সিলিন্ডারের রেগুলেটর বন্ধ রাখলে ৯৯ ভাগ দুর্ঘটনা কমবে
রান্নার কাজে ব্যবহারের পর এলপিজি (লিকুইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস) সিলিন্ডারের রেগুলেটর বন্ধ রাখলে এ সংক্রান্ত দুর্ঘটনা ৯৯ ভাগ কমবে বলে জানিয়েছেন বিস্ফোরক অধিদফতরের প্রধান পরিদর্শক শামসুল আলম।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ আয়োজিত ‘এলপিজি বিষয়ক সচেতনতা ক্যাম্পেইন ও এর ভবিষ্যত’ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব আবু হেনা রহমাতুল মুনিম বলেন, ‘গৃহস্থলীতে পাইপ লাইনের মাধ্যমে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহারের পরিবর্তে এলপি গ্যাস জনপ্রিয় করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ২০০৯ সালে এলপিজির ব্যবহার ছিল মাত্র ৪৭ হাজার মেট্রিক টন, যা ২০১৮ সালে বেড়ে হয়েছে প্রায় ১০ লাখ টন। অর্থাৎ এলপি গ্যাসের ব্যবহার ২১ গুণের বেশি বেড়েছে।’
‘এলপি গ্যাস ব্যবহারের পাশাপাশি এর ব্যবহারজনিত দুর্ঘটনা বেড়ে গেছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসব দুর্ঘটনাকে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। সিলিন্ডারে উচ্চ চাপে এলপি গ্যাস ভর্তি করার কারণে বা গুণগত মান সঠিক নয় বলে বিস্ফোরণ হয় না। প্রকৃতপক্ষে সিলিন্ডারে উচ্চ চাপে এলপিজি ভর্তি করা হয় না। এলপিজি ভর্তিজনিত কারণে কোনো সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয় না। প্রকৃত দুর্ঘটনার কারণ হচ্ছে সিলিন্ডার ব্যবহারের সঠিক নিয়ম না জানা, অসতর্কতা এবং সঠিক পরিবেশে সিলিন্ডার ব্যবহার না করা। তাই ব্যবহারকারী, উৎপাদনকারী ও বিপণনকারী সবাইকে সিলিন্ডার ব্যবহারে সচেতন হলে এ সংক্রান্ত দুর্ঘটনা কমে যাবে।’
সচিব বলেন, ‘বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, সিলিন্ডার ব্যবহারের পর রেগুলেটর বন্ধ করা হয় না। এক্ষেত্রে সিলিন্ডার থেকে গ্যাস বেরিয়ে চুলার সঙ্গে সংযোগ দেয়া প্লাস্টিকের পাইপের ক্রুটির মাধ্যমে ঘরের মধ্যে গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তী সময়ে চুলা জ্বালালে গ্যাসের কারণে ঘরের মধ্যে বিস্ফোরণ ঘটে। এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। ব্যবহারের পর রেগুলেটর বন্ধ করে রাখতে হবে। সিলিন্ডার থেকে চুলায় গ্যাস সরবরাহ নিয়ন্ত্রণের জন্য রেগুলেটর ব্যবহার করা হয়।’
বিস্ফোরক অধিদফতরের প্রধান পরিদর্শক মো. শামসুল আলম বলেন, ‘আমরা দেখেছি, সিলিন্ডার ব্যবহারের পর রেগুলেটর বন্ধ করে রাখলে ৯৯ শতাংশ দুর্ঘটনা কমে যাবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দুর্ঘটনা ঘটেছে কিন্তু সিলিন্ডার ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দুর্ঘটনা এড়াতে এলপিজি সিলিন্ডার চুলা বা আগুনের পাশে রাখা যাবে না, অতিরিক্ত গ্যাস বের করার জন্য এলপিজি সিলিন্ডারে তাপ দেয়া যাবে না। চুলা সিলিন্ডার থেকে কমপক্ষে ৬ ইঞ্চি উপরে রাখতে হবে। ভাল্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রেগুলেটর ব্যবহার করা উচিত। রান্নার আধা ঘণ্টা আগে ঘরের দরজা জানালা খুলে দেয়া ভালো। এলপিজি সিলিন্ডার খাড়াভাবে রাখা উচিত, কখনোই উপুড় বা কাত করে রাখা যাবে না এবং রান্না ঘরের উপরে ও নিচে ভেন্টিরেটর রাখা উচিত।
এক প্রশ্নের জবাবে জ্বালানি সচিব বলেন, ‘বাংলাদেশের এলপি গ্যাসের চাহিদা ৩০ লাখ মেট্রিক টন। ৬০টি কোম্পানিকে প্রাথমিক অনুমোদন দেয়া হয়েছে। কোম্পানিগুলো অপারেশনে আসলে এলপি গ্যাসের মাধ্যমে অন্যদিকেও জ্বালানি চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে।’
‘বর্তমানে ১৭টি কোম্পানি এলপি গ্যাস গ্রাহক পর্যায়ে সরবরাহ করছে। তাছাড়া অটোগ্যাস যানবাহনের জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে। পরিবেশবান্ধব এ গ্যাস সঠিক নিয়মে ব্যবহার করলে দুর্ঘটনা অনেকাংশেই কমে যাবে।’
(ঢাকাটাইমস/১৩ডিসেম্বর/এমএম)