শান্তিচুক্তির ২১ বছর

পাহাড়ে থামেনি ভাতৃঘাতী সংঘাত

হিমেল চাকমা, রাঙামাটি
| আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৫:২২ | প্রকাশিত : ০২ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৮:৪৫
ফাইল ছবি

পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২১ বছর পূর্তি আজ। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পাহাড়ে শান্তি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে বর্তমান জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) একটি সমঝোতা হয়। জেএসএস সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমা ও সরকারের পক্ষে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। তারই ধারাবাহিকতায় পালিত হয়ে আসছে পার্বত্য শান্তিচুক্তির বর্ষপূর্তি।

এ চুক্তির ফলে সরকারের কাছে অস্ত্র জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন জেএসএসের প্রায় দুই হাজার সদস্য। এ ছাড়া পার্বত্য জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়, পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি আইন প্রণয়ন করা হয়।

বহুল আলোচিত এ চুক্তির বিরোধী সংগঠন ইউপিডিএফও তাদের আগের অবস্থান থেকে সরে আসছে। চুক্তির বিরোধিতায় সশস্ত্র সংগঠনটি আগে পাহাড়ে সক্রিয় থাকলেও তারাও এখন শান্তিচুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন চায়। তবে দলটি থেকে বেরিয়ে একদল সদস্য নতুন করে তৈরি করে ইউপিডিএফ সংস্কারবাদী।

এদের সঙ্গে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘাত হচ্ছে প্রায়। ভাতৃঘাতী এসব সংঘাতে এ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে সাড়ে ৭০০ এর অধিক মানুষ। সংঘাতের ফলে মাঝে মাঝেই অস্থির হয়ে ওঠে পার্বত্য চট্টগ্রাম।

জেএসএসের দাবি শান্তিচুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে মাত্র ২৫টি বাস্তবায়ন হয়েছে। বিশেষ করে চুক্তিতে পাহাড়ে অস্থায়ী সেনাবাহিনীর ক্যাম্প প্রত্যাহারের কথা বলা হলেও তাও বাস্তবায়ন হয়নি বলে অভিযোগ সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএসের।

আঞ্চলিক পরিষদের নির্বাচন ও অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন চান চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচন হচ্ছে না। ফলে আঞ্চলিক পরিষদের নির্বাচনও হতে পারছে না। ভূমি বিরোধ বিরোধ আইন সংশোধন হলেও একটি বিচারও নিষ্পত্তি হয়নি। ভারত প্রত্যাগতদের পুনর্বাসন হয়নি। অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনও করা হয়নি।’

শান্তিচুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি স্বীকার করেছেন সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনু। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি আইন সংশোধন হয়ে কাজ শুরু হয়েছে। চুক্তির অবাস্তবায়িত অংশগুলোও বাস্তবায়ন হয়ে যাবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুবই আন্তরিক।’

রাঙামাটির সংসদ সদস্য ও জেএসএস সহ-সভাপতি উষাতন তালুকদার বলেন, ‘অতীতে কোনো সরকার চুক্তি বাস্তবায়নে আন্তরিকতা দেখায়নি। আগামীতে যারা ক্ষমতায় আসবে তাদের চুক্তি বাস্তবায়নের কর্ম পরিকল্পনা নির্ধারণ করে নির্বাচনী ইশতেহারে দিতে হবে।’

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরূপা দেওয়ান বলেন, ‘পার্বত্য চুক্তি সম্পাদনের দীর্ঘ সময়ের পরও চুক্তি বাস্তবায়ন বিলম্ব হওয়ায় একাধিক দল সৃষ্টির সুযোগ তৈরি হয়। বাড়ে অবিশ্বাস। শুরু হয় হানাহানি। এতে অনেক লোক মারা গেল। অনেক নারী স্বামী হারাল। এসব বন্ধ করতে চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নের বিকল্প নেই।

রাঙামাটি সচেতন নাগরিক কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে পাহাড়ে উন্নয়নে পরিবেশ তৈরি হয়েছে। যা আগে ছিল না। তবে চুক্তি অবাস্তবায়িত ধারাগুলো উভয়পক্ষের মধ্যে আলোচনা করে বাস্তবায়ন করা দরকার। চুক্তির পরও পাহাড়ে যে নতুন করে যে সংঘাত তৈরি হয়েছে এটি উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। এটি নিরসন করা জরুরি।’

এদিকে ২১ বছর পূর্তিতে নানা পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে শান্তি শোভাযাত্রা, আলোচনাসভা ও শান্তি-সম্প্রীতি প্রীতি ফুটবল ম্যাচ। এ ছাড়াও রাঙামাটি স্টেডিয়ামে গানে গানে দর্শক-শ্রোতাদের মাতাবে জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী হাবিব।

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

ফেসবুক আইডি ক্লোন করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ, যুবক গ্রেপ্তার

ফরিদপুর প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পুলিশ সুপারের মতবিনিময়

পতেঙ্গায় ফিশিং বোটের ইঞ্জিন বিস্ফোরণে ৪ জন দগ্ধ

চট্টগ্রামে ঈদকে সামনে রেখে জালনোট চক্রের ৩ সদস্য গ্রেপ্তার

বরিশালে নামাজের সময় মসজিদের এসি বিস্ফোরণ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দ্রুতগতির লেনে যাত্রী নামানোর অপরাধে ৩৩ যানবাহনকে মামলা 

বরগুনা প্রেসক্লাব দখলের মামলায় ৭ জন কারাগারে  

পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে তাহিরপুরের শহীদ সিরাজ লেক

ঝিনাইদহে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু

ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :