট প্রার্থী হলেন সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান রঞ্জন, কটিয়াদী উপজেলা বিএনপির সভাপতি আশফাক আহমেদ জুন, পাকুন্দিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ইদ্রিছ আলী ভূঁইয়া, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. জালাল উদ্দিন, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি রুহুল আমিন আকিল, জেলা বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক শহীদুজ্জামান কাঁকন, পাকুন্দিয়া উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব কামাল উদ্দিন ও জেলা বিএনপির উপদেষ্টা আবুল হোসেন মোশাহিদ।

কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ ও তাড়াইল )

বর্তমান সাংসদ জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক চুন্নু। এবারের নির্বাচনেও তিনি ক্ষমতাসীন মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান। তবে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছাড়তে নারাজ।

এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে অন্তত ১৯ জন দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন, দুবারের সাবেক সাংসদ ড. মিজানুল হক, করিমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক নাসিরুল ইসলাম খান আওলাদ, জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক ডা. মাহবুব ইকবাল, জেলা বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহসভাপতি মো. এরশাদ উদ্দিন, বঙ্গমাতা পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ আসাদুল হক, আইটি ব্যবসায়ী শেখ কবির আহমেদ, করিমগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাইয়ুম, লন্ডন মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. আনিছুর রহমান আনিছ, আওয়ামী লীগ নেতা এমরান আলী ভূঁইয়া, অ্যাডভোকেট মোজাম্মেল হক মাখন, মেজর (অব.)ড. মোসলেহ উদ্দিন বাবুল, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ উপকমিটির সদস্য অধ্যাপক মো. শহিদুল ইসলাম, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহফুজ হায়দার, ড. মুজিবুর রহমান আঙ্গুর, অধ্যক্ষ আম্মান খান, কবি মাসুদ খান, খন্দকার মনিরুজ্জামান নয়ন প্রমুখ।

বিএনপি থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ভাইস চেয়ারম্যান ড. এম ওসমান ফারুক, জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম মোল্লা, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট জালাল মো. গাউস ও জেলা বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক  ডা. এরশাদ আহসান সোহেল এবং সাবেক ভিপি সাইফুল ইসলাম সুমন।

কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম )

বর্তমান সাংসদ রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক ছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান শাহজাহান দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন।

বিএনপি থেকে জমা দিয়েছেন ৫ নেতা- চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম রতন, সৈয়দ মহিতুল ইসলাম অসীম, সাবেক এমপি ফরহাদ আহমেদ কাঞ্চনের ছেলে ড্যাব নেতা ডা. ফেরদৌস আহমেদ চৌধুরী লাকী এবং হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সাবেক ট্রাস্টি সুরঞ্জন ঘোষ।

কিশোরগঞ্জ-৫ (বাজিতপুর ও নিকলী)

বর্তমান সাংসদ মো. আফজাল হোসেন ছাড়াও অন্তত ১৪ নেতা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে ফরম জমা দেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. আলাউল হক, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট শেখ নূরুন্নবী বাদল, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অজয় কর খোকন, আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য শহীদুল্লাহ মুহাম্মদ শাহ্ নূর, কেন্দ্রীয় যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সুব্রত পাল, নিকলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইসহাক ভূঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক ও নিকলী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কারার সাইফুল ইসলাম, জেলা কৃষকলীগ সহ-সভাপতি ফারুক আহম্মেদ, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যকরি কমিটির সাবেক সদস্য ব্যারিস্টার মো. রফিকুল ইসলাম মিল্টন, নিকলী উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম, বাজিতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুর রহমান বোরহান, বাজিতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. শাহজাহান মিয়া, যুগ্ম আহ্বায়ক মোবারক হোসেন মাস্টার এবং জার্মান আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম রতন।

বিএনপির ১০ মনোনয়নপ্রত্যাশী হলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শেখ মুজিবুর রহমান ইকবাল, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি সালেহুজ্জামান খান রুনু, বাজিতপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র এহেসান কুফিয়া, নিকলী উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট বদরুল মোমেন মিঠু, বিএনপি নেতা বদরুল আলম শিপু, কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতা ইশতিয়াক আহমেদ নাসির, নিকলী উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শফিকুল আলম রাজন, নিকলী উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি হাজী মাসুক মিয়া, প্রয়াত সাংসদ মুজিবুর রহমান মঞ্জুর ছেলে মাহমুদুর রহমান উজ্জ্বল ও নিকলী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. আবু সাইদ।

কিশোরগঞ্জ-৬ (ভৈরব ও কুলিয়ারচর )

বর্তমান সাংসদ নাজমুল হাসান পাপনের সঙ্গে মনোনয় ফরম জমা দেগন ভৈরব পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ইফতেখার হোসেন বেনু।
বিএনপিতেও দুজন মনোনয়ন জমা দেন। জেলা বিএনপি সভাপতি আলম গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শরীফুল আলম ও ভৈরব উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন।