‘সফলতা পেতে মহৎ হতে হবে’

মেহেদি জামান লিজন
 | প্রকাশিত : ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৬:২০

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম উপাচার্যের দায়িত্বে আছেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মেহেদি জামান লিজন।

স্যার, আপনার শৈশবের কথা শুনতে চাই।

মোস্তাফিজুর রহমান: জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলায় নানার বাড়িতে আমার জন্ম। আমি নানার বাড়িতে থাকতাম। কেননা, আমার বাবার বাড়ি নদীভাঙনে বিলীন হয়েছিল। ছেলেবেলায় আমি দূরন্ত ছিলাম; কিন্তু আমি সবসময় ক্লাসে প্রথম হতাম। মুক্তিযুদ্ধে আমার বাবা শহীদ হন। আমি আমার বাবার লাশ পর্যন্ত দেখতে পাইনি। পরিবারের বড় ছেলে হওয়ায় সবার ভরণ-পোষণের দায়িত্ব বর্তায় আমার ওপর। তখন খুব কষ্টে দিন কেটেছে।

আপনার শিক্ষাজীবন ...।

মোস্তাফিজুর রহমান: ১৯৭২ সালে আমি প্রথম বিভাগে মাধ্যমিক পাস করি। বাড়ির পাশের কলেজে ভর্তি হলাম। উপার্জনের জন্য আমি তখন প্রাইভেট পড়াতাম। আর ভাবতাম বাড়ির পাশে জুট মিলে চাকরি নেব। উচ্চ মাধ্যমিকে আমাদের কলেজ থেকে ১০৭ জন পরীক্ষা দিয়েছিল। তার মধ্যে আমিসহ সাতজন পাস করে। সে বছর আমাদের কলেজে কেউ প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়নি। আমিও দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হই। সারাদিন টিউশনি ও সংসার দেখভালের জন্য পড়াশোনায় মন দিতে পারিনি। আমি ছোটবেলা থেকে ইংরেজি ভালো পারতাম। কলেজে মাঝে মাঝে ইংরেজিতে লেকচার দিতাম। একদিন সিদ্দিক নামে আমার এক বন্ধু বলল, ‘মোস্তাফিজ আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিব। চল আমার সঙ্গে তুইও সেখানে পরীক্ষা দিবি। ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফর্মের টাকা আমি দিব।’ তার কথা শুনে গেলাম সেখানে। পরীক্ষায় আমি প্রথম হলাম। কিন্তু আমি ভর্তি না হয়ে গ্রামে ফিরে গেলাম। কেননা, আমি ভেবেছিলাম পড়াশোনা না করে জুট মিলে চাকরি নেব। পরে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বন্ধুদের অনুরোধে সেখানে গিয়ে ভর্তি হই। স্যারেরা আমাকে প্রাইভেট পড়ানোর ব্যবস্থা করে দিলেন। নিজের জন্য কিছু টাকা রেখে বাকিটা গ্রামে পাঠিয়ে দিতাম। আমি সমাজবিজ্ঞানে অনার্সে প্রথম হয়েছিলাম। ছাত্রজীবনে আমার ভালো জামা-কাপড় ছিল না। জীবনটা ছিল অনেক সংগ্রামের। এই সংগ্রামের মাঝেই এমএতে ফার্স্টক্লাস ফার্স্ট হলাম। এভাবেই আমার ছাত্রজীবন কেটেছে।

শিক্ষকতাকে কেন পেশা হিসেবে বেছে নিলেন? মোস্তাফিজুর রহমান: আমাদের সময় ফার্স্টক্লাস ফার্স্ট হওয়া বিশাল ব্যাপার ছিল। আমার ভালো রেজাল্টের পর ওই বিভাগের শিক্ষকরা আমাকে শিক্ষকতা পেশায় আসার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। ১৯৮৩ সালের ২ জুন শিক্ষক হিসেবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেই। এরপর ফিলিপাইন থেকে রুরাল সোসিওলজির ওপর এমএ ডিগ্রি অর্জন করি। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেছি।

স্যার আপনার মতে সফলতার মূলমন্ত্র কী? মোস্তাফিজুর রহমান: আমার জীবনে সফলতার পেছনে ছিল আমার মায়ের দোয়া। আজ আমি এত দূর আসতে পেরেছি আমার মায়ের দোয়ার কারণে। আমি মনে করি জীবনে সফলতা পেতে হলে নিজেকে মহৎ হতে হবে। আর কঠোর পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই।

আপনার জীবনে সবচেয়ে বড় অর্জন কোনটা বলে আপনি মনে করেন? মোস্তাফিজুর রহমান: মানুষের ভালোবাসাটাই আমার জীবনে সবচেয়ে বড় অর্জন। আমার সঙ্গে খানিকক্ষণ কথা বললে আমাকে আপনার ভালোবাসতেই হবে। এই ভালোবাসা দিয়ে পেয়েছি মানুষের সহযোগিতা। আর এই সহযোগিতার মধ্য দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি এই বিশ্ববিদ্যালয়কে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন নিয়ে আপনার ভাবনা কী? মোস্তাফিজুর রহমান: আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ৪৮০ কোটি টাকার একটা মেগা প্রকল্প উপহার দিয়েছেন। এই বিশাল বাজেটেই বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন হচ্ছে। ইনশাআল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়কে কয়েক বছরের মাঝে একটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে রূপ দিতে চাই। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর জালিয়াতিমুক্ত দুটি ভর্তি পরীক্ষা উপহার দিয়েছি।

আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। মোস্তাফিজুর রহমান: ঢাকা টাইমস ও আপনাকে ধন্যবাদ।

(ঢাকাটাইমস/৯ডিসেম্বর/এজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

সাক্ষাৎকার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

সাক্ষাৎকার এর সর্বশেষ

‘স্থিতিশীল সামষ্টিক অর্থনীতির স্বার্থে সরকারকে ভারসাম্যমূলক নীতি-উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে’: ড. আতিউর রহমান

প্রতি মুহূর্তেই মনে হচ্ছিল আর্মিরা ধরে নিয়ে যাবে: ফরিদা খানম সাকি

দাম বাড়ালে এতক্ষণে কার্যকর হয়ে যেত: ক্যাব সহ-সভাপতি নাজের হোসাইন

জন্ম থেকেই নারীদের যুদ্ধ শুরু হয়: নারী উদ্যোক্তা ফরিদা আশা

নারীরা এখন আর পিছিয়ে নেই

ভবন নির্মাণে সিটি করপোরেশনের ছাড়পত্র নেওয়ার নিয়ম করা উচিত: কাউন্সিলর আবুল বাশার

তদারকি সংস্থা এবং ভবন নির্মাতাদের দায়িত্বশীল হতে হবে: অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান

বেইলি রোডের আগুনে রাজউকের ঘাটতি রয়েছে: মো. আশরাফুল ইসলাম

নতুন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে ভবন অনুমোদন দিতে হবে: ইকবাল হাবিব

বীমা খাতে আস্থা ফেরাতে কাজ করছি: আইডিআরএ চেয়ারম্যান জয়নুল বারী

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :