কেন আত্মহত্যা করছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা?

শেখ আদনান ফাহাদ
 | প্রকাশিত : ২৬ নভেম্বর ২০১৮, ১২:১৫

আমার নামে নাম। আদনান। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস ফ্যাকাল্টির ছাত্র। বিবিএ, এমবিএ কমপ্লিট করল; কিন্তু সে একদিন আত্মহত্যা করে বসল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একের পর এক ছাত্র আত্মহত্যা করছে। এমনটা আগে শোনা যেত না।

ছাত্রজীবনে ছয় বছর ঢাবিতে স্যার এএফ রহমান হলে ছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন ইউএনবির বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হিসেবে সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত ছিলাম। সে সময় কোনো ছাত্রের আত্মহত্যা নিয়ে নিউজ করেছি বলে মনে পড়ে না। সড়ক দুর্ঘটনায় ছাত্র মারা গেছে, কিন্তু আমাদের ছাত্রজীবনে ঢাবিতে কেউ আত্মহত্যা করেছে বলে মনে পড়ে না। আত্মহত্যা কেন করছে এসব মেধাবী তরুণরা? সে নিজে দায়ী? নাকি সমাজ ও রাষ্ট্র দায়ী? আত্মহত্যার পথ পরিহার করা যায় কীভাবে?

আত্মহত্যার মানে কী? সহজ বাংলায় নিজেকে মেরে ফেলা। একেবারে জানে মেরে ফেলা। পৃথিবী থেকে নিষ্ঠুরভাবে বিদায় নিয়ে নেওয়া। একজন জীবন্ত, জলজ্যান্ত মানুষ নিজেকে চিরতরে শেষ করে দেয়। কেউ নিজের মাথায় গুলি করে, কেউ বিষ খেয়ে, কেউ ফ্যানের সাথে ঝুলে, কেউ নদী/সাগরে ঝাপ দিয়ে, কেউ উঁচু ভবন থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করে। এটা তিলে তিলে নিজেকে নিঃশেষ করা নয়। মুহূর্তের মধ্যে আকস্মিকভাবে নিজেকে হত্যা করা। কেন জীবিত মানুষ নিজের হাতে নিজেকে খুন করে? কারণগুলো কি শুধুই ব্যক্তিগত? নাকি পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র সমানভাবে দায়ী?

ভারতে কৃষক আত্মহত্যা করে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে। পশ্চিমা ‘উন্নত’ বিশ্বে অনেকে আত্মহত্যা করে পুঁজিবাদ-সৃষ্ট একাকিত্ব থেকে বাঁচতে! কিন্তু আমাদের বাংলাদেশে মানুষ কেন আত্মহত্যা করে? দরিদ্রতা, কর্মহীনতার জন্য মানুষ বাংলাদেশে আত্মহত্যা করে? হতে পারে, জীবনযুদ্ধে পরাজিত হয়ে একজন মানুষ আত্মহত্যা করে বসল। স্কুল কলেজের ছেলেমেয়েরা অনেক ক্ষেত্রে রেজাল্টসংক্রান্ত কারণে আত্মহত্যা করে। অনেকে আবার প্রেমঘটিত বিষয়ে আত্মহত্যা করে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেও কেউ কেউ হৃদয়ঘটিত কারণে আত্মহত্যা করে। এসব কারণে আত্মহত্যার প্রবণতা পুরনো। কিন্তু সম্প্রতি কিছু আত্মহত্যার দুঃসংবাদ এসেছে যার পেছনে নতুন সব কারণ দেখা গেছে।

বছরখানেক আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস ফ্যাকাল্টির একটি ছেলে আত্মহত্যা করেছিল স্মার্ট আর বিত্তশালী ব্যাচম্যাটদের সাথে নানা বিষয়ে তাল মেলাতে না পেরে। সর্বশেষ একটি ছেলে আত্মহত্যা করেছে একাডেমিক কারণে (?)। একাডেমিক কারণটা কী?

খবরে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী (২০১৪-১৫ সেশনের) হুজাইফা রশিদ টঙ্গীতে তার নিজ বাড়ির কক্ষে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে আত্মহত্যা করেন। হুজাইফার পরিবার থেকে বলা হয়েছে, হুজাইফা তার অ্যাকাডেমিক লাইফ নিয়ে কিছুটা হতাশ ছিল। পরিবার তাকে অনেক বোঝালেও শেষ রক্ষা হয়নি। হুজাইফার আত্মহত্যার কারণ তদন্ত করে দেখবে কি এই রাষ্ট্র? কী ছিল তার সেই একাডেমিক কারণ? আত্মহত্যা করা হুজাইফাকে নিয়ে তার শিক্ষক আইনুল ইসলাম লিখেছেন, হুজাইফাকে আমি দুটো কোর্স পড়িয়েছি। সেদিন আমার সাথে দেখা করে গেল। আমাকে ইমেইল করল। ফিউচার নিয়ে কিছুটা হতাশা ওর মধ্যে ছিল। কোনোভাবেই মানতে পারি না যখন পত্রিকায় লিখে ‘কারণ জানা যায়, ‘দীর্ঘদিন ধরেই হুজাইফা তার একাডেমিক বিষয় নিয়ে হতাশ ছিলেন।’... এভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র ‘একাডেমিক বিষয় নিয়ে হতাশার’ কারণে আমাদেরকে ছেড়ে চলে যাবে! মানতে পারি না! দায় এড়াতে পারি না! তাহলে কি আমরা পারি না ‘তাদেরকে একাডেমিক বিষয়ে আগ্রহী করে তুলতে’? আমি দ্বিতীয় সেমিস্টারে পড়াই! প্রথম সেমিস্টার শেষে যখন ওরা আসে, অনেকের মধ্যে হতাশা দেখতে পাই; অনেক মেধাবী ছেলেমেয়ে বিষয়ের প্রতি মনোযোগ হারিয়ে ফেলে; ক্লাসের পেছনে বসে থাকে, অনেকেই আবার ক্লাসে আসেই না।... হতাশা এবং বিষণœতা তাদের সঙ্গী হয়ে ওঠে। সমাজ, রাষ্ট্র বঞ্চিত হয় এইসব মেধাবী তরুণদের সেবা থেকে। তাদের জীবনও হয়ে ওঠে বিষণœ। ... প্রতিটা বিষয়েই নিশ্চয় এমনটা আছে। শিক্ষক হিসাবে আমাদের দায় আছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের দায় আছে। বিষয়টি নিয়ে আমাদের এখনই ভাবা দরকার!’

হুজাইফাকে বাঁচানো যেত? চলতি বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত আটজন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। সর্বশেষ গত ১৬ নভেম্বর মেহের নিগার দানি নামে ইংরেজি বিভাগের সাবেক এক ছাত্রী আত্মহত্যা করেন। এর আগে ১৪ নভেম্বর গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী লাইলা আঞ্জুমান ইভা আত্মহত্যা করেন। তার আগে ১২ নভেম্বর বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ফাহমিদা রেজা সিলভী নামে এক ছাত্রী আত্মহত্যা করেন।

ভাবা যায় না। এতজন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করল শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই! অথচ বিশ্ববিদ্যালয় ও রাষ্ট্রের নীতি-নির্ধারকদের টনক নড়েছে বলে মনে হচ্ছে না। আত্মহত্যাবিহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করা কঠিন। কিন্তু আত্মহত্যার প্রবণতা কমিয়ে আনা খুব কঠিন কাজ নয়।

বাংলাদেশ সমাজ-অর্থনীতির নানা ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাক্ষী দিচ্ছে স্বয়ং বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘ। কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ছে প্রতিনিয়ত। বিশেষ করে সরকারি চাকরিতে অভাবনীয় সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। নিয়মিতভাবে বিসিএস পরীক্ষা হচ্ছে। বিসিএস ছাড়াও সরকারি অন্যান্য চাকরির পরীক্ষা ও নিয়োগ প্রক্রিয়াও গতিশীল হয়েছে।

