পাঁচ তারকার অন্যরকম সেঞ্চুরি

প্রকাশ | ১১ ডিসেম্বর ২০১৮, ২১:৫২

ক্রীড়া প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য বিশেষ দিনই বটে। কারণ যে পাঁচজনের হাত ধরে সাফল্যের পথে দেশের ক্রিকেট সেই পাঁচজনের একসঙ্গে মাইলফলকের ম্যাচ ছিল এটি। মঙ্গলবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নেমেই একসঙ্গে ১০০টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা মাইলফলক স্পর্শ করেছেন বাংলাদেশের পাঁচ সিনিয়র ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজা, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। আর এই বিশেষ দিনে পঞ্চপাণ্ডবের তিন পাণ্ডব করেছেন হাফ সেঞ্চুরি। তামিম ইকবাল ৫০, মুশফিকুর রহিম ৬২ ও সাকিব আল হাসান ৬৫ রান করেন। বাকি দুই পাণ্ডবের মধ্যে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৩০ রান করেন। মাশরাফি বিন মর্তুজা ১০ রান করে অপরাজিত থাকেন।

গতকাল মিরপুরে অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ। গতকালের আগে দেশের জার্সিতে একসঙ্গে ৬৯টি ওয়ানডে, ২৯টি টি-টোয়েন্টি ও ১টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের এই পাঁচ তারকা। এই ৯৯টি ম্যাচের মধ্যে ৪৭টি ম্যাচে জয় পায় বাংলাদেশ। বাকি ৪৮টিতে হারতে হয়েছে। বাকি চার ম্যাচে কোনো ফলাফল আসেনি।

পঞ্চপাণ্ডবের শততম আন্তর্জাতিক ম্যাচের আগেই অনেক উত্তেজনা ছিল ক্রিকেটপাড়ায়। বড় বড় শিরোনামে লেখা হয়েছিল নানা ইতিহাস। কারণ এমন সেঞ্চুরি যে ক্রিকেটের ইতিহাসে খুব বিরল। বিশ্ব ক্রিকেটে ৫ ক্রিকেটার একসঙ্গে ১০০ বা তার বেশি ম্যাচ খেলার নজির আছে ৬৪টি। তবে বাংলাদেশের জন্য এটি একবারেই নতুন। কারণ এবারই প্রথম দেশের ক্রিকেটে এই বিশেষ দিন এলো। তবে এই দিনটি হয়তো আরো আগেই পেতে পারতো বাংলাদেশ। যদি ২০১০ সালে জিম্বাবুয়ে ও স্কটল্যান্ড এবং গত বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচগুলো পরিত্যক্ত না হতো।

দীর্ঘ অপেক্ষার পর বিশেষ সেঞ্চুরিটা হলো এবং সেটা দেশের মাটিতেই। ‘হোম অব ক্রিকেট’ মিরপুর শের-ই-বাংলা হলো দেশের ক্রিকেটের আরো একটি বিশেষ দিনের সাক্ষী। একই সঙ্গে সাক্ষী হলো শের-ই-বাংলায় উপস্থিত থাকা ২৭ হাজার টাইগার ভক্ত। কারণ বিশেষ দিনে পুরো গ্যালারি ছিল দর্শকে ভরপুর।

শুধু যে ক্রিকেট পাগল বাঙালি দিনটির জন্য মুখিয়ে ছিল তা নয়। ম্যাচটি নিয়ে সমানভাবে মুখিয়ে ছিলেন দেশের ক্রিকেটের পাঁচ নায়কও। পাঁচজনের একজন তামিম ইকবাল বিশেষ এই সেঞ্চুরি কারার আগেই বলেছিলেন, ‘গত ১৫ বছর ধরে আমরা একে অপরকে চিনি। আশা করি বিশেষ কিছুর মাধ্যমে আমরা দিনটিতে স্মরণীয় করে রাখব। সাকিব, মুশফিক ও আমার চেয়ে মাশরাফি ভাই ও রিয়াদ ভাই বয়সে বড়। অনূর্ধ্ব-১৫ সময় থেকে আমরা তিনজন খেলছি। আমাদের মধ্যে সম্পর্ক দারুণ। আমরা সব বিষয় শেয়ার করি। সাকিব ও মুশফিকের সঙ্গে আমার বন্ধু সম্পর্ক। কিন্তু মাশরাফি ভাই এবং রিয়াদ ভাইয়ের সঙ্গেই আমার বেশি সময় কাটে আমার। আমাদের সবার মধ্যে সম্পর্ক অনেক গভীর।’

দেশের ক্রিকেটকে আগলে রাখা এই পাঁচ ক্রিকেটারের একসঙ্গে পথচলা শুরু ২০০৭ সালে অনুষ্ঠিত আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দিয়ে। পাঁচজনের মধ্যে সবার শেষে অভিষেক হয় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখেন তামিম ইকবাল। একই বছর জুলাইতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। ২০০১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেক হয় অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার। ২০০৫ সালের মে মাসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় মুশফিকুর রহিমের। তার পরের বছর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখেন সাকিব আল হাসান।

তবে পাঁচজন একসঙ্গে দায়িত্ব নেয়ার পরই শুরু হয় ক্রিকেটের পালাবদলের। যার সাফল্য ধারাবাহিক আছে শেষ চার বছর ধরে। ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে খেলে বাংলাদেশ। এরপর পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষেও বাংলাদেশ ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে। এছাড়া অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার মতো দলের বিপক্ষে বাংলাদেশ টেস্ট ম্যাচ জিতেছে। সম্প্রতি ওয়েস্ট ইনন্ডিজকে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করেছে টাইগাররা।

(ঢাকাটাইমস/১১ ডিসেম্বর/এইচএ)