পুরনো স্বাদ পেতে নতুন খোলসে!

মোহাম্মদ আবু নোমান
 | প্রকাশিত : ৩০ নভেম্বর ২০১৮, ১৪:০৮

আলোচিত, সমালোচিত আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি গোলাম মাওলা রনি বিএনপিতে। সর্বত্র ব্যাপক চাউর হওয়া এ হলো চলতি গরম খবর! রাজনীতিবিদেরা তো নিজেদের নীতিহীনতাকে আড়াল করতে মোক্ষম একটা সেøাগান আগে থেকেই বাঙালিদের সামনে ঝুলিয়ে রেখেছেন, তা হলো ‘রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই’। সারা জীবন ধরে যাদের বিপরীতে বসে, যাদের বিরুদ্ধে বড় বড় বুলি আওড়িয়েছেন, আজ তাদের পাশে বসে নিজের বলা কথাগুলো নিজের গায়ে মাখিয়ে নেওয়ার নীতিহীন আদর্শের নামই কি রাজনীতি? ‘নীতি’ নামক শব্দটা এখন শুধুই বইয়ের পাতায় রেখে আর বাংলাদেশের ভাষা থেকে ‘লজ্জা’ শব্দটা মুছে দেওয়া যায় না? গোলাম মাওলা রনি সম্প্রতি বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে গিয়ে ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ ত্যাগ করে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে’ যোগদান করেছেন। এ সময় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উপস্থিত ছিলেন।

গত ১০ বছর যিনি তার ‘অসাধারণ পা-িত্যপূর্ণ’ কলামে বিএনপিকে অথর্ব দল হিসেবে প্রমাণ করার অব্যর্থ সব যুক্তি দেখিয়েছেন, আজ তিনি নিজে সেই দলে যোগ দিয়ে, ক্ষমতায় আসতে আপস করলেন? যিনি আওয়ামী লীগের সাংসদ থাকাকালীন বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলা দিয়ে হয়রানির কাজ কোনোটাই কম করেননি। সাংবাদিক পেটানো সেই এমপি রনি আবার পুরনো স্বাদ পেতে চান নতুন খোলসে! এত দিন যে দলের দোষ খুঁজে বেড়িয়েছেন আজ সেই দলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হবেন! বাহ! কী চমৎকার আমাদের রাজনৈতিক চেতনা! মুহূর্তে ‘জয় বাংলা’, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ হয়ে যাবে! যিনি আজ এক কথা বলেন, কাল আবার আরেক কথা বলেন, একবার বলেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী, আবার বলেন জিয়ার আদর্শে বিশ্বাসী; সে দেশের জন্য বা মানুষের জন্য যে কী করতে পারবে, সে ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহের কারণ থাকে কি? একদিন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাওয়া লোকটা কী আদর্শের জন্য বিএনপিতে গেল তা বুঝতে কারও বাকি থাকে না।

যদিও দেশে দলবদলের জোয়ার বইছে। তার পরও অন্য সব রাজনীতিক থেকে গোলাম মাওলা রনি স¤পূর্ণ ভিন্ন। কারণ, অন্যান্য নেতাদের কেউই এত নীতি আর আদর্শের খই ফোটাননি, বিভিন্ন মিডিয়ায় তিনি যতটা ফুটিয়েছেন। এত নীতিবান মানুষ আগে আওয়ামী লীগ করতেন আর আজকে মনোনয়নের অন্তিম মুহূর্তে কোনো সবুজ সংকেত না পেয়ে বিএনপিতে যোগ দিয়ে কী নীতি রক্ষা করবেন?

রাজনীতি হলো ‘নীতির’ ব্যাপার, আদর্শের ব্যাপার, চিন্তা-চেতনার ব্যাপার। মানুষ ভেঙে যেতে পারে, কিন্তু নীতি-আদর্শ বা সুবিধার জন্য নুয়ে যেতে পারে না। ইতিমধ্যে জোটের মধ্যে আসন ভাগাভাগি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল হোসেন বলেছিলেন, ‘পিঠা ভাগ করতে গেলেও টানাটানি করতে হয়।’ অর্থাৎ ড. কামাল ‘কথার কথায়’ সংসদীয় আসনকে ‘পিঠা’র সঙ্গে তুলনা করলেন! পিঠা মানেই যে হালুয়া রুটি! রাজনীতি এখন খুব লাভজনক বিজনেস। আপামর জনগণ তথা গণতন্ত্র হলো পণ্য। একে যেভাবে যে পারে, সবাই ব্যবহার ও প্রয়োজনমতো টানাটানি, বেচাকেনা করে থাকে। এখানে ব্যবসা হয়নি, তাই অন্য কোথাও হবে! কিন্তু ক্ষমতা হারালেই শুধু ‘কালো বিড়াল’ বেরিয়ে আসে, এর আগে যেন সবাই ‘ধোয়া তুলসী পাতা’।

২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পটুয়াখালী-৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন লাভ করে জয়ী হন গোলাম মাওলা রনি। পরে তিনি দল থেকে বহিষ্কৃত হন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন, কিন্তু পাননি। সম্প্রতি তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন বলে আভাস দিয়েছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লিখেছেন, ‘মানুষের কান্নায় গলাচিপা-দশমিনার আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে গিয়েছে...উপরোক্ত অবস্থার প্রেক্ষিতে আমি নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মহান আল্লাহর ওপর নির্ভর করে নির্বাচনের মাঠে নামব। দেখা হবে সবার সঙ্গে এবং দেখা হবে বিজয়ে।’

পটুয়াখালী-৩ আসনটা বরাবরই আওয়ামী লীগের ঘরের আসন নামেই পরিচিত। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সময়ের শিক্ষামন্ত্রী আবদুল বাতেন ছাড়া এই আসনে কখনোই বিএনপির প্রার্থীর জয়লাভ করার কোনো রেকর্ড নেই। এই আসনের সবচাইতে পুরোনো এবং ত্যাগী নেতা আ খ ম জাহাঙ্গীরের পরিবর্তে সিইসির ভাগনে এস এম শাহজাদা সাজু আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন। রনির দলবদলে এই আসনের ফল কী দাঁড়ায়, তা দেখতে অপেক্ষা করতে হবে আগামী ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের অন্যতম শরিক দল এরশাদের জাতীয় পার্টি। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে এরশাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের এখনো পর্যন্ত আসন সমঝোতা হয়নি। শুরুর দিকে এরশাদ ৭০-৮০ আসন দাবি করলেও সেই অবস্থান থেকে সরে এসে ৪৭টি আসনের দাবি তুলেছেন। গণমাধ্যমে সেই ৪৭ প্রার্থীর নামও প্রকাশ করেছে জাপা। এরশাদের দলের মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, আসন্ন নির্বাচনে ২০০ আসনে প্রার্থী দেবে জাপা। আসন বণ্টনে এরশাদ ও তার দল যথেষ্ট খুশি হয়নি। তাই সম্প্রতি এরশাদ সিএমএইচে ভর্তি হওয়ায় সবারই উৎসুক দৃষ্টিÑনতুন কিছু ঘটছে নাকি?

লেখক: কলামিস্ট, কদমতলী, ঢাকা।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :