মোটরবাইকের নিরাপত্তায় ট্যাসলক

প্রকাশ | ০৬ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৩:৩৪

আলাউদ্দিন আলিফ

বাইক চুরি ঠেকাতে শহরে কিংবা গ্রামে মোটরবাইকের জন্য চাই বাড়তি নিরাপত্তা। বাজারে নানা ধরনের সিকিউরিটি ডিভাইস, হাইড্রলিক বা হ্যান্ডলক, তালা এবং শিকল পাওয়া যায়; কিন্তু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত তানভীর হাসান মোটরবাইকের নিরাপত্তার জন্য এসব লক ব্যবহার করেন না। তিনি মাত্র একটি রিমোটের বাটন চাপ দিয়ে নিজের দামি মোটরবাইকটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। বাইকের নিরাপত্তার জন্য আলাদা কোনো তালা ব্যবহার করেননি তিনি। একটি রিমোট কন্ট্রোল ডিভাইসে তার ভরসা। ডিভাইসটির নাম ট্যাসলক সেন্সর, ভার্সন ৪।

এই সিকিউরিটি ডিভাইসটি সম্পর্কে তানভীর ঢাকা টাইমসকে বলেন, মোটরবাইকে অতিরিক্ত তালা ব্যবহার করা বিরক্তিকর। এ ছাড়া তালাগুলো সংযুক্ত করতেও অতিরিক্ত সময়ের প্রয়োজন হয়। সেখানে ট্যাসলক সেন্সরের একটি বাটন প্রেস করাই যথেষ্ট। এমনকি এই লকটির অটোমেটিক ভার্সনে ৫ মিটার দূরে চলে এলেই বাইকটি অটো লক হয়ে যাবে। ৫ মিটার কাছে এলেই মোটরবাইকটি অটো আনলক হবে। তবে চাইলে এখানে বাটন প্রেস করে ৫ মিটার কাছ থেকেও বাইকটিকে লক করে রাখা যাবে। 

ট্যাসলক রিমোট কন্ট্রোল সিকিউরিটি ডিভাইসটি দেশের বাজারে আমদানি করে ‘দুই চাকা অটো’। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাদভী রেজা বলেন, এই ডিভাইসটি যেকোনো মোটরবাইকের জন্য পরিপূর্ণ নিরাপত্তা প্রদান করে। নতুন এই ডিভাইসটিতে ৫০ টিরও বেশি ফিচার রয়েছে। বাইক লক-আনলক, চাবি ছাড়া স্টার্ট, অ্যালার্ম সংবেদনশীলতা, বাইক ডিটেক্টর, সাইলেন্ট লক, জিওফেন্স, ওভার স্পিড অ্যালার্মসহ অনেক প্রয়োজনীয় ফিচার রয়েছে। মাত্র কয়েকটি বোতাম চেপে এই কাজগুলো করার সুযোগ রয়েছে ডিভাইসটিতে। এ ছাড়াও আমরা লক ডিভাইস মডিফাইড করি। আপনি যে ধরনের নিরাপত্তা চান, সে ধরনের নিরাপত্তা আমরা এই ডিভাইসের মাধ্যমে দিতে সক্ষম। 

ট্যাসলক কীভাবে কাজ করে? এমন প্রশ্নের জবাবে রাদভী বলেন, এই ডিভাইসের সার্কিটগুলো আমরা তাইওয়ান থেকে আমদানি করি। আর ডিভাইসটি সংযোজন করা হয় চীনে। দেশে আসার পর আমরা আবার এই ডিভাইসগুলোতে অতিরিক্ত ফিচার যোগ করি। তারপর আমরা এই ডিভাইসগুলো গ্রাহকদের মোটরবাইকে সংযোজন করা হয়। 

মোটরবাইকে আলাদা সিকিউরিটি ডিভাইস ব্যবহারের ফলে ব্যাটারিতে চাপ পড়ে। ব্যাটারির কর্মক্ষমতা হ্রাস পায় বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে রাদভী বলেন, আমাদের নিরাপত্তা যন্ত্রটি বাইকের ব্যাটারিতে কোনো প্রভাব ফেলে না। এই ডিভাইসটিকে সক্রিয় রাখার জন্য আলাদা ব্যাটারি রয়েছে। এমনকি বাইকের ব্যাটারি খুলে ফেললেও এই লক কার্যকর থাকে। মোটকথা, মোটরবাইকের কোনো ক্ষতি এই লক করে না বরং দেয় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা।

বিদেশি সিনেমাগুলোতে যেই নিরাপত্তা ডিভাইসগুলো দেখানো হয়, সেগুলোর চেয়েও বেশি কার্যকর নতুন এই ট্যাসলক। এই ডিভাইসটির সঙ্গে আরেকটি জিপিএস ডিভাইস সংযুক্ত করে পৃথিবীর যেকোনো জায়গা থেকে বাইক লক বা আনলক করা সম্ভব। শুধু তাই নয়, মোটরবাইকের চাবি নিয়ে দেশের বাইরে চলে গেলেও ট্যাসলকের সাহায্যে বাইকটির ইগনিশন চালু বা বন্ধ করার অপশন রয়েছে।

ট্যাসলক হ্যাক করা যায় কি না? এই প্রশ্নের জবাবে রাদভী বলেন, আমাদের এই ডিভাইসগুলো দেশে নিয়ে আসার পর আমরাই প্রথম হ্যাক করার চেষ্টা করি। ট্যাসলক সেন্সর ডিভাইসটি লক করে দেওয়ার পর মোটরবাইকের মালিককে না জানিয়ে আমরা নিজেরাও হ্যাক করতে সক্ষম হইনি। কেউ যদি এই লকটি মোটরবাইকের মালিককে না জানিয়ে হ্যাক করতে পারে, আমরা নগদ ১০ লাখ টাকা পুরস্কার দেব। 

ট্যাসলক ভার্সন ৪ এর মূল্য ২৯৯৯ টাকা। এর সঙ্গে জিপিএস ডিভাইসটি অ্যাড করতে আরও ২৯৯৯ টাকা যোগ করতে হবে। নিরাপত্তা ডিভাইসটির অতিরিক্ত মূল্যের ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, পৃথিবীতে আমরা সর্বনিম্ন মূল্যে এই ডিভাইসটি সরবরাহ করছি। কেউ যদি আমাদের ফিচার সমৃদ্ধ এই ডিভাইসটি আমাদের প্রদত্ত মূল্যেও আমাদের দিতে পারেন, তার জন্য রয়েছে আমাদের এই ডিভাইসটি বিনামূল্যে পাওয়ার সুযোগ। 

ট্যাসলক বিক্রির লাভের একটি অংশ পথশিশুদের শিক্ষা, খাদ্য, শীতবস্ত্র বিতরণ, বৃদ্ধাশ্রম এবং মসজিদ নির্মাণের কাজে ব্যয় করে দুই চাকা অটো। রাজধানীসহ সারাদেশে ট্যাসলক ডিভাইসটি পাওয়া যাচ্ছে।

(ঢাকাটাইমস/৬ডিসেম্বর/এজেড)