রনি-জাহাঙ্গীরে দুই ভুল আ.লীগের

মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু
| আপডেট : ০১ ডিসেম্বর ২০১৮, ২০:০২ | প্রকাশিত : ০১ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৪:৩৪

দেশের পত্রপত্রিকায় কিংবা টকশোগুলোতে গোলাম মাওলা রনি একটি পরিচিত নাম। প্রতিদিন পত্রিকার পাতা খুললেই তার কোনো না কোনো বিষয়ের ওপর লেখা চোখে পড়ে।

ব্যক্তিগতভাবে আমার সঙ্গে তার কখনো দেখা হয়নি। তবে আওয়ামী লীগের এমপি থাকাকালে তিনি একবার স্টকহোম সফরে আসেন। ওই সময় তার সঙ্গে অন্যান্য সংসদ সদস্যরাও ছিলেন।

দেশে ফিরে তার এই সফর সম্পর্কে একটি লেখায় বিএনপির একজন নারী সংসদ সদস্য নিয়ে কিছু রসিকতা করেছিলেন। শুনেছি স্টকহোম অবস্থানকালে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা তার (রনি) সঙ্গে দেখা করেন, ছবি তোলেন। সেই ছবি আবার আপলোডও করেন। তবে আওয়ামী লীগের এমপি হলেও আমার কাছে তিনি ছিলেন একজন গুরুত্বহীন ব্যক্তি।

রনির নাম আমি প্রথমে শুনি যখন তিনি পটুয়াখালীর দশমিনা-গলাচিপা এলাকা থেকে আওয়ামী লীগের টিকিটে এমপি নির্বাচিত হন। কারণ, এই এলাকাটা আমার কাছে অনেক আগে থেকে পরিচিত।

আমার একসময়ের রাজনৈতিক বন্ধু ঢাকার ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (১৯৭৩) শ ম জাহাঙ্গীরের মুখে আমি গলাচিপার কথা প্রথম শুনি। জাহাঙ্গীর এখন না-ফেরার দেশে চলে গেছে। শুনেছি মৃত্যুর আগে তিনি এই এলাকায় বঙ্গবন্ধু কলেজের উন্নয়নে কাজ করেছেন।

তবে স ম জাহাঙ্গীর না থাকলেও সেখানে আমার পরিচিত দ্বিতীয় ব্যক্তি আছেন। তিনি হলেন আ খ ম জাহাঙ্গীর। তিনি একসময় ছাত্রলীগের সভাপতি ও পরে শেখ হাসিনার ৯৬ মন্ত্রিসভায় পাট প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে ফখরুদ্দিন আহমেদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তিনি সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিত অংশে জড়িয়ে পড়েন জানিয়ে তাকে দূরে ছুড়ে ফেলা হয়েছিল। এই কারণেই হঠাৎ করে ভাগ্য খুলে যায় রনির।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রনির মুখোশ উন্মোচন হলো গত নির্বাচনে (২০১৪) দ্বিতীয়বারের মতো তাকে প্রার্থী না করে খ ম জাহাঙ্গীরকে করা হয়।

রনি কোনোদিন ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ করেছেন বলে আমার জানা নেই। সত্যি সত্যি যদি তা-ই হয়ে থাকে তাহলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কোনো দল না করা সত্ত্বে¡ও সেদিন ঠিকই তিনি আওয়ামী লীগের নির্বাচনী টিকিট জোগাড় করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

তার কৌশলের প্রশংসা না করে উপায় নেই। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে তিনি কৌশলে নিজের পক্ষে নিয়ে আসতে সক্ষম হন। হয়েছেন এমপি। সম্পূর্ণ অপরিচিত এক ব্যক্তি রাতারাতি সারা দেশে পরিচিত হয়ে উঠলেন। এমন সৌভাগ্য কয়জনের হয়।

কথায় বলে শাক দিয়ে কখনো মাছ ঢাকা যায় না। রনির বেলায়ও একসময় তাই হলো। টকশো ও পত্রপত্রিকার মাধ্যমে একসময় সামনে বেরিয়ে আসতে লাগল তার আসল চেহারা। শেষ পর্যন্ত তাকে যেতে হলো জেলে। হারালেন তার এমপি পদ।

কিন্তু তবু তিনি থামবার মানুষ নন। খুব কৌশলে লেখালেখি ও টকশোর কাজ চালিয়ে যান। এর মাঝে তিনি শাহরিয়ার কবিরকে অসম্মান করে তার ফেসবুকে একটি পোস্টও দিয়েছিলেন। যেটা বাঁশের কেল্লাসহ এই গোষ্ঠীর মিথ্যাবাদীরা প্রচার করে।

ওই পোস্টের সূত্র ধরে আমি রনির ফেসবুকে বিভিন্ন পোস্টগুলো পড়লাম। সবকিছু দেখে আমাকে অবাক হতে হয়েছে। ভাবলাম আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা এ ধরনের চিন্তাধারার একজন ব্যক্তিকে কীভাবে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দিলেন?

টিভিতে রনির লাগামহীন মিথ্যা আর ফেসবুকে লেখা দেখে মনে হয় তিনি কখনো আওয়ামী লীগের আদর্শের লোক ছিলেন না। তিনি সুযোগ বুঝে দলে ঢুকে পড়েছেন। সময় আসলে ভবিষ্যতে হয়তো তার আসল চেহারা উন্মুক্ত হতে পারে।

না দেখে, না জেনে শুনে রনিকে মনোনয়ন দেওয়া কত ভুল ছিল তা এখন আওয়ামী লীগ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। তাহলে কি আওয়ামী লীগ এবার সেই একই ভুল করতে যাচ্ছে?

পটুয়াখালী-৩ আসনে এবার খ ম জাহাঙ্গীরকে মনোনয়ন না দিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ভাগ্নে ছাত্রলীগের সাবেক স্থানীয় নেতা এস এম শাহাজাদাকে। এ কারণে বিরোধী দলগুলো থেকে আওয়ামী লীগ এখন সমালোচনার মুখে পড়েছে। নির্বাচন কমিশনকে এখন অনেকেই সন্দেহ করছে। আসছে নিরপেক্ষতার প্রশ্ন। আওয়ামী লীগ কি আবার তাদের আপনজনকে চিনতে ভুল করছে? তা না হলে ছাত্রজীবন থেকে পরীক্ষিত ও পঁচাত্তরের পরবর্তীতে আন্ডারগ্রাউন্ডে ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত করতে যিনি অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন তাকে কেন আবার প্রত্যাখ্যান করা হলো? বিষয়টি এলাকার মানুষের কাছে পরিষ্কার নয়।

রনি ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী খ ম জাহাঙ্গীরের বিপরীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে লড়াইয়ে নেমে হেরে যান। বিপুল ভোটে জেতেন জাহাঙ্গীর। তার সঙ্গে আমার পরিচয় ১৯৭২ সালে। ১৯৭৪-৭৫ বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জেনারেল জিয়ার সামরিক আইনের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ঢাকা শহরে যারা সেদিন ছাত্রলীগকে সংগঠিত করেছিলেন তাদের একজন ছিলেন জাহাঙ্গীর। এই সময় আরও যারা সক্রিয় ছিলেন তাদের মধ্যে ওবায়দুল কাদের, উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, মমতাজ হোসেন, ইসমত কাদির গামা, মানিকগঞ্জ আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি গোলাম মহিউদ্দিন, কামাল আহমেদ মজুমদার, মুকুল বোস, চট্টগ্রামের এস এম ইউসুফসহ আরও অনেকে।

৪ নভেম্বরের (১৯৭৫) মৌন মিছিল থেকে শুরু করে ছাত্রলীগের সবকিছুতেই তাদের অবদান আওয়ামী লীগকে স্বীকার করতে হবে। কারণ ওই সময় ছিল আওয়ামী লীগের জন্য সবচেয়ে দুর্দিন।

সেই দুঃসময়ের পরীক্ষিত জাহাঙ্গীরকে কেন বঞ্চিত করা হলো জানি না। আশা করি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড নুতন করে ভেবে দেখবে।

১৯৯১ ও ১৯৯৬ ও ২০১৩ মোট তিনবার আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন জাহাঙ্গীর হোসাইন। আশা করি সময় থাকতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা বিষয়টি গুরুত্ব দেবেন।

রনির বিএনপিতে যোগদানের সমালোচনা করব না আমি। এটা তার সম্পূর্ণ একান্ত ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। তবে একদিন আওয়ামী লীগ করে যিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কথা ও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসের পক্ষে টিভির টকশো ও পত্রপত্রিকায় সাফাই গেয়েছেন, তিনি আজ কী করে জিয়ার ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করছেন? মুখে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের কথা বলে এখন বলছেন, ‘আমি সারা জীবন বিএনপির রাজনীতির সাথে থাকব’। এত দিন পর আজ তাহলে তার আসল চরিত্র উন্মোচন হলো।

লেখক: সুইডেন প্রবাসী

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :