বাংলাদেশের হ্যাটট্রিক সিরিজ জয়

সদর উদ্দীন লিমন
| আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮, ২০:৫৩ | প্রকাশিত : ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮, ২০:৪৩

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করার পর তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজ ২-১ ব্যবধানে নিল বাংলাদেশ। সিলেটে শুক্রবার সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে ক্যারিবীয়দের আট উইকেটে উড়িয়ে দিয়েছে টাইগাররা। ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের এটি চতুর্থ সিরিজ জয়। তাছাড়া ওয়ানডেতে বাংলাদেশের এটি হ্যাটট্রিক সিরিজ জয়। গত জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজ বাংলাদেশ জিতেছিল ২-১ ব্যবধানে। এরপর গত অক্টোবরে ঘরের মাটিতে জিম্বাবুয়েকে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করে মাশরাফি বিন মর্তুজার দল।

সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচটিতে শুক্রবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের দেয়া ১৯৯ রানের জয়ের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ৩৮.৩ ওভারে দুই উইকেটে জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। ওপেনার তামিম ইকবাল ৮১ রান করে অপরাজিত থাকেন। ওয়াডেতে এটি তার ৪৪তম অর্ধশত। ৮১ বল খেলে ৮০ রান করে আউট হন সৌম্য সরকার। এই রান করার পথে তিনি পাঁচটি চার মারেন ও পাঁচটি ছক্কা হাঁকান। ওয়ানডেতে সৌম্যর এটি সপ্তম হাফ সেঞ্চুরি। ২৩ রান করে আউট হন লিটন দাস। ১৬ রান করে অপরাজিত থাকেন মুশফিকুর রহিম। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলারদের মধ্যে কিমো পল দুইটি উইকেট শিকার করেন।

বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে নেমে দলীয় ৪৫ রানে প্রথম উইকেট হারায়। ইনিংসের ১১তম ওভারে উড়িয়ে মারতে গিয়ে রোভম্যান পাওয়েলের হাতে ক্যাচ হন লিটন দাস। এরপর ১৩১ রানের জুটি গড়েন তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার। দলীয় ১৭৬ রানে কিমো পলের বলে বোল্ড হন সৌম্য। এরপর তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম দলের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন।

এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৯৮ রান সংগ্রহ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দলের পক্ষে ওপেনার শাই হোপ ১৩১ বলে ১০৮ রান করে অপরাজিত থাকেন। ওয়ানডে ক্রিকেটে এটি তার চতুর্থ সেঞ্চুরি। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচেও সেঞ্চুরি করেছিলেন হোপ। ১৪৬ রান করে অপরাজিত থেকে ম্যাচসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পেয়েছিলেন এই ব্যাটসম্যান। টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করায় সিরিপ সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারও উঠেছে শাই হোপের হাতে। সিলেটে শাই হোপ ছাড়া অন্যরা ভালো করতে পারেননি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৯ রান করেন মারলন স্যামুয়েলস।

বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে মেহেদী হাসান মিরাজ ছিলেন দুর্দান্ত। ১০ ওভারে ২৯ রান দিয়ে চারটি উইকেট শিকার করেন তিনি। একটি মেডেন ওভার করেন তিনি। তার বোলিং ইকোনোমি রেট ২.৯০। দুর্দান্ত এই বোলিং করায় মিরাজের হাতে ওঠে ম্যাচ সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার। এর আগে ওয়ানডেতে মিরাজের ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ছিল ৩/৪৬। অন্যদের মধ্যে ৯ ওভারে ৩৪ রান দিয়ে দুইটি উইকেট নেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। একটি মেডেন ওভার করেন তিনি। তার বোলিং ইকোনোমি রেট ৩.৭৭। সাকিব আল হাসান ৯ ওভারে ৪০ রান দিয়ে নেন দুইটি উইকেট। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ৯ ওভারে ৩৮ রান দিয়ে শিকার করেন একটি উইকেট। মোস্তাফিজুর রহমান উইকেট না পেলেও ভালো বোলিং করেন। ১০ ওভারে ৩৩ রান দেন তিনি। এর মধ্যে এক ওভার মেডেন করেন তিনি। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ তিন ওভারে ১৪ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থাকেন।

বোলিংয়ে বাংলাদেশ শুরুটা করে দারুণ। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওপেনিং জুটি ভাঙেন মেহেদী হাসান মিরাজ। মোহাম্মদ মিথুনের হাতে ধরা পড়েন চন্দরপল হেমরাজ। ১৭ বল খেলে ৯ রান করেন তিনি। এরপর শাই হোপ ও ড্যারেন ব্রাভো ৪২ রানের জুটি গড়েন। দলীয় ৫৭ রানে মিরাজের বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান ব্রাভো। ২৬ বল খেলে ১০ রান করেন তিনি।

২৩তম ওভারে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের বলে বোল্ড হন মারলন স্যামুয়েলস। ৩২ বলে ১৯ রান করেন তিনি। ২৪তম ওভারে শিমরন হেটমায়ারকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন মিরাজ। ছয় বলে শূন্য রান করে ফিরে যান হেটমায়ার। ২৬তম ওভারে উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের হাতে ক্যাচ বানিয়ে ক্যারিবীয় অধিনায়ক রোভম্যান পাওয়েলকে ফিরিয়ে দেন মিরাজ। ৯ বলে এক রান করেন তিনি।

এরপর ৩৪ রানের জুটি গড়েন শাই হোপ ও রস্টন চেজ। দলীয় ১৩৩ রানে সাকিব আল হাসানের বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে সৌম্য সরকারের হাতে ধরা পড়ের চেজ। ২০ বলে ৮ রান করেন এই ব্যাটসম্যান। এরপর ৩৮তম ওভারে ফ্যাবিয়ান অ্যালেনকে ফেরান সাকিব। সুইপ শট খেলেছিলেন অ্যালেন। ডিপ স্কোয়ার লেগে ডাইভ দিয়ে দুর্দান্ত একটি ক্যাচ নেন মোহাম্মদ মিথুন। ১৭ বলে ৬ রান করেন অ্যালেন।

৪৪তম ওভারে কিমো পলকে বোল্ড করেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। ২২ বলে ১২ রান করেন তিনি। ৪৬তম ওভারে কেমার রোচকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন মাশরাফি। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি রোচ। এই ম্যাচে একাদশে দুইটি পরিবর্তন আনে বাংলাদেশ। বাদ পড়েন ইমরুল কায়েস ও রুবেল হোসেন। দলে ঢুকেছেন মোহাম্মদ মিথুন ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ একাদশে ওশানে থমাসের জায়গায় একাদশে জায়গা পান ফ্যাবিয়ান অ্যালেন।

এই ম্যাচের মাধ্যমে ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছে সিলেটের এই ভেন্যুটির। এই ম্যাচেই বাংলাদেশ জয় পেল। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সিলেটে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছিল টাইগাররা। সিলেটের বিপক্ষে ওই ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছিল ৭৫ রানে। এরপর গত মাসে সিলেটে প্রথমবারের মতো টেস্ট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছিল ১৫১ রানে। সুতরাং, সিলেটে তিন ফরম্যাটে তিন ম্যাচ খেলে শুক্রবার প্রথমবারের মতো জয়ের দেখা পেয়েছে টাইগাররা।

২০১৯ সালের মে-জুলাইয়ে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে অনুষ্ঠিত হবে আইসিসি বিশ্বকাপের ১২তম আসর। বিশ্বকাপে খেলে অবসরে যেতে পারেন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। যদি সেটি হয় তাহলে দেশের মাটিতে মাশরাফি শুক্রবার নিজের শেষ ম্যাচ খেলে ফেলেছেন। আর এই ম্যাচে দুর্দান্ত জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

ফল: আট উইকেটে জয়ী বাংলাদেশ।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংস: ১৯৮/৯ (৫০ ওভার)

(চন্দরপল হেমরাজ ৯, শাই হোপ ১০৮*, ড্যারেন ব্রাভো ১০, মারলন স্যামুয়েলস ১৯, শিমরন হেটমায়ার ০, রোভম্যান পাওয়েল ১, রস্টন চেজ ৮, ফ্যাবিয়ান অ্যালেন ৬, কিমো পল ১২, কেমার রোচ ৩, দেবেন্দ্র বিশু ৬*; মোস্তাফিজুর রহমান ০/৩৩, মেহেদী হাসান মিরাজ ৪/২৯, সাকিব আল হাসান ২/৪০, মাশরাফি বিন মর্তুজা ২/৩৪, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ১/৩৮, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ০/১৪)।

বাংলাদেশ ইনিংস: ২০২/২ (৩৮.৩ ওভার)

(তামিম ইকবাল ৮১*, লিটন দাস ২৩, সৌম্য সরকার ৮০, মুশফিকুর রহিম ১৬*; কেমার রোচ ০১/৬, রস্টন চেজ ০/৩২, কিমো পল ২/৩৮, মারলন স্যামুয়েলস ০/২৫, দেবেন্দ্র বিশু ০/৪৮, ফ্যাবিয়ান অ্যালেন ০/২২, রোভম্যান পাওয়েল ০/২১)।

সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জয়ী বাংলাদেশ।

প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ: মেহেদী হাসান মিরাজ (বাংলাদেশ)।

প্লেয়ার অব দ্য সিরিজ: শাই হোপ (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)।

(ঢাকাটাইমস/১৪ ডিসেম্বর/এসইউএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

খেলাধুলা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :