ট্রি পিপিটের দেখা মিলল ১৪০ বছর পর

প্রকাশ | ২০ নভেম্বর ২০১৮, ২০:৪২ | আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৮, ২১:৩৬

রিমন রহমান

বাংলাদেশে কয়েক ধরনের ‘পিপিট’ আছে। কিন্তু ‘ট্রি পিপিট’ দুর্লভ। সর্বশেষ ১৮৭৮ সালের দিকে পাখিটির দেখা মিলেছিল। তবে ১৪০ বছর পর রাজশাহীতে আবার এই পাখিটির দেখা মিলেছে। পাখিটির বাংলা নাম ‘গেছোতুলিকা’।

প্রায় এক মাস আগে রাজশাহী শহরের কাছাকাছি এক নিভৃত গ্রামে একটি ট্রি পিপিটের ছবি তোলেন বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সদস্য হাসনাত রনি। অবহেলায় বেড়ে ওঠা একটা বাবলা গাছে বসে ছিলো পাখিটা। সেখানেই পাখিটাকে ক্যামেরাবন্দি করেন রনি। তারপর সেই ছবি রনি ফেসবুক গ্রুপ ‘বার্ডস বাংলাদেশ’ এ শেয়ার করেন।

সেখানে পাখি বিশেষজ্ঞ শাহরিয়ার রুশদি এবং সায়েম চৌধুরী মন্তব্য করেন এটা ‘ট্রি পিপিট’ হতে পারে। নিশ্চিত হওয়ার জন্য তারা ছবিগুলো ইংল্যান্ডের পিপিট বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠান। বিদেশি বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত হওয়ার জন্য সময় নেন। একমাস পর মঙ্গলবার (২০ নভেম্বর) ইংল্যান্ড থেকে সুংসবাদই এসেছে। বলা হয়েছে, এটিই সেই হারিয়ে যাওয়া ট্রি পিপিট।

হাসনাত রনি জানান, বিখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ পল থম্পসন তাকে মেইল করেছেন যে এটাই সেই ট্রি পিপিট। হাসনাত রনির তোলা ছবি তিনি ‘বার্ডিং এশিয়া’তে ছাপানোর কথাও জানিয়েছেন। অথচ দূর থেকে চোখে পড়তে রনি ভেবেছিলেন, এটা অতি পরিচিত চড়–ই হতে পারে। আরেকটু কাছে গিয়ে বুঝেছিলেন, এটা চড়–ই নয়। তারপর ভেবেছিলেন, এটা ‘জলপাই পিঠ’। কিন্তু ক্যামেরার লেন্স দিয়ে দেখে সেই ভুলও ভেঙেছিল। সবশেষ তিনি এটিকে ট্রি পিপিটই মনে করেছিলেন।

রনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, এর আগে আমি ধানি তুলিকা (প্যাডজ ফিল্ড পিপিট), জলপাই পিঠ তুলিকা (অলিভ ব্যাকড পিপিট), গোলাপি তুলিকা (রোজি পিপিট) ও রিচার্ডের তুলিকা (রিচার্ড পিপিট) দেখেছি এবং ছবি তুলেছি। এই পাখিটা সেরকমই মনে হয়েছিল। কিন্তু এর আচরণ এই চার ধরনের তুলিকার সাথে মিলছিল না। তখনই কিছুটা দুঃসাহসী চিন্তা মাথায় আসলো! ভাবলাম, এটা সেই ট্রি পিপিট নয় তো! অবশেষে আমার ধারণাই সত্যি হলো। ১৮৭৮ সালের পরে এই ভূখ-ে পাখিটা কেউ দেখেনি। আমি ভাগ্যবান যে এই অতি বিরল পাখিটা প্রথম দেখলাম।

বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সহ-সভাপতি অনু তারেক এ প্রতিবেদককে বলেন, বাংলাদেশে কয়েক ধরনের পিপিট আছে। কিন্তু ১৮৭৮ সালের পর পাখিটা আর দেখা যায়নি। সেসময় যেসব পাখি দেখা যেত, বৃটিশরা তা লিখে গেছেন। আমরা তার বাংলা নামও করেছি। ট্রি পিপিটের নাম দেয়া হয়েছিল ‘গেছো তুলিকা’। ১৪০ বছর পর হাসনাত রনির এই পাখি দেখা প্রথম হিসেবেই রেকর্ড করেছে।

ট্রি পিপিট পরিযায়ী পাখি। গাছ-গাছালিতে বেশি সময় কাটায়। খাবারের সন্ধানে মাটিতে নেমে পোকামাকড় খোঁজে। বাসা বাঁধে মাটিতে। গানের গলা চমৎকার। গাছের উঁচুতে বসে গান গায়। খানিকটা চঞ্চল প্রকৃতির। বেশিরভাগ সময় একাকী বিচরণ করে। পাখিটির দৈর্ঘ্য ১৪ থেকে ১৬ সেন্টিমিটার। প্রসারিত ডানা ২৫ থেকে ২৭ সেন্টিমিটার। এদের প্রজনন সময় মে থেকে আগস্ট মাস। ডিমের সংখ্যা ৪ থেকে ৮টি। ট্রি পিপিটের ডিম ফুটতে সময় লাগে ১২-১৩ দিন।

দুর্লভ এই পাখির ফটোগ্রাফার হাসনাত রনি রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের কর্মকর্তা। ২০১২ সাল থেকে পাখির ছবি তুলে আসছেন। অবসরের সময়টা তিনি পাখির ছবি তুলতে ঘুরে বেড়ান। ইতিমধ্যে তিনি ইন্ডিয়ান পিগনি উটপেকার (খররাটুপি কাঠকুড়ালি), স্পট বিল্ড পেলিক্যান (টিপিঠোঠি গগণবেড়), ইউরেশিয়ান কুনবিল (চামচঠুঠি বক), রেড এভাডাভাট (লালমুনিয়া) ও স্লেন্ডার বিল্ড গালের (সরুঠোটি গাংচিল) মতো অনেক আগে হারিয়ে যাওয়া পাখির ছবি তুলেছেন। প্রশংসিত হয়েছেন দেশজুড়ে।

হাসনাত রনি বলেন, ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি অবসরের সময়টা পাখিদের সঙ্গে কাটাই। তাদের ছবি তুলি। কখনও কখনও একেবারেই নতুন পাখি পেয়ে যাই। তখন মানসিকভাবে পরিতৃপ্ত হই। এই পাখির মাধ্যমেই আমি আমার রাজশাহীকে তুলে ধরতে পারি। রাজশাহীতে একের পর এক নতুন পাখির দেখাও পাচ্ছি। তাই রাজশাহী এখন পাখিপ্রেমিদের প্রিয় স্থান। এই শীতে অনেক মানুষ রাজশাহী আসবেন শুধু পাখি দেখতে। এটা আমার বড় পাওয়া।

ঢাকাটাইমস/২০নভেম্বর/আরআর/ইএস