অরিত্রীর জন্য বিক্ষোভ চলছেই বরখাস্ত অধ্যক্ষ আত্মগোপনে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৯:০০ | প্রকাশিত : ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৮:৫১

নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনায় ন্যয়বিচারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা এসেছে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলনের মুখে বেইলি রোডে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ক্লাস পরীক্ষা স্থগিত করে দেয়া হয়েছে।

আন্দোলনের মুখে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষসহ তিন শিক্ষক বরখাস্ত হয়েছেন। তবে তারা আত্মগোপনে গেছেন।

গত সোমবার আত্মহত্যা করে অরিত্রী অধিকারী। অভিযোগ ছিল, স্কুলে তার বাবা দিলীপ অধিকারীকে অপমান করা হয়। আর সেটা সইতে না পেরে মেয়েটি আত্মহত্যা করে।

মঙ্গলবার সকাল থেকেই ক্লাস বন্ধ রেখে আন্দোলনে নামে অরিত্রীর সহপাঠীরা। বেরিয়ে আসতে থাকে স্কুল কর্তৃপক্ষের স্বেচ্ছাচারিতা, অর্থলিপ্সার বিষয়। গঠিত হয় দুটি তদন্ত কমিটি। একটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এবং একটি স্কুল কর্তৃপক্ষের। হস্তক্ষেপ করে উচ্চ আদালতও। শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতা ঠেকাতে সুপারিশ করতে গঠন করা হয় আরেক কমিটি।

এসব পদক্ষেপে ক্ষোভের আগুন এতটুকু নেভেনি শিক্ষার্থীদের। গতকাল সকাল থেকেই নানা প্ল্যাকার্ড ও স্লোগানে চলতে থাকে আন্দোলন। এদিনও যোগ দেন অভিভাবকরা।

ছয় দাবি

মোট ছয়টি দাবি তুলে ধরে শিক্ষার্থীরা। এগুলো হলো

১. অধ্যক্ষের পদত্যাগ এবং আইন অনুযায়ী ৩০৫ ও ৩০৬ ধারায় আত্মহত্যার প্ররোচণার অভিযোগে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।

২. শিক্ষার্থীদের কোনো প্রকার শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন করা যাবে না। এটা নিশ্চিত করতে হবে।

৩. কথায় কথায় টিসি দেয়ার হুমকি দেয়া যাবে না।

৪. শিক্ষার্থীদের কাউন্সেলিং এর জন্য মনোবিজ্ঞানী নিয়োগ দিতে হবে। ৫. পরিচালনা পর্ষদের সব সদস্যকে পদত্যাগ করতে হবে।

৬. অধ্যক্ষসহ সবাইকে অরিত্রীর পরিবারের সামনে হাতজোড় করে ক্ষমা চাইতে হবে। এই আন্দোলনের সঙ্গে যারা আছে তাদের কাউকে হয়রানি করা যাবে না।

অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ

বিক্ষোভের মুখে ভিকারুননিসার ক্লাস পরীক্ষা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানান পরিচালনা পর্ষদে শিক্ষক প্রতিনিধি মুশতারী সুলতানা। তিনি বলেন, ‘অরিত্রীর সহপাঠীরা যারা আন্দোলন করছে, তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। আমরা অরিত্রীর ঘটনায় গভীরভাবে শোকাহত। ছাত্রীরাও গভীরভাবে শোকাহত। তাদের বান্ধবী মারা গেছে, পড়াশোনা করতে পারছে না। এ কারণে পরীক্ষা বাতিল করেছি।’

সামনে জাতীয় নির্বাচন, এই অবস্থায় পরীক্ষা কীভাবে শেষ হবে- এই প্রশ্নে মুশতারী বলেন, ‘অতীতেও আমরা বিভিন্ন অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সময় শুক্রবারে ক্লাস-পরীক্ষা নিয়েছি। এবারও সেরকম হতে পারে।’

শিক্ষার্থীরা তো পরিচালনা পর্ষদেরই পদত্যাগ চাইছেন- বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিলে এই শিক্ষক প্রতিনিধি বলেন, ‘এটি তো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিষয়। তারা পরিবর্তন করে দিলে আমাদের কিছু করার নেই।’

বরখাস্তের পর আত্মগোপনে তিন শিক্ষক

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনিন, প্রভাতী শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত জিনাত আরা ও শ্রেণি শিক্ষক হাসনা হেনাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের পর তাদের নাগাল পাওয়া যাচ্ছে না। তারা সবাই আত্মগোপনে আছেন।

অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারী আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে যে মামলা করেছেন, তাতেও ওই তিন শিক্ষককে আসামি করা হয়েছে।

অধ্যক্ষ কোথায় জানতে চাইলে পরিচালনা পর্ষদে শিক্ষক প্রতিনিধি মুশতারি সুলতানা বলেন, ‘তিনি অসুস্থ।’ কোন হাসপাতালে আছে জানতে চাইলে তিনি তা বলতে পারেননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পরিচালনা পর্ষদের এক সদস্য ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘অধ্যক্ষসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা হয়েছে। এ কারণে তারা আত্মগোপনে আছেন।’

মঙ্গলবার মেয়েকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে অধ্যক্ষ-শিক্ষকসহ এই তিনজনকে আসামি করে পল্টন থানায় মামলা করেন অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারী।

শিক্ষা মন্ত্রীর ব্রিফিং

অরিত্রীর মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয় যে কমিটি গঠন করেছে, সেটির প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন তুলে ধরে বলেন, ‘তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী তিনজনকে বরখাস্ত করার জন্য ম্যানেজিং কমিটিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিভাগীয় মামলাসহ সকল আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।’

সোমবার দুপুরে রাজধানীর শান্তিনগরের নিজ বাসায় আত্মহত্যা করে অরিত্রী। ওই ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর পল্টন থানায় ‘আত্মহত্যার প্ররোচনাকারী’ হিসেবে তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করেন তার বাবা। তদন্তে ডিবি

অরিত্রীর বাবার করা মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পূর্ব বিভাগ। এই ঘটনায় কারও প্ররোচনা ছিল কি-না সেটি খুঁজে বের করবে তারা। আগামী ৯ জানুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন জমার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

গতকাল দুপুরে মামলাটি আনুষ্ঠানিকভাবে ডিবিতে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে মামলার এজাহারটি পৌঁছালে ঢাকা মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াছির আহসান চৌধুরী সেটি গ্রহণ করেন।

মঙ্গলবার বাংলাদেশ দ-বিধির ৩০৫ ধারায় মামলাটি করেন। ওই ধারায় সর্বোচ্চ মৃত্যুদ- পর্যন্ত শাস্তির বিধান রয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিক্ষা এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :