ম্যান্ডেলার জন্য ভালোবাসা
দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী লড়াইয়ের অবিসংবাদিত নেতা ও দেশটির প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট নেলসন ম্যান্ডেলার পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী আজ বুধবার। ২০১৩ সালের এই দিনে জোহানেসবার্গের বাড়িতে ৯৫ বছর বয়সে থেমে যায় আজীবন সংগ্রামী এই মানুষটির জীবন।
১৯১৮ সালের ১৮ জুলাই দক্ষিণ আফ্রিকার উমতাতু প্রদেশের এমভাজো গ্রামে জন্ম নেলসন ম্যান্ডেলার। দক্ষিণ আফ্রিকানদের কাছে তিনি মাদিবা নামে বেশি পরিচিত। মাদিবা আসলে তার গোত্রের নাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময়ই আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসে যোগ দিয়ে ১৯৪৪ সালে প্রতিষ্ঠা করেন যুবলীগের। ১৯৪৮ সালে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের নেতৃত্বের সামনের সারিতে আসেন নেলসন ম্যান্ডেলা।
১৯৬২ সালে অন্তর্ঘাতসহ নানা অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করে শ্বেতাঙ্গ সরকার। যাবজ্জীবন কারাদ- হয় তার। বোরেন দ্বীপের কারাগারে ২৭ বছর কাটিয়ে ১৯৯০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পান তিনি। ১৯৯১ থেকে '৯৭ সাল পর্যন্ত ছিলেন আফ্রিকার ন্যাশনাল কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট।
১৯৯৪ সালে তার নেতৃত্বে নির্বাচনে জয়লাভ করে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হন ম্যান্ডেলা। তারপরের ইতিহাস আরও উজ্জ্বল। সারা জীবন যাদের হাতে নির্যাতিত হয়েছেন, যাদের বর্ণবাদী আক্রমণে রক্তাক্ত হয়েছে দেশ, সেই বর্ণবাদী আফ্রিকান ন্যাশনাল পার্টির এফডব্লিউডি ক্লার্কদের নিয়ে গঠন করেন জাতীয় ঐক্যের সরকার। জাতীয় ঐক্য ও সংহতি জোরালো করতে গঠন করেন ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন।
সারা জীবনে নেলসন ম্যান্ডেলা পেয়েছেন প্রচুর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার। ১৯৯৩ সালে পান শান্তিতে নোবেল। ১৯৯০ সালে ভারত সরকার তাকে ‘ভারতরতœ’ উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৯৯ সালে সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ও সবচেয়ে সাহসী এই নেতা গঠন করেন নেলসন ম্যান্ডেলা ফাউন্ডেশন। ২০০১ সালে তার জন্মদিন ১৮ জুলাইকে প্রতি বছর ‘ম্যান্ডেলা দিবস’ হিসেবে পালনের ঘোষণা দেয় জাতিসংঘ।
২০১০ সালে বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল খেলার সময় শেষবারের মতো জনসম্মুখে আসেন নেলসন ম্যান্ডেলা। দক্ষিণ আফ্রিকার সোয়েটার সেই স্টেডিয়ামে ৯০ হাজার দর্শক দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়ে সেদিন তাকে স্বাগত জানায়। সোয়েটাতেই সংগ্রামী নেতা হিসেবে অভিষেক হয়েছিল তার।
বোরেন দ্বীপের নোংরা কারা প্রকোষ্ঠে থাকার সময় সেই ষাটের দশকে ম্যান্ডেলার শরীরে বাসা বাঁধে মরণব্যাধি যক্ষ্মা। শেষ বয়সে ফুসফুসে সংক্রমণ দেখা দেয়। বছরজুড়ে কয়েক দফা হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। শেষ দফা দীর্ঘ তিন মাস হাসপাতালে থাকার পর জোহানেসবার্গের বাড়িতে চলছিল চিকিৎসা। দিনকে দিন অবনতি ঘটতে থাকে তার শারীরিক অবস্থার। ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর রাত ৮টা ৫০ মিনিটে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে পরপারে পাড়ি জমান বর্ণবাদবিরোধী এই কিংবদন্তি।