তাহলে সমস্যা কোথায়? নাকি এই সরকারি চাকরির ভেতরেই লুকিয়ে আছে আত্মহত্যার অন্যতম কারণ? দেশের তরুণ সমাজ আর তাদের অভিভাবকদের মধ্যে সরকারি চাকরি নিয়ে যে উন্মাদনা সৃষ্টি হয়েছে সেটি অভূতপূর্ব। দিন দিন সরকারি চাকরির প্রতি শিক্ষিত ছেলেমেয়েদের আগ্রহ যেন ব্যাধিতে রূপ নিচ্ছে। এই ব্যাধি সৃষ্টির পেছনে শুধু শিক্ষার্থীদের দোষ দেখলে হবে না। রাষ্ট্র নিজেই এই সমস্যা তৈরি করেছে। সাংবাদিকতায় পড়ে অধিকাংশ ছেলেমেয়ে সাংবাদিক হতে চায় না, নাটকে পড়ে অনেকে থিয়েটার কর্মী হতে চায় না, সিএসই পড়ে জয়েন করে পুলিশে। ডাক্তাররা পর্যন্ত ম্যাজিস্ট্রেট হওয়ার চিন্তা করেন, যার হওয়ার কথা পদার্থবিজ্ঞানী, সে হয় ট্যাক্স অফিসার!

লাইব্রেরিতে গিয়ে সৃজনশীল পড়াশোনা করার সুযোগ পাওয়ার চিন্তাও করা যায় না। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিসহ পাবলিক লাইব্রেরিগুলোতে এখন আর সাধারণ মানুষ বসার জায়গা পায় না। ফজরের আজান থেকেই ছেলে-মেয়েরা লাইন দিয়ে লাইব্রেরিতে আগে প্রবেশ করার প্রতিযোগিতায় নামে। ছেলেমেয়েরা কোনোমতে অনার্স কমপ্লিট করার অপেক্ষায় থাকে। অনার্স শেষ হয়ে যায়, আর ক্লাসে আসার গরজ করে না। অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী অনার্স ডিগ্রি নিচ্ছে বিসিএস পরীক্ষার দেয়ার কাবিল হওয়ার জন্য। শুধু বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার কাবিল হওয়ার জন্য যদি ছাত্র-ছাত্রীরা অনার্স পর্যন্ত অপেক্ষা করে তাহলে এতসময় নষ্ট করার কোনো মানে হয় না। চার বছর অনার্স করার কী দরকার? দেশের নীতি নির্ধারক মহলকে এটা নিয়ে ভাবতে হবে। শুধু বিসিএস ক্যাডার হওয়া যদি জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য হয় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কনসেপ্ট এ পরিবর্তন আনতে হবে। এভাবে চলতে পারে না। শিক্ষকদের মহামূল্যবান লেকচার ছেলে-মেয়েদের এক কান দিয়ে ঢুকে, অন্য কান দিয়ে বের হয়ে যায়।

সরকারি চাকরি নিয়ে, বিশেষ করে কয়েকটি ক্যাডার সার্ভিস নিয়ে এত উন্মাদনা সৃষ্টি করেছে রাষ্ট্র নিজে। সরকারি চাকরিতে বেতন বেড়েছে ১২৩ ভাগ। বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ায় সরকারি চাকুরেরা ভালো জীবনযাপন করলেও বেসরকারি ক্ষেত্রে অসামঞ্জস্যতা বিদ্যমান। সাংবাদিকতায় অনার্স, মাস্টার্স করে একটি ছেলে বা মেয়ে মাত্র ১২/১৪ হাজার টাকা দিয়ে বিভিন্ন ভালো চ্যানেল বা পত্রিকায় কাজ শুরু করে। আজকাল একজন নতুন ড্রাইভার রাখতে গেলেও ১৫/২০ হাজার টাকা দিতে হয়। আবার কোনো কোনো বেসরকারি চাকরিতে বেতন ভালো হলেও তথাকথিত ‘সম্মান’ দেয় না সমাজ। এই ‘সম্মান’ এর অনুভূতি সৃষ্টি করে রেখেছে রাষ্ট্র নিজে। কয়েকটি ক্যাডারের অফিসাররাই শুধু এই সম্মান পেয়ে থাকেন। রাষ্ট্রের সুযোগ সুবিধাও যেন তাদের জন্য। এই সম্মানের জন্যই আজকাল মেধাবী ডাক্তাররা পর্যন্ত ম্যাজিস্ট্রেট আর পুলিশ অফিসার হওয়ার দৌড়ে শামিল। সরকারি-বেসরকারি সব চাকরিতে সম্মান ও সুযোগ-সুবিধার মধ্যে সামঞ্জস্য আনা রাষ্ট্রের নীতি-নির্ধারকদের অবশ্য কর্তব্য।

পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে নানাবিধ সমস্যা থাকবেই। পরিবার ভেঙে যেতে পারে, সমাজ ও রাষ্ট্র সবার সমস্যার সমাধান নাও দিতে পারে। তাই বলে আত্মহত্যা সমস্যা থেকে মুক্তির জন পথ হতে পারে না। ব্যক্তিগতভাবে আমার জীবনে আত্মহত্যা করার ইচ্ছা কখনো হয়নি। ভবিষ্যতের কোনো দুশ্চিন্তায় আমি বর্তমানকে হতাশাগ্রস্ত হতে দিইনি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমার ‘বর্তমান’ ছিল কর্মমুখর। আমি বিকেলের পর থেকে কাজ করতাম। পার্টটাইম জব শুরু করি দ্বিতীয় বর্ষের শুরু থেকেই। সাংবাদিকতার ছাত্র হিসেবে আমি মিডিয়াতে কাজ করেই নিজের পড়ালেখার খরচ যোগাতাম। অর্থের প্রয়োজনে কাজ করতে গিয়ে আমি আমার ভবিষ্যৎও তৈরি করছিলাম। ছাত্রজীবনে নিজেকে কখনো বেকার বলে মনে হয়নি, বেকারত্ব কী, সেটি আমার বোঝার বাইরে। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, রাষ্ট্র যতই বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা সৃষ্টি করে রাখুক না কেন, নিজেকে অর্থকরী ও সৃজনশীল কোনো কোনো কাজে ব্যস্ত রাখতে পারলে, নিজের সততা, আন্তরিকতা আর ভালোলাগার ওপর বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা থাকলে আত্মহত্যার চিন্তাও কারও মাথায় আসবে না।

নিজেকে শেষ করে দেয়ার আগে বাবা, মা, ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধবদের কথা মনে করে নিজের জীবনে তাদের অবদানের কথা মনে করলে কেউ আত্মহত্যা করতে পারবে না। কোনো শিক্ষক যদি বৈষম্য করে, তার ওপর রাগ করে কিংবা হতাশ হয়ে নিজেকে হত্যা করার কি কোনো মানে আছে? বৈষম্য সৃষ্টিকারী সেই শিক্ষক থেকে অনেক বেশি আপন, অনেক বেশি কাছের, অনেক বেশি ভালোবাসার মানুষ নিজের বাবা-মা, ভাই-বোন, ভাবিরা। যারা প্রেমঘটিত কারণে আত্মহত্যা করেন তাদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। অন্যের কাছে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে পরে হতাশ হয়ে আত্মহত্যা করার কোনো মানে হয় না। ভালোওবাসতে হবে, পাশাপাশি সতর্ক ও সজাগ থাকতে হবে।

আমাদের আশেপাশে এমন কেউ যদি থাকে যে সে জীবন, সংসার নিয়ে হতাশ তাহলে তার পাশে দাঁড়ানো আমাদের দায়িত্ব। দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব ঠিকঠাক পালন করলে সমাজে আত্মহত্যার প্রবণতা কমে আসবে। নিজে হতাশ হওয়া যাবে না, অন্যকেও হতাশ হতে দেয়া যাবে না। স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে হবে। স্বপ্ন আমাদের বাঁচিয়ে রাখবে।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :