শুভকামনা, এগিয়ে যাও টাইগাররা
একটা সময় ছিল, যখন টেস্টে ইনিংস ব্যবধানে পরাজয় ছিল বাংলাদেশের জন্য অতি স্বাভাবিক বিষয়! দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কার মতো দলগুলো আমাদের নিয়ে ছিনিমিনি খেলত। একটা সময় ছিল, যখন বাংলাদেশ মাঠে নামত সম্মানজনক হারের লক্ষ্য নিয়ে। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে আমাদের এই দলটা অনেক বদলে গেছে। এখন টাইগাররা জেতার জন্যই মাঠে নামে। এখন টাইগাররা প্রতিপক্ষকে ইনিংস ব্যবধানে হারের লজ্জা দেয়। যেমনটি আমরা দেখলাম ঢাকা টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে।
চট্টগ্রামে ৬৪ রানে জিতে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে থাকা বাংলাদেশ ঢাকায় ব্যাটে-বলে উপহার দিল আরও দাপুটে পারফরম্যান্স। আগে ব্যাট করতে নেমে টাইগাররা ৫০৮ রানের পাহাড় দাঁড় করাল ক্যারিবীয়দের সামনে। ওই পাহাড় দুইবারেও টপকাতে পারেনি তারা। প্রথম ইনিংসে ১১১ রানে অলআউট হয়ে ফলোঅনে পড়ে দ্বিতীয় ইনিংসে তারা থেমে গেল ২১৩ রানে। এক ইনিংস ও ১৮৪ রানে জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করল টাইগাররা।
১৮ বছরের টেস্ট ইতিহাসে প্রথমবার কোনো দলকে ইনিংস ব্যবধানে পরাজিত করেছে বাংলাদেশ। সাদা পোশাকে এটি আবার টাইগারদের সবচেয়ে বড় জয়। কিছু রেকর্ডও হয়েছে এই ম্যাচে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম সারির পাঁচ ব্যাটসম্যানকে বোল্ড করে রেকর্ড গড়েছেন সাকিব আল হাসান আর মেহেদী হাসান মিরাজ। টেস্টের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো দলের প্রথম ৫ ব্যাটসম্যানকে বোল্ড করলেন স্পিনাররা।
দুই ইনিংস মিলিয়ে ১১৭ রানে ১২ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের জয়ের মূল কারিগর মিরাজ। টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পরই মোহাম্মদ রফিকের মতো ভালো মানের স্পিনার পেয়েছিলাম আমরা। এরপর সাকিব-তাইজুলরা এলেন। কিন্তু সবাই বাঁহাতি স্পিনার। তাদের পাশাপাশি একজন অফস্পিনারের তো খুব দরকার ছিল। আমার মনে হয়, সেই জায়গাটা পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে মিরাজ। দারুণ প্রতিশ্রুতিশীল একজন বোলার তিনি। তার সঙ্গে অভিষিক্ত নাঈম হাসানের জুটিটা মন্দ হবে না আশা করি। নাঈমও অফস্পিন করে থাকেন। অভিষেকে পাঁচ উইকেট নিয়ে নিজের জাত চিনিয়েছেন আঠারোর এই তরুণ।
ইনজুরি থেকে ফেরা সাকিবের পারফরম্যান্স নিয়ে অনেকেরই সংশয় ছিল। তবে অধিনায়কের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে যেভাবে দলকে টেনে নিয়ে গেলেন, তা প্রশংসার দাবি রাখে। মাহমুদউল্লাহর কথা যদি বলি, সিনিয়র ক্রিকেটার হিসেবে যতটুকু দেয়ার, দলকে দিয়েছেন। মিরপুরে ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসটি খেলেছেন তিনি। মাহমুদউল্লাহর পাশাপাশি ভালো ব্যাটিং করেছে সাকিব, লিটন আর অভিষিক্ত সাদমান ইসলাম।
টেস্টে ওপেনিংয়ে তামিম ইকবালের যোগ্য সঙ্গীর অভাব ছিল এতদিন। অভিষেকেই ৭৬ রানের ইনিংস খেলে সাদমান দেখিয়েছে ও এই জায়গায় থিতু হতে প্রস্তুত। তবে সাদমানের ব্যাপারে একটু খেয়াল রাখতে হবে। ও টেস্ট মেজাজী ব্যাটসম্যান। ওকে টেস্ট স্পেশালিস্ট হিসেবেই গড়ে তোলা উচিত। ভারতে যেমন টেস্টের জন্য চেতেশ্বর পূজারা আছেন।
আড়াই দিনে ঢাকা টেস্ট শেষ হয়ে যাওয়ায় হয়তো উইকেট নিয়ে নতুন করে পুরনো বিতর্কটা উঠতে পারে। অতীতে বাজে উইকেটের জন্য ডিমেরিট পেয়েছিল মিরপুরের শেরে-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়াম। তবে উইকেট যদি এতটা খারাপই হতো তবে তিন ফিফটিসহ এক সেঞ্চুরি পেত না বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের শিমরন হেটমায়ার ৯৩ রান করতে পারতেন না। ওদের লোয়ার অর্ডারের কেমার রোচও কিন্তু ৩৭ রানে অপরাজিত ছিলেন। কাজেই দ্রুত গুটিয়ে যাওয়ার জন্য ক্যারিবীয়দের ব্যাটিংই বরং দায়ী। আর অবশ্যই ভালো বোলিং করেছেন বাংলাদেশের বোলাররা।
সবমিলিয়ে ব্যাটে-বলে দারুণ পারফরম্যান্স দেখেছি সিরিজ জুড়ে। এজন্য বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানাতে চাই। জাতীয় দলের জন্য শুভকামনা। এগিয়ে যাও টাইগাররা!
খন্দকার জামিল উদ্দিন: বিসিবির সাবেক পরিচালক