পোশাকশ্রমিকদের সোমবার কাজে ফেরার আহ্বান শ্রম প্রতিমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৯:২৩

ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি নিয়ে আন্দোলনরত পোশাকশ্রমিকদের আগামী সোমবার থেকে কাজে যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু। বলেছেন, ‘মজুরিতে কোনো অসামাঞ্জস্যতা, দুর্বলতা বা ফাঁক থাকলে তার সমাধান করা হবে।’

শনিবার সচিবালয়ে পোশাক খাতের ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কোর কমিটির জরুরি বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি। ত্রিপক্ষীয় এ বৈঠকে মালিক ও শ্রমিকনেতারা উপস্থিত ছিলেন।

নতুন ন্যূনতম মজুরিতে বৈষম্য করা হয়েছে দাবি করে গাজীপুর, আশুলিয়া, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা গত কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভ করে আসছেন। কোথাও কোথাও কারখানা ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে।

এই প্রেক্ষাপটে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সভায় বসে এ সংক্রান্ত ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কোর কমিটি।

শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক বিশ্লেষণ ও আলাপ-আলোচনা করে নতুন মজুরি কাঠামো নির্ধারণ করি। এবার ন্যূনতম মজুরি আট হাজার টাকা করা হয়েছে। নতুন মজুরি ডিসেম্বর থেকে বাস্তবায়িত হবে, শ্রমিকরা ডিসেম্বরের বেতন জানুয়ারি মাসে পাবেন।’

‘আমরা লক্ষ্য করছি, গত কয়েকদিন ধরে নারায়ণগঞ্জ, আশুলিয়া, ঢাকা, গাজীপুরের কিছু কিছু ইন্ডাস্ট্রিতে বেতন কাঠামো নিয়ে কিছু অপপ্রচার ও ভুল বোঝাবুঝির কারণে শ্রমিকরা কাজ না করে রাস্তায় বেরিয়ে এসেছেন।’

তিনি বলেন, ‘আমি তাদের উদ্দেশ্যে স্পষ্ট করে বলতে চাই- নতুন কাঠামোতে যখন বেতন পাবেন, তখন বুঝতে পারবেন, আসলে আপনাদের ভুল বুঝানো হয়েছে। দেখবেন, আপনারা বিভিন্ন গ্রেডে বেতন কম পাচ্ছেন নাকি বেশি পাচ্ছেন।’

‘বৈঠকের পর এই আশ্বাসটা দিতে চাই, অনুগ্রহ করে ১৭ ডিসেম্বর থেকে আপনারা যার যার কাজে যোগ দেবেন। জানুয়ারিতে মজুরি পাওয়ার পর কোনো গ্রেডে কোনো অসামাঞ্জস্যতা, দুর্বলতা বা ফাঁক থাকলে শ্রমিক ও মালিক নেতাদের সঙ্গে বসে ফাঁকগুলো খুঁজে বের করে এর একটা সমাধান দেব। এই সরকার শ্রমিকদের প্রতি খুবই সহনশীল।’

শ্রমিকদের প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচন। কোনো মহল আপনাদের যেন ব্যবহার করতে না পারে, সেই দিকটা লক্ষ্য রেখে আমার বিনীত অনুরোধ- আপনারা ১৭ ডিসেম্বর থেকে কাজে যোগদান করবেন।’

তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘এক শতাংশেরও কম পোশাক কারখানায় সমস্যা হচ্ছে। আমরা চাই না, একটা ফ্যাক্টরিতেও কোনো রকম কোনো সমস্যা হোক। নতুন ঘোষিত মজুরি নিয়ে কিছুটা ভুল-ভ্রান্তি ও ধারণা আছে। অনেকেই হয়তো জিনিসটা সম্পর্কে ক্লিয়ার না যে কীভাবে হয়েছে, তারা কী পাবেন।’

তিনি বলেন, ‘আসলে নতুন কাঠামোতে মজুরিটা পাবেন ৭ থেকে ১০ জানুয়ারির মধ্যে। তখন যদি দেখা যায় কোনো জায়গায় কোনো ফ্যাক্টরিতে কোনো রকমের সমস্যা হয়েছে, তবে আমরা ফ্যাক্টরি লেভেলে আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করব। যদি সেখানে সমাধান না হয় বিজিএমইএতে আসতে পারবেন শ্রমিকরা। বিজিএমইএতে না পারলে সরকারের কাছে আসতে পারবেন।’

‘আগামী ৩০ ডিসেম্বর আমাদের নির্বাচন। আমি মনে করি মজুরি নিয়ে এই মুহূর্তে কোনো ধরনের বিভ্রান্তি কোনো অসন্তোষ উসকে দিয়ে কেউ যেন গুজব না ছড়ান।’

সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘অনেকে বলছেন, আমার বেতন কমে যাবে। বেতন কমার কোনো সুযোগ নেই। ২০১৩ সালে অন্যান্য গ্রেডে যেভাবে মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছিল, এবারও একইভাবে করা হয়েছে।’

ইন্ডাস্ট্রি অল বাংলাদেশ কাউন্সিলের মহাসচিব সালাউদ্দিন স্বপন বলেন, ‘সম্প্রতি কিছু কারখানায় নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। যে কারণে বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকদের আন্দোলন বা রাজপথে নামা বা কাজ বন্ধ রাখার মতো ঘটনা চলমান রয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি হোক- এটা আমরা চাই না। মজুরি বাস্তবায়ন নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে উদ্বেগ আছে, আমরা বলব, মজুরি না পাওয়া পর্যন্ত আপনারা কাজ বন্ধ করবেন না।’

তিনি বলেন, ‘মজুরি পাওয়ার পর যদি কোনো শ্রমিকদের মনে হয়, সেখানে অসঙ্গতি আছে, তখন আমরা সেই কারখানার মালিকদের সঙ্গে কথা বলব। প্রয়োজনে আমরা বিজিএমইএ ও মন্ত্রণালয়সহ আবার বৈঠক করে গেজেটে কোনো সমস্যা যদি থেকে থাকে আলোচনা করে অবশ্যই বাস্তবায়ন যোগ্য পদক্ষেপের অনুরোধ জানাবো সরকারকে।’

সালাউদ্দিন স্বপন বলেন, ‘আমরা সবাইকে বলব- কেউ কাজ বন্ধ করবেন না, রাজপথে নামবেন না, নির্বাচন পরবর্তী মজুরি বাস্তবায়নের আগ পর্যন্ত। আমি সবাইকে কাজে যোগদানের আবেদন জানাচ্ছি।’

জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিন বলেন, ‘সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে নির্বাচনের আগে যেন বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরি না হয়। বিভিন্ন স্থানে যে সংকট তৈরি হয়েছে সেই বিষয়ে সকলের কাছে অনুরোধ করতে চাই- বিজয় দিবসের পরের দিন ১৭ ডিসেম্বর সবাই নিজ নিজ কাজে যোগদান করবেন। মজুরি সংক্রান্ত কোনো সমস্যা দেখা দিলে জানুয়ারিতে আমরা সেটার সমাধান করতে পারব।’

শ্রম প্রতিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে বৈঠকে শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব আফরোজা খান ছাড়াও বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও পোশাকশ্রমিক নেতা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অংশ নেন।

(ঢাকাটাইমস/১৫ডিসেম্বর/এমএম/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

অর্থনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অর্থনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :