বাঁধভাঙা আনন্দে বিজয়ে মাতবে জনতা

প্রকাশ | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:৩১

দিদার মালেকী
প্রতি বছরের এদিন সাভার স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানিয়ে শুরু হয় বিজয় উদযাপন

আজ ১৬ ডিসেম্বর। মহান বিজয় দিবস। বাঁধভাঙা আনন্দের দিন। পৃথিবীর মানচিত্রে নতুন একটি দেশের জন্মদিন। বাঙালি জাতির জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জনের দিনটি আজ। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণের দিন। পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে মরণপণ লড়াই করে এইদিনই বীর বাঙালি অর্জন করে অসামান্য বিজয়।

এবারের বিজয় দিবস পালিত হচ্ছে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সাম্প্রদায়িক শক্তির ধারক-বাহকদের প্রত্যাখান করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে বিজয়ী করার প্রত্যয়ে উজ্জীবিত জাতি দিবসটি পালন করবে ভিন্নভাবে। আজ সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে জনতার ঢল নামবে। শ্রদ্ধার সঙ্গে তারা শহীদের উদ্দেশে নিবেদন করবেন পুষ্পাঞ্জলি। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের সব প্রান্তের মানুষ অংশ নেবে বিজয় দিবসে।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে পৃথক বানীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি শাসকদের শোষণ, নিপীড়ন আর দুঃশাসনের জাল ভেদ করে বিজয়ের প্রভাতী সূর্যের আলোয় ঝিকমিক করে উঠেছিল বাংলাদেশের শিশির ভেজা মাটি। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর সাড়ে তেইশ বছরের নির্বিচার শোষণ, বঞ্চনা আর নির্যাতনের কালো অধ্যায়ের পতন হয়েছিল।

প্রায় ৯২ হাজার পাকিস্তানি সৈন্যের ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) আত্মসমর্পণের মাধ্যমে সূচিত হয়েছিল এই মহেন্দ্রক্ষণ। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের পর লাখো প্রাণের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের আজকের দিনে অর্জিত হয় আমাদের স্বাধীনতা।

বাঙালি জাতি আজ গভীর শ্রদ্ধা আর ভালবাসার সঙ্গে স্মরণ করবে সেইসব শহীদদের যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের প্রিয় স্বাধীনতা। স্মরণ করবে সেইসব বীর সেনানীদের যারা শোষণ বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে অনাগত ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্নে প্রাণের মায়া ত্যাগ করে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছিলেন।

যেসব মহৎপ্রাণ নর-নারীর সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে আমরা আজ স্বাধীন তাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সম্মান জানানো হবে। যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি উদযাপনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

১৯৭০ সালের নির্বাচনে জনগণের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা না দেখিয়ে পাকিস্তানিরা ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেয় ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার জন্য। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভকারী আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে টালবাহানা শুরু করে শাসক গোষ্ঠী। ফলে ক্ষোভে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান।

একাত্তরের ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ ‘এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম’ জনগণের স্বাধীনতার স্পৃহাকে প্রবল করে তোলে।

ঢাকা যখন অগ্নিগর্ভ, তখন পাকিস্তানি শাসকচক্র আমাদের মুক্তির স্পৃহাকে দমনের পথ বেছে নেয়। রাতের অন্ধকারে নির্বিচারে নিরস্ত্র মানুষ হত্যার মাধ্যমে জন্ম দিল ২৫ মার্চের কালরাত্রি। এরপরই চূড়ান্ত হয়ে যায় আমাদের পৃথক পথচলার যাত্রা। শুরু হল চূড়ান্ত লড়াই। ৯ মাস যুদ্ধে পরাজয় মেনে নেয় পাকিস্তান সেনাবাহিনী।

১৯৭১ সালের আজকের দিনে রেসকোর্স ময়দানে  (সোহরাওয়াদী উদ্যান) ৯১ হাজার ৪৯৮ জন সৈন্য নিয়ে ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান আমীর আব্দুল্লাহ খান নিয়াজী আত্মসমর্পণ করেন সম্মিলিত বাহিনীর প্রধান জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা’র কাছে।

আওয়ামী লীগের কর্মসূচি

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ দুদিনব্যাপী কর্মসূচি পালন করবে। দলটির গৃহীত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও সারাদেশের সংগঠনের কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন।

আগামীকাল বিকাল তিনটায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিজয় দিবসের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিএনপির কর্মসূচি

বিজয় দিবস উপলক্ষে বিএনপি আজ সকালে দলের নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে র‌্যালি কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। এর আগে সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে জাতির সুর্যসন্তানদের শ্রদ্ধা জানাবে দলটির নেতৃবৃন্দ। সেখান থেকে ফিরে শেরেবাংলানগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পন করবে বিএনপি নেতারা।