কোপ টোয়েন্টিফোর সম্মেলন

২০২০ সাল থেকেই কার্যকর প্যারিস চুক্তি

প্রকাশ | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮, ১২:১৮ | আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৪:০৭

অনলাইন ডেস্ক
সম্মেলন সফল হওয়ায় উচ্ছ্বসিত কোপ টোয়েন্টিফোরের চেয়ারম্যান মাইকেল কুর্তিকা

প্যারিস জলবায়ু চুক্তি ২০২০ সাল থেকে কার্যকর করতে অবশেষে ঐক্যমত্যে পৌঁছালেন বিশ্বের ১৯৬টি দেশের প্রতিনিধিরা। পোল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলের শহর কাতোভিচে অনুষ্ঠিত দুই সপ্তাহব্যাপী জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক এক সম্মেলনের শেষ দিনে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা এই ঐক্যমত্যে পৌঁছান। শেষ মুহূর্তে কার্বন বাজারের হুমকি সম্মেলনকে বাধাগ্রস্ত করে এবং এক দিন পেছানো হয়। খবর বিবিসির।

প্রতিনিধিরা বিশ্বাস করেন, নতুন আইনের কারণে দেশগুলো কার্বণ নিঃসরণে তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করবে।

কাতোভিচ চুক্তির লক্ষ্য হচ্ছে, বৈশ্বিক তাপমাত্রা দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখতে প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যমাত্রাকে সহায়তা করা।

২০১৫ সালের নভেম্বরে ফ্রান্সের প্যারিসে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনে বিশ্বের দুই শ দেশ অংশ নেয়। কোপ টোয়েন্টিওয়ান নামে পরিচিত ওই সম্মেলনে শিল্প যুগের আগের তুলনায় বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ধরে রাখার ব্যাপারে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির ব্যাপারে একটি নির্দেশিকা তৈরি করতেই পোল্যান্ডের কাতোভিচের সম্মেলনে যোগ দিয়েছিল দেশগুলো।

কোপ টোয়েন্টিফোর সম্মেলনের চেয়ারম্যান মাইকেল কুর্তিকা বলেন, ;প্যারিস চুক্তির কর্মসূচি বাস্তবায়নে একসঙ্গে কাজ করা আমাদের অনেক বড় দায়িত্ব। এর জন্য আমাদের সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে। কেউ যেন পিছিয়ে না পড়ে তার জন্য আমাদের সর্বোচ্চ শ্রম দিতে হবে।’

সাধারণ এই নিয়মনীতিগুলো দরিদ্র দেশগুলোর নমনীয়তা নিরূপণ করবে। ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলো স্বীকৃতি এবং ক্ষতিপূরণ চায়।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আইনিভাবে দায়বদ্ধ হওয়ার ধারণা দীর্ঘ দিন ধরে উন্নত দেশগুলো প্রত্যাখ্যান করে আসছে। এতে করে ভবিষ্যতে বিশাল পরিমাণ অর্থসংকট দেখা দিতে পারে।    

গত সপ্তাহের শেষের দিকে বৈশ্বিক তাপমাত্র ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রাখার বিষয়টিকে স্বাগত জানাতে একটি সম্মেলন যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, রাশিয়া এবং কুয়েত প্রত্যাখ্যান করে বলে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়। এতে বিজ্ঞানী ও প্রতিনিধিরা হতাশ হন। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ব এখন পুরোপুরি ভিন্ন পথে হাঁটছে। চলতি শতাব্দীতে তিন ডিগ্রি সেলসিয়াসের তাপমাত্রার দিকে যাচ্ছে বিশ্ব। বৈশ্বিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সমাজের সর্বস্তরে দ্রুত, সুদূর প্রসারী এবং অভূতপূর্ব পরিবর্তন আনতে হবে।

১৯৬টি দেশের প্রতিনিধিরা কাতোভিচের এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। তারা প্যারিস চুক্তির নিয়ম-কানুনের বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের সমাধানে কাজ করেছেন। কিভাবে কার্বন নিঃসরণ কমানো যাবে, দরিদ্র দেশগুলোকে অর্থ প্রদান এবং প্রত্যেকে যা বলেছে তা বাস্তবায়ন নিশ্চিত করাসহ বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয় তদারকি করবে এই আইন। এগুলো বলা সহজ কিন্তু খুবই প্রযুক্তিগত। কার্বন কমানোর ক্ষেত্রে প্রায়শই বিভিন্ন দেশগুলো ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা ও সময়সীমার কথা বলে থাকে।

উন্নয়নশীল দেশগুলো জলবায়ু আইনে কিছু ‘শিথিলতা’ চায়। যাতে করে আইন পালনের ক্ষেত্রে বিব্রত হতে না হয় এবং তা কার্যকর করতে সামর্থ্যের অভাব না হয়।  

প্যারিস চুক্তির অন্যতম প্রণেতা লরেন্স তুবিয়ানা, যিনি এখন ইউরোপিয়ান জলবায়ু তহবিলে কাজ করছেন। তিনি বলেছেন, এই চুক্তি প্যারিস চুক্তি জন্য বিশাল সমর্থন।

সম্মেলনের ফাঁকে বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘এই চুক্তির মূল বিষয় হচ্ছে ভালো পরিমাণে স্বচ্ছতা থাকা। এটি দেশগুলোর মধ্যে আস্থা তৈরি করেছে এবং আমরা কি করেছি তা পরিমাপ করতে পারি। এটি যথেষ্ট সুনির্দিষ্ট।’

‘আমি এতে খুবই খুশি। কেউই এখন বলতে পারবে না- এটি পরিষ্কার নয়, আমরা জানি না কি করতে হবে বা এটি আর বাস্তব নয়। এটি এখন অনেকটা সুস্পষ্ট।’

তিনি বলেন যে, রাশিয়ার মতো দেশগুলো প্যারিস চুক্তির অনুমোদন প্রত্যাখ্যান করেছিল কারণ এটি নিয়ম সম্পর্কে নিশ্চিত ছিল না। আর সেই অজুহাতটি আর ব্যবহার করতে পারবে না। তবে অনেক পর্যবেক্ষক মনে করছেন, জলবায়ুর সমস্যা জরুরিভাবে মোকাবিলায় এই চুক্তি এখনো এতটা শক্তিশালী নয়।  

(ঢাকাটাইমস/১৬ডিসেম্বর/এসআই)