‘যারা পেট্রল বোমা মারে, তাদের ভোট দেবেন না’

প্রকাশ | ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৮:৪২

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

‘রাজনীতি কাদের জন্য? যদি আমাদের জন্য হয় তাহলে আমরা কেন পেট্রল বোমার শিকার হব? আমরা এই সন্ত্রাসী রাজনীতি চাই না। যারা এই সন্ত্রাসী কর্মকা- পরিচালনা করে, নির্বিচারে নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে তাদের আগামী নির্বাচনেও জাতি বয়কট করতে হবে।’

শনিবার ‘পেট্রল বোমার ধ্বংসস্তূপ থেকে মৃত্যঞ্জয়ী আমি ও আমার জীবন’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে তার দুঃসহ স্মৃতিচারণ করছিলেন বছর চারেক আগে বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলনের সময় বোমায় দগ্ধ খোকন আহমেদ। এ সময় তিনি উপরোক্ত কথা বলেন।

২০১৫ সালের ২৩ জানুয়ারি দগ্ধ হয়েছিলেন ফুটপাতের ব্যবসায়ী খোকন। বলেন, ‘সেন্ডেলের দোকান বন্ধ কইরা বাসায় যাওনের লাইগ্যা বাসে উঠছি। যাত্রাবাড়ীতে হঠাৎ বিকট কিছু শব্দ পাইলাম। যাত্রীরা সবাই দৌঁড়ায়া নামতাছে। আমার সারা শরীরে আগুন ধইরা গেল।’

দগ্ধ খোকনের পেটের মাংস গলে ভেতরে ঢুকে যায় হাত। আর ছয় মাস হাসপাতালে কাটিয়ে তিনি ফেরেন বাসায়।  
‘আমি দেখছি এক জাহান্নাম। কেন যে বাইচ্যা আছি,  আমি বেঁচে আছি, আমি কেন বেঁচে আছি? আমি মরে যাওয়াই ভালো ছিল’-বলছিলেন খোকন।
‘দেহহীন প্রাণ আমি চাই না’

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন পেট্রল বোমায় দগ্ধ আরো বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী। তারা সবাই ২০১৪ সালের নির্বাচন ঠেকানো এবং ২০১৫ সালে সরকার পতনের আন্দোলনের সময় বোমায় আহত হয়েছেন।

তাদের সবার জীবন দুর্বিসহ। কারো মুখ পোড়া, চোখ পোড়া, কানের পাতা নেই। মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে সাংবাদিকদের একজন বলেন, ‘আমিতো মানুষ নই। অথবা আমি মানুষ। আমি এক দেহহীন প্রাণ নিয়ে অসহায় জীবন যাপন করার মানুষ।’

মনে হচ্ছিল চোখ দিয়ে পানি নামবে, তবে একফোঁটা চোখের জলও এল না। হয়ত চোখের জল শুকিয়ে গেছে। তিনিও বলেন, ‘আপনার আগামী নির্বাচনে এই ধরনের হত্যার রাজনীতিকারীদের বয়কট করবেন। অসহায়ের জননী শেখ হাসিনাকে ভোট দেবেন।’

‘আমার শিশুরা বাবাকে খোঁজে’
যশোর ঝিকরগাছা থেকে আসেন তিন সন্তানের এক জননী। তিনটি ফুটফুটে সন্তান কোলে। বক্তব্য দেওয়ার জন্য ডাকার পর কেবল কেঁদে চলছিলেন।
একটি মেয়ে দুটি ছেলে নিয়ে চলছিল সুখের সংসার। তবে ২০১৫ সালে পেট্রল বোমায় চলে গেছে গৃহকর্তার প্রাণ।

‘ছোট্ট শিশুটি তখন আট মাসের, বাবা বাবা ডাকে। কিন্তু আজ আমার ছোট ছোট তিনটি শিশুকে কীভাবে বুঝাবে সে ভাষা আমার কাছে নেই। প্রায়ই তারা বাবাকে খুঁজেন, কিন্তু আমি কোথায় পাই তার বাবাকে?’-আবার কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

‘আমরা আর এই দেশ চাই না, চাই না, এমন কোনো হিংসার রাজনীতি আমরা চাই না, চাই সম্প্রীতির দেশ। তাই আগামী নির্বাচনে আপনার আগুন সন্ত্রাসীদের বয়কট করবেন।’

বাংলাদেশ অনলাইন এক্টিভেটিস্ট ফোরাম (বায়াফ) এর আয়োজনে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন সাবকে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সাবেক ছাত্রনেতা বিনা পারভীন, সাংবাদিক সাবিয়া ইসলামসহ ভুক্তভোগী ৫০টির বেশি পরিবার।

ঢাকাটাইমস/১৫ডিসেম্বর/এসপি/ডব্লিউবি