দাবি কমাচ্ছে আ.লীগের শরিকরা

তানিম আহমেদ
 | প্রকাশিত : ২৫ নভেম্বর ২০১৮, ১৪:০৭

আসন বণ্টনের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের শরিকরা তাদের ‘আকাশচুম্বী’ চাওয়া কমিয়ে এনেছে। তবে শেষ পর্যন্ত তারা যতগুলো আসন চাইছে, তাতেও ছাড় দিতে হচ্ছে।

আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি তার দুই জোটকে নিয়ে ভোটে আসায় আওয়ামী লীগকেও নামতে হচ্ছে আটঘাট বেঁধে। আসন বণ্টনের ক্ষেত্রেও ভেবেচিন্তে আগাতে হচ্ছে তাদের। শরিকদের বেশি ছাড় দিতে গিয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় ১৫০টি আসন যেন অনিশ্চিত না হয়ে যায়, সেটা নিশ্চিত করাই লক্ষ্য।

ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, ১৫০টি আসন না পেলে সরকার গঠনের সময় অযাচিত শর্তের মুখে পড়তে হতে পারে তাদের। যে কারণে তারা সর্বোচ্চসংখ্যক আসনেই নির্বাচন করতে চান।

জাতীয় পার্টি পাবে ৪০-এর কম

জাতীয় পার্টি প্রথমে ১০০টি, পরে ৭৬টি আসন চেয়েছিল। তবে এখন তারা চায় ৫০টি। তবে আরও ছাড় দিতেও রাজি। তবে দশম সংসদ নির্বাচনে যেখানে তাদের সংসদ সদস্য আছে সেগুলো নিশ্চিত করাই চ্যালেঞ্জ।

গতকাল জাতীয় পার্টির নেতারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠকেও বসে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। তবে সেখানেও আসন বণ্টন নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এর বাইরে দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ঢাকা-১৭ এবং নারায়ণগঞ্জ-১ একটি করে, তার ভাই জি এম কাদের লালমনিরহাট-৩, নতুন যোগ দেয়া মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী ফেনী-৩, দলের সভাপতিম-লীর সদস্য দিলারা খন্দকারের জন্য গাইবান্ধা-৩ এবং সভাপতিম-লীর আরেক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টুর জন্য ঢাকা-১৩, এরশাদের ভাগ্নে খালেদ আক্তারের জন্য লালমনিরহাট-১, শফিকুল ইসলাম জিন্নার জন্য বগুড়া-২, আবুল কাশেমের জন্য জয়পুরহাট-২ আসন চাইছে।

তবে আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালে ছাড় দেয়া সবগুলো আসনই দিতে চাইছে না জাতীয় পার্টিকে। বলছে, তখন বিএনপি-জামায়াত জোট না আসায় পরিস্থিতির কারণে বেশি আসনে ছাড় দেয়া হয়েছিল। এবার সেই পরিস্থিতি নেই।

২০০৮ সালে জাতীয় পার্টিকে ৩৪টি আসনে ছাড় দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। যদিও দলের প্রার্থী ছিল ৪৯ আসনে। বাকিগুলো উন্মুক্ত ছিল দুই দলের জন্যই। এবারও তেমনটিই ঘটতে পারে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তারা জানান, নৌকার শক্তিশালী অবস্থান আছে, এমন বেশ কিছু আসনে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী দিলে হিতে বিপরীত হতে পারে। আবার জাতীয় পার্টি রংপুর-৬ ছাড়া সবগুলো আসনই দাবি করছে। অথচ সেখানে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আছে চারজন। সেখানে প্রয়োজনে আবার উন্মুক্ত লড়াই হবে।

জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনা সন্তোষজনকভাবে এগোচ্ছে। উভয়ের স্বার্থ রক্ষা করে আমরা সম্মানজনক আসন পাব।’

যুক্তফ্রন্টকে দেয়া হচ্ছে চাহিদার অর্ধেক

সাবেক বিএনপি নেতা এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট শুরুতে আওয়ামী লীগকে ৩৮টি আসনের তালিকা দিয়েছিল। কিন্তু পরে তারা নিজেরাই কমিয়ে ১০টিতে নামায়। কিন্তু আওয়ামী লীগ দিতে চাইছে সর্বোচ্চ পাঁচটি।

এর মধ্যে মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে মাহী বি. চৌধুরী, আবদুল মান্নানের জন্য লক্ষ্মীপুর-৪, সমশের মবিন চৌধুরীর জন্য সিলেটের একটি, এম এম শাহীনের জন্য মৌলভীবাজার-২ এবং গোলাম সারোয়ার মিলনের জন্য মানিকগঞ্জে একটি আসনে ছাড়তে রাজি।

তবে সাতক্ষীরায় গোলাম রেজা, নীলফামারীতে জেবেল রহমান গানির জন্য আসন নিশ্চিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

আসন কমবে ওয়ার্কার্স পার্টির

ওয়ার্কার্স পার্টি শুরুতে চেয়েছিল ৩০টির মতো, পরে কমিয়ে চায় ১০টি এবং সব শেষ ঠেকেছে আটটিতে। তবে ২০১৪ সালে যে ছয়টি আসনে তাদের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে এসেছেন, তাদের মধ্যে নড়াইল-২ এ আওয়ামী লীগ প্রার্থী করেছে ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজাকে। ফলে এই আসনটি ওয়ার্কার্স পার্টিকে ছেড়ে দিতে হচ্ছে।

ওয়ার্কার্স পার্টি ওই আসনটি ছেড়ে দিয়ে ক্ষতিপূরণ হিসেবে চাইছে তিনটি আসন। এর একটি হলো যশোর-৪, মেহেরপুর-১ এবং নাটোর-১। কিন্তু আওয়ামী জানিয়ে দিয়েছে সম্ভব নয়।

ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আসন বণ্টনের প্রক্রিয়া এখনো সমাপ্ত হয়নি। কারণ জাতীয় পার্টির সঙ্গে ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে ফয়সালা কঠিন। তবে আমাদের অনেকের আসনপ্রাপ্তি হয়ে গেছে, যেমন আমরা যারা সংসদ সদস্য ছিলাম, তারাই নির্বাচন করবেন। তবে নড়াইল-২ এর বদলে অন্তত একটি চাইছি।’

বেশি পাবে না জাসদ

হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন জাসদ এরই মধ্যে ২২৪টি আসনে তাদের প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছে। তবে বর্তমান সংসদে তাদের সরাসরি ভোটে সংসদ সদস্য আছে তিনজন। এরা হলেন কুষ্টিয়া-২ আসনে হাসানুল হক ইনু, ফেনী-১ আসনে শিরীন আখতার এবং বগুড়া-৪ আসনে রেজাউল করিম তানসেন। এই তিনজনের বাইরে অন্য কাউকে দিতে রাজি হচ্ছে না আওয়ামী লীগ।

২০০৮ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনে জিতেছিলেন জাসদের শাহ জিকরুল আহমেদ। কিন্তু ২০১৪ সালে আসনটি পান আওয়ামী লীগের ফয়জুর রহমান বাদল। এই আসনটির পাশাপাশি দলের প্রতিষ্ঠাতা আবু তাহেরের স্ত্রী লুৎফা তাহেরের জন্য নেত্রকোনা-৫ আসন চাইছে জাসদ।

জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার বলেন, ‘পরীক্ষিত বন্ধুদের দিকে আন্তরিকতার সহিত নজর দেয়াটাই উত্তম বলে আমি মনে করি।’

নুরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বাধীন জাসদের বর্তমান দুই অংশে সংসদ সদস্য দুইজন। এরা হলেন চঞ্চগড়-১ আসনে নাজমুল হক প্রধান এবং চট্টগ্রাম-৮ আসনে মইনুদ্দিন খান বাদল। এর বাইরে সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়ার জন্য নড়াইল-১ চায়। তবে এটা এখনো নিশ্চিত হয়নি।

জেপি চায় তিনটা, নিশ্চিত দুটি

জাতীয় পার্টির (জেপি) সংসদ সদস্য দুইজন। এরা হলেন পিরোজপুর-২ আসনে দলের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এবং কুড়িগ্রাম-৪ আসনে রুহুল আমিন। এই দুইজনের মনোনয়ন নিশ্চিত করতে পেরেছে এই দল। এখন দরকষাকষি চলছে মাদারীপুর-৩ আসনের জন্য। সেখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী করতে চায় দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপকে। কিন্তু জেপি চাইছে দলের মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলামকে দেয়া হোক আসনটি।

সাম্যবাদী দল আসন পাবে?

চট্টগ্রাম-১ আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন। তবে এই আসনটি সাম্যবাদী দল চাইছে দলের সাধারণ সম্পাদক দীলিপ বড়–য়ার জন্য। ২০০৮ সালেও তিনি মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু তাকে আসন না দিয়ে টেকনোক্র্যাট কোটায় বানানো হয় মন্ত্রী।

আশাহত ইসলামী ঐক্যজোট

বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দল থেকে বের হয়ে এসে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোলা ইসলামী ঐক্যজোট চরমভাবে হতাশ হয়েছে। তারা প্রথমে চেয়েছিল ১০টি আসন। পরে কমিয়ে করা হয় আটটি, তারও পরে চারটি।

কিন্তু আওয়ামী লীগ এই জোটের প্রয়াত নেতা মুফতি ফজলুল হক আমিনীর ছেলে আবুল হাসানাত আমিনীর জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ এবং ঐক্যজোটের যুগ্ম মহাসচিব আলতাফ হোসেনের জন্য কুমিল্লা-১ আসন দিতে রাজি বলে দাবি করেছেন জোট নেতারা। তবে তারা দলের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ নেজামীর জন্য নরসিংদী-৩ এবং মহাসচিব মুফতি মোহাম্মদ ফয়জুল্লাহ চান চট্টগ্রাম-৭ আসন। তবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা হাছান মাহমুদ এই আসনের সংসদ সদস্য।

ধর্মভিত্তিক অন্যান্য দল

ধর্মভিত্তিক আরেক দল তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভা-ারি বর্তমানে চট্টগ্রাম-২ আসনের সংসদ সদস্য। তাকে ওই আসনটি আবার দেয়া হচ্ছে এটা নিশ্চিত।

দলটি লক্ষ্মীপুর-১ আসনটি ২০১৪ সালে পেয়েছিল। তবে ওই আসনের সংসদ সদস্য এম এ আউয়াল বর্তমানে তরীকত ফেডারেশনে নেই। ওই আসনটি এখন তরীকত চাইছে দলে নতুন যোগ দেয়া আনোয়ার খানের জন্য। তবে এখনো রাজি হয়নি আওয়ামী লীগ।

আউয়াল আবার ইসলামিক ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স নামে নতুন দল গড়ে তুলেছেন। তিনি চান লক্ষ্মীপুর-১সহ তিনটি। তবে একটিও পাবে কি না নিশ্চিত নয়।

ইসলামিক ফ্রন্টের চেয়ারম্যান সৈয়দ বাহাদুর শাহ মুজাদ্দেদী দীর্ঘদিন ধরেই চাইছেন চাঁদপুর-৫ আসনটি। তবে ওই আসনে বর্তমানের সংসদ সদস্য সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রফিকুল ইসলাম। তাকে বাদ দিয়ে আসনটি ইসলামিক ফ্রন্টকে দেয়া হলে সেটি চমকই বলা যাবে।

ধর্মভিত্তিক আরেক দল জাকের পার্টি চায় ফরিদপুর-২ এবং রাজবাড়ী-১ আসন। কিন্তু ফরিদপুরের ওই আসনটি আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেত্রী সাজেদা চৌধুরীর আর রাজবাড়ী আসনের সংসদ সদস্য শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলীর।

তবে ফরিদপুর-২ আসনটি দলের চেয়ারম্যান খাজা মোস্তফা আমীর ফয়সল মুজাদ্দেদীকে দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে জাকের পার্টি।

আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন বলেন, ‘আমাদের দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত হয়েছে। জোটের প্রার্থীও চূড়ান্ত হওয়ার পথে। তালিকা আজকালকের বৈঠকে চূড়ান্ত হবে। তারপর সবগুলো এক সঙ্গে প্রকাশ করা হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

দেশ গরমে পুড়ছে, সরকার মিথ্যা উন্নয়নের বাঁশি বাজাচ্ছে: এবি পার্টি

বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদ সালাম-মজনুর

নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে রাজধানীতে রিজভীর নেতৃত্বে মিছিল

মন্দিরে আগুন ও দুই শ্রমিক পিটিয়ে হত্যায় বিএনপির উদ্বেগ, তদন্ত কমিটি গঠন

প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় এদেশে আইনের প্রয়োগ হয়: রিজভী

দেশি-বিদেশি চক্র নির্বাচিত সরকারকে হটানোর চক্রান্ত করছে: ওবায়দুল কাদের

প্রতিমা পোড়ানোর মিথ্যা অভিযোগে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শাস্তি দিতে হবে: ছাত্রশিবির সভাপতি

আল্লামা ইকবালের ৮৫তম মৃত্যুবার্ষিকীতে মুসলিম লীগের আলোচনা সভা

সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যার প্রতিবাদ জানাল রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন

ভারতীয় পণ্য বর্জন চলবে: ফারুক

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :