মালয়েশিয়ায় পুরুষদের দ্বিতীয় বিয়ের সিদ্ধান্ত দেন শুশাইদাহ

প্রকাশ | ২০ নভেম্বর ২০১৮, ২১:৩৫

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ইসলামী আইন বা শরিয়া আইন অনেকসময় দোষীকে অতি কঠোর শাস্তি প্রদান করে থাকে বলে সমালোচনা করা হয়ে থাকে। কিন্তু মুসলিম অধ্যুষিত মালয়েশিয়ার শরিয়া আইন অনুযায়ী পরিচালিত হওয়া উচ্চ আদালতের একজন নারী বিচারক মনে করেন, তিনি নিজের পদমর্যাদা বলে তিনি মুসলিম নারীদের অধিকার রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।

বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিচারক নেনি শুশাইদাহ প্রতিদিন পাঁচটির বেশি মামলার বিচারিক কাজ পরিচালনা করেন এবং সপ্তাহে প্রায় ৮০টি মামলার শুনানি করে থাকেন।

মালয়েশিয়ায় শরিয়া আইনের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। দুই ধারা বিশিষ্ট আইনি ব্যবস্থায় পারিবারিক ও নৈতিক বিষয়ের বিচার চাওয়ার ক্ষেত্রে মালয়েশিয়ার অনেক মুসলিমই শরিয়া আইনের দ্বারস্থ হয়ে থাকেন।

মালয়েশিয়া অনেকটা মধ্যমপন্থী ইসলামিক আইন অনুশীলন করলেও সেখানে কট্টরপন্থী মতবাদের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। বিচারক শুশাইদাহ অর্থনৈতিক দ্বন্দ্বের মামলা থেকে শুরু করে শরিয়া আইনে নারী-পুরুষ সম্পর্কে নৈতিকতার দ্বন্দ্বসহ বিভিন্ন ধরণের মামলার বিচার করে থাকেন। তবে পারিবারিক দ্বন্দ্বের ক্ষেত্রে সন্তানের ভরণপোষণ বিষয়ক মামলা এবং বহুগামিতা বিষয়ে বিচার করার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ তিনি।

বিচারক শুশাইদাহ বলেন, ‘প্রতিটি ঘটনাই জটিল এবং অন্যটির চেয়ে ভিন্ন। ইসলামি আইনের অধীনে গৎবাঁধা কোনো সমাধান আপনি দিতে পারবেন না।’

মুসলিম ধারণা অনুযায়ী, একজন পুরুষ চারটি বিয়ে করতে পারেন, যা মালয়েশিয়ায় আইনত বৈধ। বিচারক শুশাইদাহর আদালতে বহুবিবাহের অনুরোধ নিয়ে আসা ব্যক্তিসহ তার পরিবারের বাকিদেরও উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক।

শুশাইদাহ বলেন, ‘আমি সবার বক্তব্য নিতে চাই, শুধু পুরুষদেরটা নয়। নারীদের সঙ্গে কথা বলে আমি নিশ্চিত হতে চাই যে তারাও বিষয়টি নিয়ে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল। তারা যদি সব বিষয়ে পুরোপুরি না জেনে থাকেন তাহলে আমি তাদের অনুমতি দেই না।’

বিচারক শুশাইদাহ জানান, মালয়েশিয়ার অধিকাংশ নারীই এ ধরনের নিয়ম পছন্দ করেন না। ‘কিন্তু ইসলাম অনুযায়ী এটি বৈধ এবং মালয়েশিয়ার আদালত এই আইন বাস্তবায়ন করতে বেশ কঠোর নির্দেশনা রয়েছে।’ একজন পুরুষের দ্বিতীয়বার বিয়ে করতে চাওয়ার পেছনে অত্যন্ত শক্ত যুক্তি থাকতে হয় বলে মন্তব্য করেন বিচারক শুশাইদাহ।

এই দ্বিতীয় বিয়ের ক্ষেত্রে প্রথম স্ত্রী'র স্বতঃস্ফূর্ত অনুমতি বাধ্যতামূলক বলেও নিশ্চিত করেন বিচারক শুশাইদাহ।

শরিয়া আসলে কী?

ইসলামের ধর্মগ্রন্থ কোরআনে বর্ণিত মতাদর্শ অনুযায়ী তৈরি আইনি অবকাঠামোকে শরিয়া বলা হয়। একই সঙ্গে নবী হজরত মুহাম্মদের(সা.) বক্তব্য আর জীবনধারণের আদর্শ বা 'হাদিস' এবং ইসলামী পণ্ডিতদের দ্বারা নির্ধারিত আইন বা 'ফতোয়া'ও অন্তর্ভুক্ত শরিয়া আইনে।

মালয়েশিয়ার বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন পরিসরে ব্যবহৃত হয়ে থাকে শরিয়া আইন। শরিয়া আইন অধিকাংশ ক্ষেত্রে ‘ভুল, অতি কঠোর এবং অমানবিক’ বলে মানবাধিকার কর্মীরা এর সমালোচনা করে আসছেন। তবে অনেক সময় কঠিন শাস্তি দিলেও বিচারক শুশাইদাহ মনে করেন, সুবিচার নিশ্চিত করতেই শরিয়া আইন কখনো কখনো কঠোর অবস্থান নিয়ে থাকে।

শরিয়া আইনের বিরোধিতা করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া শাখার উপপরিচালক ফিল রবার্টসন বিবিসিকে বলেন, ‘যেই শরিয়া আইন নারী, সমকামী বা সংখ্যালঘুদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করে না, সেই শরিয়া আইনে আমার কোনো আপত্তি নেই।কিন্তু মালয়েশিয়ায় শরিয়া আইনের সমস্যা হলো তারা প্রায়ই এ ধরণের কাজ করে থাকে।’

তবে বিচারক শুদাইদাহ মনে করেন শরিয়া আইন সবসময় পুরুষদের পক্ষে রায় দেয়, এমন ধারণা সত্য নয়। ‘নারীদের অধিকার রক্ষার জন্য তৈরি হয়েছে আমাদের আইন। নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং তাদের কল্যাণ নিশ্চিত করা হয়েছে এই আইনে।’

মালয়েশিয়ার আইনে নারীর অবস্থান

বিচারক শুশাইদাহ সবচেয়ে বড় চিন্তা, শক্ত শরিয়া আইনের ফাঁক গলে বিদেশে গিয়ে বিয়ে করছে মালয়েশিয়ার পুরুষরা।

‘মালয়েশিয়ার পুরুষ বিদেশে গিয়ে বিয়ে করলে মালয়েশিয়ার আইন অনুযায়ী তাকে শাস্তির অধীনে আনা যায় না।’

মালয়েশিয়ার নারী অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংস্থা 'সিস্টারস ইন ইসলাম'এর মতে, মালয়েশিয়ার আদালতে 'নারী প্রতিনিধিত্বের ভয়াবহ ঘাটতি' এবং পুরো বিচার বিভাগে 'পুরুষত্ববাদের তীব্র ছায়া' বিদ্যমান রয়েছে।

ঐ সংস্থার একজন মুখপাত্র মাজিদাহ হাশিম বলেন, ‘মালয়েশিয়ার শরিয়া আইনের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে দেখা যায় তা উদ্দেশ্যমূলকভাবে নারীদের বিরুদ্ধে বৈষম্যবাদী আচরণ করে থাকে। এমনকি সামাজিকভাবে নৈতিকতার অবক্ষয়ের কারণ হিসেবে নারীদের দোষারোপও করা হয়ে থাকে।’

হাশিম মনে করেন, সরকারি ইসলামিক প্রতিষ্ঠানগুলো নারীদের প্রাপ্য বিচার নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি। যে কারণে বিচারক শুশাইদাহর নিয়োগ ছিল মালয়েশিয়ার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।

‘একসময় শরিয়া আইনের অধিকাংশ বিচারকই ছিলেন পুরুষ, যারা বিচারিক প্রক্রিয়ায় নারীর অন্তর্ভুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলতেন।’ তবে আদালত পরিচালনায় বিচারক শুশাইদাহর বলিষ্ঠ ভূমিকার মাধ্যমে ঐ ধারা পরিবর্তিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করতেই পারেন মালয়েশিয়ার মুসলিমরা।

(ঢাকাটাইমস/২০নভেম্বর/এসআই)