গবেষণা প্রতিবেদন

শিশু দেখলেই আদর করা ব্যক্তিরা কম আবেগী

প্রকাশ | ০৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৮:১০

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

শিশু দেখলেই গাল টিপে আদর বা চুমু দিতে ইচ্ছা করে। কিংবা কুকুরছানা দেখলেই কোলে তুলে আদর করতে মন চায়। এ আর নতুন কী? আমার-আপনার সবার মধ্যেই এমন স্বভাব হরহামেশাই দেখা যায়। কিন্তু এসবকে যদি শুধুই নিজের আবেগের বহিঃপ্রকাশ বলে ভাবেন, তাহলে মস্ত ভুল করছেন। বরং বিজ্ঞান বলছে, খুব একটা আবেগী নন, এমন মানুষও এই ধরনের ব্যবহার করে থাকেন।

বাড়ির চার দেয়ালের মধ্যে হোক বা বাইরে কোনো শিশু, কুকুরছানা দেখলেই আদর করতে মন চায় কেন, কেনই বা কোনো শিশুর নানা ভুলত্রুটি সত্ত্বেও তাদের প্রতি মমত্ববোধ জাগে আমাদের? শুধুই নরম তুলতুলে চেহারা আর ছোট বলেই কি তাদের প্রতি এতটা সহমর্মী হই আমরা?

বিজ্ঞান একে ‘কিউট আগ্রাসন’ বলছে। এই কিউট আগ্রাসন নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপকরা।

সম্প্রতি ‘ফ্রন্টায়ার্স’ জার্নালে প্রকাশিত ব্যবহারিক স্নায়ুবিদ্যা বিভাগে এই গবেষণা নিয়ে বিস্তারিত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তাতেই শিশু বা কুকুর ছানার প্রতি মানুষের এমন ব্যবহারের নেপথ্যে মস্তিষ্কের আচরণকেই দায়ী করছেন বিজ্ঞানীরা।

গবেষণায় নেতৃত্ব দেওয়া ক্যালিফোর্নিয়ার ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক ক্যাথরিন স্ট্যাভরোপোলাস বলেন, ‘এই গবেষণার মাধ্যমে মানুষের ব্যবহারিক মনস্তত্ত্বকেই বোঝার চেষ্টা চালানো হয়েছে।’

গবেষণায় দেখা গেছে, যখনই মিষ্টি বা সুন্দর কোনো কিছুকে দেখি, তখনই মস্তিষ্কের রিওয়ার্ড সিস্টেম (স্নায়বিক অংশ যেখানে নানা রকম আবেগ, ভালোলাগা, মন্দলাগা, চাওয়া-পাওয়ার অনুভব প্রকাশ পায়) আগ্রাসনের সঙ্গে উত্তেজিত হয়। বিশেষ করে কী চাইছে মস্তিষ্ক বা কোন বিষয়ে ঠিক কেমন অনুভূতির প্রকাশ প্রয়োজন তা তখনই কিছুটা নির্ধারণ হয়ে যায়। এর সঙ্গেই যোগ হয় আবেগ নিয়ন্ত্রণকারী সেনসরি অংশের কাজ।

আনন্দবাজার জানায়, এই গবেষণায় কেবল স্নায়ুবিদ্যা ও শারীরবিদ্যাই নয়, বিজ্ঞানীরা সাহায্য নিয়েছিলেন পদার্থবিদ্যারও। ইলেকট্রোসাইকোলজির মাধ্যমে মস্তিষ্কের স্নায়ুর কার্যকলাপ দেখে এই বিষয়ে বেশ কিছু সিদ্ধান্তে আসেন বিজ্ঞানীরা। এতে মস্তিষ্কের নিউরনে বিদ্যুতের সক্রিয়তার পরিমাপ করা যায়। তা থেকেই অনুভূতির অঙ্ক কষে ফেলতে পারেন বিজ্ঞানীরা।
১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সী ৫৪ জনের ওপর এই পরীক্ষা চালান স্ট্যাভরোপোলাস ও তার সহকারী লরা অ্যালবা। এদের প্রত্যেককে বিশেষ পদ্ধতির তড়িদ্বাহী টুপি পরানো হয়, এমনভাবে সে টুপি বানানো হয়, যাতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট না হন তারা। টুপি পরানোর সময় ৩২টি ছবির চারটি করে ব্লক দেখানো হয় তাদের। প্রতিটি ব্লক কম্পিউটার স্ক্রিনে ভেসে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তাদের কোনো একটি অনুভূতিব্যঞ্জক মন্তব্য করতে বলা হয় ও ১ থেকে ১০-এর মধ্যে নম্বর দিতে বলা হয়।

ব্লকে রাখা কিছু সুন্দর, আকর্ষণীয় ছবি দেখে সমীক্ষায় অংশ নেওয়া মানুষদের মস্তিষ্কের কার্যকলাপ, উত্তেজনা ও প্রশংসাসূচক বাক্য সবই লিপিবদ্ধ করেন বিজ্ঞানীরা। এ ধরনের ছবি দেখেই তাৎক্ষণিকভাবে কতটা আনন্দ পাচ্ছেন কেউ, তাও লক্ষ্য রাখা হয়।

দেখা যায়, বেশির ভাগ মানুষই শিশু ও কুকুরছানাদের দেখে বেশি আনন্দিত হয়েছেন। ছবি দেখার পূর্বে, সেই সময় ও পরবর্তী সময়ে সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মস্তিষ্কের অবস্থা নিয়েও স্ট্যাভরোপোলাস গবেষণা চালান।

স্ট্যাভরোপোলাস জানান, গবেষণায় দেখা গেছে, ‘কিউট’ কিছু দেখার সঙ্গে মস্তিষ্কের রিওয়ার্ড সিস্টেমের সঙ্গে আবেগের সেনসরি অর্গ্যান খুব শক্তিশালী যোগাযোগ স্থাপন করছে। তা থেকেই মস্তিষ্কে এক আগ্রাসন ঘটে (কিউট আগ্রাসন)। তাই শিশু বা কুকুরছানা দেখলে এমন আদর করার স্পৃহা জাগে।

তাহলে যারা শিশু ভালোবাসেন না তাদের ক্ষেত্রে কী হয়? এই পরীক্ষাকে অবলম্বন করে ভারতীয় মনোবিদ অমিতাভ মুখোপাধ্যায় বলেন, শিশু ভালো না বাসলেও তাদের প্রতি এক প্রচ্ছন্ন আকর্ষণ কাজ করে মানুষের মধ্যে। কিন্তু তার বহিঃপ্রকাশ হয় না। কারণ তাদের আবেগের সেনসরি অর্গান মস্তিষ্কের রিওয়ার্ড সিস্টেমের সঙ্গে জোরদারভাবে সম্পর্ক সংযোগ করতে পারে না।’

(ঢাকাটাইমস/৭ডিসেম্বর/এসআই)